রাজনীতির রং নয়, বাংলার ঐতিহ্য-সংস্কৃতি রক্ষায় লড়ছে ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’

কোনও রাজনৈতিক দল নয়, বাংলার অধিকারের জন্য লড়াই করা গণসংগঠন। বাংলার ভূমি সন্তানের অধিকার রক্ষা করা তাদের মূল লক্ষ্য। যেখানেই বাধা পেয়েছে বাংলার সংস্কৃতির এই সংগঠন লড়েছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে। ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’। সংগঠনের বয়স মাত্র ৯ মাস। কিন্তু সদ্যোজাত এই সংগঠনের কর্মকাণ্ড অনেক বড়। সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনায় বাংলার জন্য লড়েছে সংগঠনটি। ছাত্র-যুব, বিভিন্ন পেশার সব বয়সের নাগরিক রয়েছেন এই সংগঠনের সঙ্গে । হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।

২০১৯ সালে ৯ ডিসেম্বর এই সংগঠনের জন্ম। আর জন্ম লগ্ন থেকেই একের পর এক কাজ। NRC,CAA নিয়ে প্রায় দু’মাস ধরে আন্দোলন করে এই সংগঠন। চলে মিটিং-মিছিল। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে যখন উত্তাল পরিস্থিতির তখনই অধিকারের লড়াইয়ে একের পর এক আন্দোলন করে সংগঠনটি ।

কী ভাবে ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’ পরিচিতি পেল?

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস বলেন,” নাগরিকত্ব নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতিতে বীরভূমের ইলামবাজারের ছেলে মুস্তাফিউরকে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় । আমরা প্রতিবাদ করি। যাদবপুর ৮ বি সামনে বিক্ষোভ করি। বহু বিশিষ্ট মানুষ আমাদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। আমাদের সঙ্গে ছিলেন কবীর সুমন। অধিকারের লড়াই স্পষ্ট করেই জাতীয় বাংলা সম্মেলনের এটি প্রথম পদক্ষেপ। এরপরই সকলে চিনতে শুরু করেন আমাদের সংগঠনকে।”

বাংলা ভাষার জন্যও লড়েছে সংগঠনটি। শাহীনবাগ ইস্যুতে কলকাতার পার্ক সার্কাসে মুসলিম মহিলাদের আন্দোলন, সেদিনও পাশে থেকে নজির গড়েছিল এই সংগঠন। দেশজুড়ে বিদ্বেষ আন্দোলনের মধ্যে ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’ আনে এক অন্য বাতাবরণ।

এই আন্দোলনের মধ্যে উঠে আসে ‘জয় বাংলা স্লোগান’ যা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। এই প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস বলেন, ” এই আন্দোলনের মঞ্চে ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে লালনের গানের মাধ্যমে আমরা এক অন্য বার্তা দিয়েছি । আর যার ফলস্বরুপ চলতি বছর প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় পার্ক সার্কাসে।”

থেমে থাকেনি সংগঠন । মেঘালয় বাঙ্গালীদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ করে তারা ।

শুধু বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অধিকারের লড়াই নয়, সমাজ মূলক কাজেও বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দেয় ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’ । অতিমারির পরিস্থিতি যখন চরমে, শুরু হচ্ছে লকডাউন পর্ব তখন ‘বাংলা সংস্কৃত মঞ্চ’ সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে স্যানিটাইজার তৈরির কাজ শুরু করে ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’। প্রায় ৪ হাজার মানুষকে তারা বিনামূল্যে স্যানিটাইজার এবং মাস্ক দেয়। ৮ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক এবং স্যানিটাইজার দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে তা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি । কিন্তু স্যানিটাইজার ও মাস্ক তৈরীর সরঞ্জাম তারা রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেয় । এই কাজের জন্য সরকারের তরফ থেকে তাদের দেওয়া হয় শংসাপত্রও, জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

 

লকডাউনের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংগঠনটি। মুম্বই , বেঙ্গালুরু, সেকেন্দ্রাবাদ-সহ বিভিন্ন প্রান্তের পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থা করে সংগঠনটি প্রায় । ১০ হাজার শ্রমিককে খাবার পাঠানো হয়।

অতিমারির সংকট তার মধ্যে রাজ্য সম্মুখীন হয় বড় বিপর্যয়ের । আমফান। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন সহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিধ্বস্ত মানুষদের পাশে থেকেছে সংগঠনটি।

এছাড়াও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় এগিয়ে এসেছে ‘জাতীয় বাংলা সম্মেলন’। সিএসসির মাত্রাছাড়া বিল, রেলের বেসরকারিকরণ একযোগে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।

এরইমধ্যে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়তে এবং সবুজায়নের বার্তা দিতে সংগঠনটি আয়োজন করে বৃক্ষরোপণের।

সংগঠন মূলক কাজের মাঝেই নতুন নতুন পরিকল্পনা জাতীয় বাংলা সম্মেলনের। চলতি বছর ৫ মে, প্রথম মহিলা শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্মবার্ষিকীতে তারা শুরু করে “বাংলা বেতার”। বাংলা বেতার হলো অনলাইন রেডিও স্টেশন। অতিমরির কালে ঘরবন্দি মানুষকে একটু সুস্থ বাতাস উপহার দিতে তাদের এই প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।

আগামী দিনে কী কী কর্মসূচি রয়েছে?

জাতীয় বাংলা সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধব্রত দাস বলেন, ” বাঙালির অধিকার, সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইয়ে আমরা বহু পরিকল্পনা নিয়েছে আগামী দিনে। রাজ্যের ৮ টি জেলায় সক্রিয় ভাবে কাজ করছে আমাদের সংগঠন।”

 

 

Previous articleশ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই, খতম ৩ জঙ্গি
Next articleকরোনা আবহে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন