Thursday, December 11, 2025

সদ্যোজাতকে ভর্তি করতে দৌড়ালেন খোদ চিকিৎসক, সরকারি হাসপাতালে জুটল দুর্ব্যবহার!

Date:

Share post:

সদ্যোজাতকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে রীতিমতো দুর্ব্যবহার পেলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক রায়চৌধুরী। সাধারণ রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অনেক সংবাদ শিরোনামে আসে, কিন্তু একজন চিকিৎসককে অন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে দেখে অবাক প্রত্যক্ষদর্শীরাও। শেষ পর্যন্ত কলকাতার বিসি রায় হাসপাতাল সদ্যোজাতকে শুধুমাত্র ভর্তিই করেননি তিনি ।নিরক্ষর পিতার দায়িত্ব পালন করতে নিজেই দাঁড়িয়েছেন টিকিটের লাইনে।এ ছবি সত্যিই বেনজির। যিনি নিজেই এক সদ্যজাতকে সিজার করে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, সেই চিকিৎসক কৌশিকবাবুর এহেন আচরণ এই সময়ে দৃষ্টান্তস্বরূপ বলেই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯ অগস্ট। ওইদিন রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তার কাছে আসেন শ্যামলীদেবী। সিজার করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তার পরেই সদ্যোজাতের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । চিকিৎসক সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়ান ভর্তির জন্য। জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক দক্ষিণ 24 পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামে সপ্তাহে দু তিন দিন মানুষের সেবায় নিযুক্ত থাকেন। শিশুটির যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তখন যে বেসরকারি নার্সিংহোমে তার জন্ম হয়েছে, সেখানে ভেন্টিলেশন না থাকায় নিজের গাড়ি করে চিকিৎসকই বেরিয়ে পড়েন শিশুটিকে ভর্তির জন্য। কৌশিকবাবুর অভিযোগ, ওই দিন রাতে তিনি যখন সদ্যোজাতকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে পৌঁছান তখন ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক স্পষ্ট জানিয়ে দেন এখানে ভেন্টিলেশন নেই। রাতে কি কারণে তিনি ডিস্টার্ব করতে এসেছেন সেই কৈফিয়ত চাওয়া হয়। সেসময় ক্রমেই নেতিয়ে পড়েছিল সদ্যোজাত। উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও সদ্যোজাতর বাবা তখন দিশাহারা। কৌশিকবাবু নিজের পরিচয় দিলেও, তাকে প্রমাণ করতে বলা হয় যে তিনি চিকিৎসক। উল্টে তাকে সেই হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। কৌশিকবাবু বলেন, এমন দুর্ব্যবহার জীবনেও পাইনি । বরং আমাকে উল্টে প্রমাণ করতে বলা হয় আদৌ আমি চিকিৎসক কিনা। বলে দেওয়া হয় বাচ্চাটির বাঁচার কোনও আশা নেই ।তাই ভর্তি নিয়ে হুড়োহুড়ি করার কিছু নেই। যদিও তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে ক্রমেই সুস্থ হওয়ার পথে সেই সদ্যোজাত। ইতিমধ্যেই কৌশিকবাবু স্বাস্থ্যভবনে ওই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও বিসিরায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তার কোনও অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, সেখানকার চিকিৎসকরা অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত শিশুটিকে ভর্তি না করলে সে যাত্রায় শিশুটিকে বাঁচানোর সম্ভব হত না। কৌশিকবাবুর ইচ্ছে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর শিশু এবং তার মাকে তার গাড়ি করে তিনি বাড়িতে পৌঁছে দেবেন।
এই প্রথম নয়। এর আগে এপ্রিল মাসেও কৌশিকবাবুর এমন মানবিক রূপ দেখেছিল এ শহর। যদিও খোদ চিকিৎসক বিনয়ী হয়ে বলছেন, আমি চিকিৎসকের দ্বায়িত্ব পালন করেছে শুধুমাত্র । এটুকু না করলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।
সদ্যোজাত পরিবার বলছে, ডাক্তারবাবু সাক্ষাৎ ঈশ্বর । না হলে কেউ এমন করে একটা শিশুকে বাঁচানোর জন্য দৌড়ায়।

spot_img

Related articles

মোহনবাগানে ক্লাস শুরু লোবেরার, অনুশীলন থেকে বেরিয়ে গেলেন আপুইয়া

মোহনবাগানে কোচিং ইনিংস শুরু করলেন সার্জিও লোবেরা(Serjio Lobera)।  বৃহস্পতিবার থেকে মোহনবাগান অনুশীলনে যোগ দিলেন নতুন কোচ। মঙ্গলবার গভীর...

সংসদে মাতঙ্গিনীর নাম বিকৃতি বিজেপির সাংসদের! বহিরাগতদের ধুইয়ে দিল তৃণমূল

বাংলা সম্পর্কে শুধুমাত্র অজ্ঞতা নয়। প্রবল বাংলা বিরোধিতা থেকেই বিজেপির নেতারা বাংলার মনীষীদেরও যে স্বীকৃতি দিতে চান না,...

রাজ্যের উন্নয়নকে গতি দিতে এক দিনে ২০ হাজার ৩০ কিমি রোড প্রজেক্টের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর 

রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নের কাজ আরও এগিয়ে নিতে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর থেকে...

তথ্য প্রযুক্তি, গবেষণা থেকে গ্রাহক পরিষেবা: দেশের উন্নয়নের নেতৃত্বে GCC

একসময়ের একটি সাধারণ সাপোর্ট ডেস্ক। এখন গবেষণা, নকশা ও উন্নয়নে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। ভারতে তৈরি হয়েছে ১৭০০-টিরও...