ক্ষমতায় এলে অনুব্রতকে রোলারে পিষে মারার হুমকি বিজেপি নেতার

একুশে রাজ্যে ক্ষমতায় এলে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে রোলারে পিষে মারার হুমকি দিলেন বিজেপি নেতা। বিজেপির বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য মানস বন্দ্যোপাধ্যায় আজ, শুক্রবার “গণতন্ত্র বাঁচাও” দিবসের ধর্ণা মঞ্চ থেকে তৃণমূল জেলা সভাপতিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “২০২১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। আর ভোটের ফলাফলের পর আমাদের যে বিজয় মিছিল হবে, সেখানে চায়না ট্রলিতে অনুব্রত মন্ডলকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে। আর ট্রলির পিছনে পিছনে রোলার চালানো হবে। সেদিন অনুব্রত মণ্ডল বুঝতে পারবে মৃত্যুভয় আসলে কাকে বলে।” অনুব্রত মণ্ডলকে এমন নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করায় ও হুমকি দেওয়ায় বীরভূম রাজনীতিতে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতার এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য তৃণমূল সমালোচনায় সরব হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে ভাষায় কথা বলেন, বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর নেতা-কর্মীরাও সেই ভাষায় কথা বলে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এদিন মেয় রোডে ফের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে খুঁজে পাওয়া যায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিজেপির “গণতন্ত্র বাঁচাও” কর্মসূচি থেকে কার্যত হুঙ্কার ছাড়লেন দিলীপ ঘোষ।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজ্যজুড়ে “গণতন্ত্র বাঁচাও” নামের যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা রাজনৈতিকভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন মঞ্চ থেকে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, “আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবেই ভোট হোক তৃণমূলকে হারাব। ইভিএমেও হারাব। ব্যালটেও হারাব।”

কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিজেপির ধর্ণা। সেখানে হাজির আছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। রাজ্যের অনেক জায়গায় পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্না মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিজেপি।সবমিলিয়ে একুশের বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মতোই প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে আসা বিজেপিও রাজ্যজুড়ে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে।

সেভাবেই বীরভূমের রামপুরহাটে “পশ্চিমবঙ্গ বাঁচাও, গনতন্ত্র বাঁচাও দাবি তুলে মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে মঞ্চ বেঁধে ধর্ণায় বসেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। রামপুরহাটে এদিনের ধর্ণা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল, বিজেপি যুব মোর্চার বীরভূম জেলা সভাপতি শান্তনু মণ্ডল, জেলা কমিটির সম্পাদিকা শ্রাবন্তী ব্যানার্জি, রামপুরহাটের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী রশ্মি দে-সহ কয়েকশো বিজেপি কর্মী ও সমর্থক। আর সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিজেপির বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য মানস বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মণ্ডলকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন।

এছাড়া এদিনের রাজজুড়ে বিজেপির এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গের অলিপুরদুয়ারে এসডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি আটকে দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা পেয়ে আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা-সহ জেলা বিজেপি নেতারা কোর্ট মোড়ে বক্সা ফিডার রোডের উপরই বসে পরে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। একটা সময় পর সাংসদের সঙ্গে জেলা পুলিশ আধিকারিকদের বচসাও বাধে ৷ কোচবিহারের মাথাভাঙায় বিজেপি-তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে।

জলপাইগুড়িতে সাংসদ চিকিৎসক জয়ন্ত কুমার রায়ের নেতৃত্ব জলপাইগুড়ি এসডিও অফিসে ডেপুটেশন জমা দেন বিজেপি কর্মীরা। ডেপুটেশন জমা দিতে আসার পর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিজেপি সমর্থকদের।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাশাসকের ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। একইভাবে উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মুর নেতৃত্বে চাঁচোল মহাকুমা শাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের অফিসে সামনে এলআইসি মোড়ে বিজেপি রাজ্য কমিটির সম্পাদক তুষারকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে অবস্থান বিক্ষোভ হয়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরা, কাঁথি, হলদিয়া ও তমলুক মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে ধর্ণায় বসে বিজেপি জেলা নেতৃত্ব।

বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের নেতৃত্বে জেলা বিজেপি বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে ধর্ণা অবস্থান করেন। ঝাড়গ্রামে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে রাস্তার উপর মঞ্চ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ।

উলুবেড়িয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে বিজেপির এই কর্মসূচি পালন করে। উপস্থিত ছিলেন বিজেপি রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ হাওড়া গ্রামীণ জেলার বিজেপির নেতৃত্বরা।

হাওড়া জেলায় “গণতন্ত্র বাঁচাও,বাংলা বাঁচাও” কর্মসূচিতে বঙ্কিম সেতুর নীচে সভা করে বিজেপি। প্রধান বক্তা ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি রাজ্যে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারির পক্ষে সওয়াল করেন।

আরও পড়ুন- মাদকযোগে গ্রেফতার শৌভিক, স্যামুয়েল, এবার কি এনসিবির জালে রিয়াও?

Previous articleBREAKING: সুশান্তকাণ্ডে গ্রেফতার শৌভিক চক্রবর্তী, স্যামুয়েল মিরান্ডা
Next articleমুকুল-কৈলাশ “দোস্তিতে” সভা ছাড়লেন দিলীপ! ফের অশনি সঙ্কেত বঙ্গ বিজেপিতে?