Tuesday, November 11, 2025

নাড্ডার নির্দেশেই আপাতত মুকুলকে বগলদাবায় নিয়ে চলতে হবে দিলীপকে

Date:

Share post:

সামনেই একুশের বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু তারই মধ্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত দিলীপ-মুকুল ঠান্ডা লড়াই নিয়ে জোরচর্চা শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। শোনা যাচ্ছিল, রাজ্যের দুই শীর্ষনেতার ইগোর লড়াইয়ে বঙ্গ বিজেপি আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে।

সম্প্রতি, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য জল্পনা আরও বাড়িয়ে ছিল। যেমন দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, “আমি বুকের উপর পা দিয়ে রাজনীতি করি”, “আমি একাই বিজেপিকে এ রাজ্যে ক্ষমতায় আনতে পারি”, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী হলে ওরা (প্রচ্ছন্নভাবে দলীয় কয়েকজন সাংসদকে ইঙ্গিত) যেন মিষ্টি খেতে আসে”,
ইত্যাদি ইত্যাদি! রাজ্য বিজেপি সভাপতির এহেন মন্তব্যের পর বেজায় চটে গিয়ে দিল্লি নেতৃত্বকে নালিশ করেছিল দিলীপ বিরোধী শিবির। ওই শিবিরের বক্তব্য ছিল, দিলীপ ঘোষ যদি একাই সব কিছু করবেন, তাহলে দলে বাকিদের আর কীসের প্রয়োজন?

অগত্যা হস্তক্ষেপ করতে হয় দিল্লি শীর্ষ নেতৃত্বকে। তাঁদের একটাই লক্ষ্য, যেনতেন প্রকারেণ তৃণমূলকে সরকার থেকে উৎখাত করা। আর সেই লক্ষ্যেই দ্বন্দ্বের কাঁটা উপড়ে ফেলতে মরিয়া বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শহরে ফেরার পরই ভোলবদলে ফেলেন দিলীপ ঘোষও। সুরেলা কন্ঠে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মুকুল রায় সম্পর্কে স্তুতি করতে দেখা যায় তাঁকে।

শুধু তাই নয়। নিজের রাজারহাটের বাড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিদিনই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে চারপাশে গুঞ্জনকে স্রেফ উড়িয়ে দিতে চাইছেন দিলীপ ঘোষ। আসলে তিনি বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, মতান্তর নয়, মুকুল রায়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার মানসিকতা থেকেই তাঁকে কোনও বড় কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে মনোমালিন্য ঢাকাতে ফের শহরে ঘাঁটি গেড়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। যাঁর সঙ্গে মুকুল রায়ের নিবিড় সম্পর্ক। কৈলাস আসতে চাঙ্গা হয়েছেন মুকুলও।

সম্প্রতি, দিলীপ ঘোষের বাড়িতে টানা বেশ কয়েকদিন সাংগঠনিক জেলার বৈঠক চলছে। প্রতিদিনই বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন মুকুল রায়, রাহুল সিনহা, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন। বঙ্গ বিজেপি যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে, তা বোঝাতে চোখের সমস্যা কাটিয়ে নিয়ম করে অনুগত সৈনিকের মতো দিলীপ ঘোষের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন মুকুল। সবমিলিয়ে দুই পক্ষেরই একটা ঐক্যের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের এমন অন্তর্দ্বন্দ্বে তৃণমূলস্তরের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মনোবলে ফাটল ধরেছে। তাই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে তড়িঘড়ি জেলা নেতৃত্বদের ডেকে বৈঠক করছেন দিলীপ-মুকুল। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কোন সমস্যা নেই। আসলে নাড্ডার সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বৈঠক এবং তারপর কৈলাস বিজয়বর্গীয় শহরে এসে মুকুলের পিঠ চাপড়ে দেওয়ায় মলমের মতো ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ হয়েছে দুই শিবিরেই। শীর্ষ নেতৃত্ব বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, কেউ ছোট নয়!

এতকিছুর পরও গোটা দেশজুড়ে বিজেপির সাংগঠনিক পরিকাঠামোর অন্তর্নিহিত বিষয়টি একবার ভেবে দেখা দরকার। রাজনৈতিক দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টি জন্মের পর থেকেই আরএসএস দ্বারা তারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, একথা কারও অজানা নয়। দেশের প্রতিটি রাজ্যে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বা গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয় আরএসএস-এর কোনও সক্রিয় সদস্যকেই। এটাই গেরুয়া শিবিরের অলিখিত রীতি-রেওয়াজ বা নিয়ম। সক্রিয় রাজনীতিতে আসার আগে কিংবা রাজ্য বিজেপি সভাপতির পদে বসার আগে দিলীপ ঘোষও আরএসএস-এর বিস্তারক ও প্রচারক ছিলেন। সেক্ষেত্রে রাজ্য বিজেপির সংগঠনে শেষ কথা যে দিলীপ ঘোষই হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে, মুকুল রায় রাজ্য রাজনীতিতে একজন অতি পরিচিত নেতা। নির্বাচনী অঙ্ক কিংবা ভোটের রাজনীতিতে তিনি দিলীপ ঘোষের থেকে অনেক বেশি দক্ষ, সেটা জানে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে “জব্দ” করতে মুকুলকে খুব বেশি অস্বস্তি বা বিড়ম্বনায় ফেলতে চাইছেন না তাঁরা। আবার আরএসএস ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় মুকুলকে গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসাতে কিন্তু কিন্তু করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে রাজ্য বিজেপিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনও পদ ছাড়া কাজও করতে পারছেন না মুকুল রায়।

এহেন পরিস্থিতিতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না কৌশল নিয়েছে দিল্লির হাইকমান্ড। তাই দিল্লির বৈঠকে দিলীপকে নাড্ডা বুঝিয়ে দিয়েছেন, পছন্দ না হলেও আপাতত মুকুলকে বগলদাবায় করেই নিয়ে চলতে হবে রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে। অন্যদিকে, মুকুলের মান ভাঙাতে রাজ্য বিজেপিতে “বিশেষ” কোনও পদ সৃষ্টি করে সেখানে বসানো হতে পারে তাঁকে। নিদেনপক্ষে সহ-সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হতে পারে মুকুলকে। অর্থাৎ, রাজ্য সংগঠনের মাথায় থাকছেন আরএসএস “নিযুক্ত” সেই দিলীপ ঘোষই!!!

spot_img

Related articles

দুদফায় ভোটগ্রহণ শেষে বিহারের Exit Polls: নীতীশ না তেজস্বী-শেষ হাসি হাসবেন কে?

দুদফায় ভোটগ্রহণের শেষের পরেই প্রকাশিত বিহারের বুথ ফেরত সমীক্ষা। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে জোট শরিকদের দুর্বলতায় মসনদে বসা...

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিপ্লব, রাজ্যে ১৪ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ : মুখ্যমন্ত্রী 

রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় গত ১৪ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্যভবন থেকে এক...

দিল্লি বিস্ফোরণ থেকে সতর্ক লালবাজার, ইডেনে বর্জ্র-আটুঁনি

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের(IND vs SA Test) আগে ইডেন পরিদর্শনে নগরপাল মনোজ বর্মা(Manoj Varma)। দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর সতর্ক...

Kiff: মঙ্গল-সন্ধ্যায় সিনে আড্ডায় হঠাৎ হাজির মুখ্যমন্ত্রী, শোনালেন ‘দুষ্টুমির গল্প’

সিনে প্রেমীদের এখন তীর্থক্ষেত্র নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বর। সেখানে চলছে ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (Kiff)। মঙ্গলবার, সন্ধেয় আচমকাই নন্দন...