মুকুল-কৈলাশ “দোস্তিতে” সভা ছাড়লেন দিলীপ! ফের অশনি সঙ্কেত বঙ্গ বিজেপিতে?

মুকুল রায়-কৈলাশ বিজয়বর্গীয় সমীকরণে অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিছুটা অপমানিত হয়েই আজ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে “গণতন্ত্র বাঁচাও” কর্মসূচির সভা ছাড়লেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। এমনটাই মনে করছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। মনে করা হচ্ছে রাজ্য বিজেপিতে ফের ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। যা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরে অশনি সঙ্কেত।
যদিও দিলীপ ঘোষ শিবিরের দাবি, হাওড়ার কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্যই বেরিয়ে যান তিনি।

বঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে মুকুল রায়ের সম্পর্ক শুরু থেকেই বেশ মধুর। দিলীপের থেকে কৈলাশকে বরাবরই দেখা গিয়েছে মুকুলকে বেশি গুরুত্ব দিতে। লোকসভা নির্বাচনের সাফল্যের জন্য মুকুল রায়কেই বেশি কৃতিত্ব দিয়েছিলেন কৈলাশ। এবার বিজেপির “গণতন্ত্র বাঁচাও” কর্মসূচি থেকে ফের মুকুল রায়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান থাকবে মুকুলের। এদিন সভামঞ্চ থেকে পরোক্ষে সেটাই বুঝিয়ে দেন কৈলাশ।

অন্যদিকে, আজ শুক্রবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশের দিলীপ ঘোষ থাকলেন মাত্র ৪০ মিনিটের মতো। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় যখন এলেন, ঠিক তখনই সভা ছাড়লেন দিলীপ ঘোষ। কারও সঙ্গে কথা না বলেই কিছুটা অভিমানী মুখ নিয়ে সভা ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। যতক্ষণ মঞ্চে ছিলেন, পাশে বসে থাকা মুকুল রায়ের সঙ্গে একটিও কথা বলেননি তিনি। সেখানে উপস্থিত অন্যান্য নেতা ও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চোখ তা এড়ায়নি। দিলীপ সভা ছাড়তেই শুরু হয় কানাঘুষো।

অনেকেই মনে করছেন রাজ্যজুড়ে যখন “গণতন্ত্র বাঁচাও” দিবসের কর্মসূচি চলছে, তখন তৃণমূলকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে নিজেদের ঠান্ডা লড়াইয়ে নতুন করে ফাটল ধরছে গেরুয়া শিবিরে। কিছুদিন আগেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে মুকুল-দিলীপের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছিল রাজ্য বিজেপিতে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে দিল্লি থেকে অমিত শাহের দূত হয়ে এসে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় যুযুধান দুই নেতাকে এক টেবিলে এনেছিলেন। কৈলাশ আসার পর দিলীপ ঘোষের নিউটাউনের বাড়িতে একটানা বৈঠকের পর ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল রাজ্য বিজেপিতে। কিন্তু ফের তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। নতুন করে ফের মুকুল-দিলীপ দ্বন্দ্বে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি।

গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, নতুন করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিজেপির যুব মোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁ-র জেলা নেতৃত্বের তালিকা তৈরি ঘিরে। কিছুদিন আগে সৌমিত্র জেলা যুব সভাপতিদের একটি তালিকা ঘোষণা করেছিলেন। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের একেবারেই পছন্দ হয়নি। এমনকি, সৌমিত্রের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণেরও অভিযোগ ওঠে দলের মধ্যেই। এরপরই মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ দুই নেতাকে নিয়ে লড়াই শুরু হয়।

এদিকে মুকুল রায়ের হয়ে শুরু থেকেই বঙ্গ বিজেপিতে লড়াই চালাচ্ছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। তিনি মুকুল ঘনিষ্ঠ নেতাকে যুব মোর্চায় ঢোকানোর তদ্বির করছেন দিলীপ-ঘনিষ্ঠকে সরিয়ে। নেপথ্যে মুকুলের খেলা রয়েছে বলেও অভিমত বিজেপির ঘরে-বাইরে। আর এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর বিজেপিতে মুকুল বনাম দিলীপ নেপথ্যের লড়াইটা রয়েই গিয়েছে। সেই লড়াই আবার বাংলা থেকে দিল্লির দরবার পর্যন্তও পৌছে গিয়েছে।

যদিও বিজেপি নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন, নেতৃত্বের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই। একুশের নির্বাচনে তাঁরা একজোট হয়েই লড়বেন। বিরোধীরা ভয় পেয়েছে। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব খাড়া করে কুৎসা রটাচ্ছে।

আরও পড়ুন- ক্ষমতায় এলে অনুব্রতকে রোলারে পিষে মারার হুমকি বিজেপি নেতার

Previous articleক্ষমতায় এলে অনুব্রতকে রোলারে পিষে মারার হুমকি বিজেপি নেতার
Next articleএকুশের ভোটের আগেই রাজ্যে ‘ওয়ার্ম আপ’ ম্যাচ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম