বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কারণ দর্শাতে গিয়েও রাজ্যকে বিঁধলেন বাবুল সুপ্রিয়

‘আমার পরিবার বিজেপির পরিবার’- এই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএমের 34 বছরের রাজ্যে রাজ্যের দুরূহ অবস্থার পাশাপাশি, বর্তমান শাসকদলকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। রবিবার ফেসবুক লাইভে তিনি অভিযোগ করেন, সিপিএমের 34 বছরে শাসনকালে রাজ্য কোন স্তরে নেমেছিলো তা রাজ্যের মানুষ জানেন। সেই সময় ‘দিদি’ লড়াই করেছিলেন বলে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি, এই 9 বছরে শাসকদল সিপিএমের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বলে তিনি কটাক্ষ করেন। তার মতে, রাজ্যের মানুষ তাই বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন । বাংলার মানুষ বিজেপিতে যোগ দিলে কিভাবে তারা দলকে সমৃদ্ধ করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বাবুলের সাফ জবাব, আমরা কাজে বিশ্বাসী। যারা বিজেপিতে যোগ দেবেন তারা যদি ভালো মানুষ হন তবে অবশ্যই ভোটে দাঁড়াতে পারেন। কারণ, বিজেপির লক্ষ্য রাজ্যের উন্নয়ন। বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার শপথের সময়ই সবাইকে একসাথে নিয়ে চলার কথা বলেছিলেন। অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেননি ঠিকই, কিন্তু তারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে এ রাজ্যে বিজেপি ভালো ফল করতে পেরেছে।
এই সরকার এখন সবার বিশ্বাস অর্জন করেছে। বিভিন্ন দলের অধিকাংশ নেতারা ‘হয় জেলে না হয় বেলে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। বরং তার সাফাই, বিজেপির কোনও নেতার সঙ্গে এমন দুর্নীতির যোগ নেই। আসানসোলের সাংসদ হিসেবে তিনি কী কাজ করেছেন সেই বিষয়ে একটি ‘রিপোর্ট কার্ড’ এদিন তিনি তুলে ধরেন।
তৃণমূলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দিদি আসানসোলে এসে বলেছিলেন কত বড় হনু দেখে নেব। অথচ আমি যা আশা করেছিলাম তার তিনগুণ বেশি ভোটে জিতেছি। আসানসোলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এখনও আমফানের সাহায্যের অর্থ পাননি বলে তার অভিযোগ। তিনি বলেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজ্য পেলেও কোথায় সে টাকা খরচ হয়েছে তার কোনও হিসেব আজ পর্যন্ত নেই। তাঁর আরও অভিযোগ, সুন্দরবনে পরিক্রমায় গিয়ে দেখেছি যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকাও এখনও ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি। যদি পেতেন তাহলে আমফান ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হলেও অন্তত ঘরের চালটা বাঁচতো। ‘আয়ুষ্মান ভারত’- এর টাকা থেকেও মানুষকে বর্তমান শাসকদল বঞ্চিত করেছে বলে তার অভিযোগ। তিনি এদিন রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের কটাক্ষ করে বলেন, টিএমসির ছোট থেকে বড় যে কোনও নেতার কাছে পৌঁছাতে গেলে টাকা খরচ করতে হয়। অথচ আমজনতার জন্য বিজেপির দরজা খোলা। রাজ্যের জমি নীতি মান্ধাতার আমলের বলে মন্তব্য করে তার কটাক্ষ, ল্যান্ড ব্যাঙ্ক আছে ঠিকই। তবে যেহেতু দিদি জমি আন্দোলন করে উঠে এসেছেন, তাই তিনি যেখানে ঠিক করে দেবেন সেখানে শিল্প করতে হবে। এটা কেন মানবেন বিনিয়োগকারীরা সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বরং তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ নেই। তাই বিনিয়োগ নেই। বিভিন্ন শিল্প সম্মেলন করে কটা শিল্প এসেছে? বিজেপি সেটাই 2021 এ নির্বাচনে জয়ের পর করে দেখাবে বলে তিনি জানিয়েছেন ।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন ৭৩ বছরে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলেমিশে কখনও কাজ করে নি। এমনকি বর্তমান শাসকদলও সেই একই পথে হেঁটেছে। রাজ্যে এমন একটা সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, যারা কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উন্নয়নের কাজ করবে। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ‘বিজেপির পরিবার আমার পরিবার’ শ্লোগান তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী বলে তিনি জানান । রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে ফের শাসক দলের সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, দেশের অন্যান্য রাজ্যে যখন ‘আনলক’ চলছে , তখন এ রাজ্যে নতুন করে লকডাউন ও কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি করা হচ্ছে। আসলে করোনা রুখতে শাসকদল ব্যর্থ। দিল্লির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেন্দ্রের সমালোচনা করলেও যেভাবে দিল্লির পরিস্থিতি সামলেছেন অন্য রাজ্যের কাছে তা পথপ্রদর্শক। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ক্যামেরার সামনে গোল দাগ কাটছেন। এসবই গিমিক বলে তার কটাক্ষ।।
এই 9 বছরে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে এনে তার মত, হাসপাতালে উন্নয়ন হলে দ্রুত করোনার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হতো। এমনকি প্রশাসনিক বৈঠক কেন ক্যামেরার সামনে হবে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সপ্তাহে দুদিন করে লকডাউন করার যে সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার নিয়েছে তার সমালোচনা করে বাবুল এর বক্তব্য, এভাবে সংক্রমণ ঠেকানো যায়না। ইচ্ছেমতো সপ্তাহে দুদিন লকডাউন করলে সমস্যার সমাধান হয় না। 5 তারিখ রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হবে জেনেও শুধুমাত্র বিজেপি কর্মীদের হয়রানি করার জন্যই লকডাউনের দিন পরিবর্তন করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। বরং তার চ্যালেঞ্জ, সংখ্যালঘুদের উৎসবের দিন রাজ্য লকডাউন করে দেখাক। তার সাংসদ এলাকায় লকডাউন চলাকালীন 17 হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী তিনি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন বলে দাবি করেন । প্রবীণ মানুষদের কাছে, বস্তির খেটে খাওয়া মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াটা তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বলে তিনি জানান। তাকে কেন সশরীরে মানুষের পাশে দেখা যাচ্ছে না সেই বিষয়ে তার সাফাই , এখন সেই সময় নয়। তিনি কলকাতায় এলেই সংক্রমণের অজুহাতে গৃহবন্দি করে দেওয়া হবে বলে তিনি অভিযোগ করেন । পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা প্রসঙ্গে বাবুলের মন্তব্য, কেন্দ্র সব সময় পরিযায়ী শ্রমিক শ্রমিকদের কাছে ফেরার বিষয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের কথা বলে তাদের বিভ্রান্ত করেছে বলে তার অভিযোগ। এসবই রাজ্যের মানুষ দেখছেন। তাই বিজেপি 2021 এ রাজ্য দখল করার বিষয়ে আশাবাদী বলে তার মন্তব্য । পশ্চিমবঙ্গের বুকে ভালো থাকার জন্য বিজেপির সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ আর নয় অন্যায়’।

Previous articleদিলীপ ঘোষকে নাড্ডা : আরও জোরদার লড়াই শুরু করুন
Next articleদিল্লিতে বসে মুকুল নিয়ে উদাসীন মন্তব্য দিলীপের! কী বললেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি?