গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি ছেড়ে নেতা-কর্মীদের ঝাঁকেঝাঁকে যোগদান তৃণমূলে

একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ক্রমশ নিজেদের ঘর গুছিয়ে শক্তি বাড়াচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। পাহাড় থেকে জঙ্গল, সাগর থেকে শহর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিজেপি ও বিরোধী শিবির ছেড়ে ঘাসফুল যোগদান অব্যাহত। তারই অঙ্গ হিসেবে এবার পূর্ব মেদিনীপু জেলার পটাশপুরে পদ্ম শিবিরে ফের বড়সড় ভাঙন। বেশ কয়েকজন স্থানীয় ডাকাবুকো নেতা-সহ তিন-শতাধিক কর্মী-সমর্থক ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন।

বিজেপি ছেড়ে আসা সমস্ত নেতা-কর্মীদের উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার হয়েই তাঁদের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এই যোগদান বলে জানা গিয়েছে।

আর একুশের হাইভোল্টেজ নির্বাচনের আগে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের ফায়দা তুলে নিজেদের হারানো জমি ফের ফিরে পেলো শাসক শিবির। অতীতের প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখা যাবে, ২০১১ সালে বামেদের পর্যুদস্ত করে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলের পর পটাশপুর-১ ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। বিরোধী শূন্য গ্রামপঞ্চায়েতে একচ্ছত্র দাপাদাপি ছিল তৃণমূলের। ২০১২ সাল থেকে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের মধ্যেও ভাঙন ধরে।
২০১৫ সালে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের একটা বড় অংশ দল বদলে বিজেপিতে চলে যায়। গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির সংগঠন মজবুত হয়। ফলস্বরূপ, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে বিজেপি এই এলাকায় ভোটে এগিয়ে ছিল। লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির দাপটে টানা কয়েক মাস ঘরছাড়া হতে হয়েছিল তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মারধরের অভিযোগও ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। এমনকী বিজেপির চাপে বেশ কয়েক মাস তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত অফিস পর্যন্ত খোলা যায়নি। পরে অফিস খুললেও পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধান সহ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের দীর্ঘদিন সেদিক মাড়াতে দেখা যায়নি। অভিযোগ, বিজেপির চাপে তৃণমূলের প্রধান নিজেই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রধান পদ থেকে ছুটি নেন। উপপ্রধান তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অফিসে এলে তাঁকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

এরপরই চাকা অন্যদিকে ঘুরতে থাকে। ক্ষমতার অলিন্দে থাকার তাগিদে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি পদ নিয়ে গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসে। বিজেপির জেলা প্রাক্তন কৃষক মোর্চার সভাপতি মোহনলাল শী গোষ্ঠী বনাম বর্তমান মণ্ডল সভাপতি বনমালী পাত্রর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তার প্রেক্ষিতেই মোহন মণ্ডল, অজয় মান্নার নেতৃত্বে ফের পুরনো দলে ফিরলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। গোপালপুর পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিজেপি কর্মীদের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন ব্লক সভাপতি তাপস মাজি। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা পীযূষ পন্ডা, প্রভুরাম দাস প্রমুখ।

আরও পড়ুন – উস্কানি-হিংসা-ঘৃণা ছড়াচ্ছে এই বিজেপি নেতা! নিষিদ্ধ করলো ফেসবুক

Previous articleউস্কানি-হিংসা-ঘৃণা ছড়াচ্ছে এই বিজেপি নেতা! নিষিদ্ধ করলো ফেসবুক
Next articleকুলভূষণ মামলায় বড় জয় ভারতের, আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিল পাক আদালত