শিক্ষানীতির ধাঁচে শিক্ষা আগেই চালু আছে রাজ্যে: পার্থ, একই সুর সমিত, সত্যমদের কথায়

নয়া শিক্ষানীতির ধাঁচে শিক্ষা আগেই চালু আছে এ রাজ্যে। পড়ুয়াদের প্রকৃত মানুষ করার পাশাপাশি গড়তে নজর দিতে হবে শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগে। বেঙ্গল এডুকেশন সামিটে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় এই মন্তব্য করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার এই ওয়েবেনার অর্থাৎ অনলাইন সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সমিত রায়, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী, এনআইটি দুর্গাপুরের ডিরেক্টর অনুপম বসু, জেআইএস ইউনিভার্সিটির আচার্য তরণজিৎ সিং, ফাদার জন ফেলিক্সরাজ ও ডক্টর সৈকত মৈত্র।

এই সেমিনারে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বলতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র যে নয়া পদ্ধতির উচ্চ শিক্ষা চালু করতে চাইছে তা ইতিমধ্যেই রাজ্যে চালু করা হয়েছে। হঠাৎ করে নতুন কিছু চাপিয়ে দিলে তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে সঠিক হবে না। এ প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, একসময় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের কী হাল হয়েছিল তা রাজ্যের মানুষ দেখেছিলেন। ফের যদি প্রাথমিকে সে পথে হাঁটা হয় তাহলে তার ফল কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, বাংলায় শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগ অর্থাৎ জীবিকামুখী করা হয়েছে বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এই সরকারের আমলে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে সুরঞ্জন দাস বলেন, আজ যে শিক্ষানীতির প্রচার কেন্দ্রীয় সরকার করতে চাইছে, সেই কারিগরি ভিত্তিক শিক্ষা আগেই এই রাজ্যে সরকার করেছে। তবে শিক্ষার উন্নয়নে বণিকসভাগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সুরঞ্জন দাস।

অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটির আচার্য সমিত রায় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই সরকার তাঁদের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতে দেননি। ফলে তাঁরা প্রয়োজন মতো সময়োপযোগী কোর্স চালু করতে পেরেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, নতুন যে শিক্ষানীতি কেন্দ্র চালু করছে সেই কোর্স পড়াবে কে? সমিত রায় বলেন, নীতি চালুর আগে শিক্ষক তৈরি করতে হবে। তাঁর মতে আগে এক একটি কোর্সের থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ৩০-৪০ বছর কাজে লাগানো যেত। কিন্তু এখন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর উন্নয়ন হচ্ছে। সুতরাং সেই স্কিলকে মাথায় রেখে শিক্ষাদান জরুরি।
তিনি বলেন, এক সময় তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘রাইস’ আমলা তৈরির প্রশিক্ষণ যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল। এক্ষেত্রে সমিত রায় উল্লেখ, করেন শুধুমাত্র একটা বিষয়ে পড়লে কখনও ব্যুরোক্র্যাট হওয়া যায় না। এ বিষয়ে রাইস সব ধরনের শিক্ষা দেয় বলে জানান তিনি। বলেন, একজন বিডিও, ডব্লিউবিসিএস, আইএএস অফিসারকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের পাশাপাশি এলাকার ভূগোল ইতিহাস এবং সমাজবিদ্যা সম্পর্কেও জানতে হয়। এ রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটা ইতিমধ্যেই চালু আছে বলে মন্তব্য করেন অ্যাডামাসের আচার্য।

সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটির আচার্য সত্যম রায় চৌধুরী বলেন, শুধু মেশিন তৈরি করলে হবে না। মানুষ ও তৈরি করতে হবে। তিনি জানান, কীভাবে কোভিড পরিস্থিতিতেও অনলাইনে ক্লাস করে তাঁরা তাঁদের শিক্ষা পদ্ধতিকে সচল রেখেছেন। তিনি জানান এই পরিস্থিতি সামলে ওঠার পরেই বণিকসভাগুলি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একত্রিত হয়ে নতুন ভাবে কাজ শুরু করবে।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি সত্যম রায়চৌধুরীও উত্থাপন করেন। তাঁর মতে, অনলাইন শিক্ষার যে দরজা অতিমারি পরিস্থিতিতে খুলে গিয়েছে, তার মাধ্যমে এদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করতে পারবেন বিশ্বের তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। এর মাধ্যমে শিক্ষার নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সত্যম রায়চৌধুরী।

শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগের গুরুত্বের কথা বলেন, এনআইটি দুর্গাপুরে ডিরেক্টর অনুপম বসু। উচ্চশিক্ষা শিক্ষার উন্নতি সম্পর্কে নিজেদের মতামত জানান, তরণজিৎ সিং, ফাদার জন ফেলিক্সরাজ ও ডক্টর সৈকত মৈত্র।

Previous articleদেশের ১২১ জন পুলিশকর্মী পেলেন ‘তদন্তে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক’এর পদক
Next articleতরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে সম্মানরক্ষার্থে খুনের অভিযোগ