Monday, August 25, 2025

জন্ম – ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৫

মৃত্যু – ৩১ আগস্ট, ২০২০

 

প্রয়াত হলেন প্রকৃত অর্থেই ‘ভারতরত্ন’ প্রণব মুখোপাধ্যায় ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৮৪ বছর৷

দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার মধ্যে থাকলেও শেষরক্ষা হয়নি৷ সোমবার, ৩১ অগাস্ট বিকেল ৫টে নাগাদ সেনা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন৷ প্রণববাবুর মহাপ্রয়াণের সংবাদে দেশজুড়ে শোকের আবহসৃষ্টি হয়েছে৷ বীরভূমের মিরাটিতে প্রণববাবুর পৈতৃকবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় বিষাদের ছবি৷ দেশের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সর্বস্তরের মানুষ৷

গত ১০ আগস্ট রবিবার রাতে বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। মাথা না-ফাটলেও বেশ চোট লাগে। কিছু স্নায়ুঘটিত সমস্যাও দেখা দেয়। হাসপাতালে ভর্তি করার পরে সিটি স্ক্যান‌ করে দেখা যায়, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় নেই৷ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট সেনা হাসপাতালে৷ সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে, যে ব্লাড ক্লট-কে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘সাবডিউরাল হেমাটোমা’। ডাক্তাররা তখনই আর ঝুঁকি না-নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে প্রণববাবুর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে৷ অস্ত্রোপচারের পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সঙ্কটজনকই ছিলো৷ ভেন্টিলেশনে ছিলেন। শেষ কয়েকদিন ছিলেন গভীর কোমায়। আজ সোমবার তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়। শেষরক্ষা আর করা যায়নি।

২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ নিয়ম করে সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে মর্ণিং-ওয়াক করতেন। মন্ত্রী থাকার সময়ও স্বাস্থ্য সচেতন প্রণববাবুর এই অভ্যাস ছিলো৷ খুব দ্রুত হাঁটতেন। প্রণববাবু একবারই পশ্চিমবঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন৷ এই ঘটনা ছাড়া শরীর খারাপের কারণে তাঁকে কাজ বন্ধ করে বসে থাকতে হয়েছে, এ রকম নজির ছিলো না। প্রণববাবু যতদিন মন্ত্রী ছিলেন, ততদিন অমানুষিক পরিশ্রম করতেন৷ তাঁকে বলা হত জাতীয় রাজনীতির চাণক্য। কতগুলো যে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন একসময় তা গুনেও বলা যেত না৷ সংসদ শেষ হলে সোজা চলে যেতেন মন্ত্রকে। সেখান থেকে তালকাটোরা রোডের বাড়ি। সেখানেও ফাইল দেখতেন। তারই ফাঁকে লোকের সঙ্গে, কংগ্রেস বা অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেন৷ কংগ্রেসের ঝামেলাও তাঁকেই সামলাতে হত। যে রাজ্যেই কংগ্রেস বিপাকে পড়ত, সেখানে প্রণববাবুকেই হাল ধরতে বলতেন সোনিয়া গান্ধী। সরকারের সঙ্কটে তো প্রণববাবু ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কখনই ছিলোনা৷ গভীর রাতে শুয়ে পড়েও ঠিক সকালে উঠে পড়তেন। তারপর শুরু হয়ে যেত কাজ।

এটাই ছিলো তাঁর রুটিন৷ সাধারণ শরীর খারাপেও
কাবু হয়ে পড়তেন না৷
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও ব্যস্ততার রুটিন ছিলো একই৷ প্রণববাবু পড়তে ও লিখতে ভালোবাসতেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ৷ তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা অক্লেশে দিতে পারতেন একটুও না থেমে৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তাঁর পড়া ও লেখার কাজটা অনেকটা বেড়ে যায়৷ লাইব্রেরিতে পড়াশুনো করতেন। অসুস্থতা তাঁকে কাজ থেকে কখনই থামাতে পারেনি।

ফলে সবার ধারনা হয়েছিলো, এই মানুষটি সেনা হাসপাতালের ভেন্টিলেটার থেকেও সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসবেন, বাড়ি ফিরবেন৷ কারন, এ ভাবে হাসপাতালে শুয়ে থাকা তাঁর পক্ষে বেমানান। সবার প্রার্থনা ছিলো, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার তাঁর নিজের জগতে ফিরে আসবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমনটি আর হলো না৷

আরও পড়ুন : অত্যন্ত সঙ্কটজনক প্রণব মুখোপাধ্যায়

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...
Exit mobile version