Wednesday, August 27, 2025

টোটো মেয়েদের স্কুলমুখী করে জাতীয় পুরস্কার পেলেন বাংলার শিক্ষিকা

Date:

স্কুল জীবন শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যেত। কিশোরী বয়সে দায়িত্ব নিতে হতো সংসারের। এমনকী অপুষ্টিতে প্রাণ হারানোর ঘটনাও আছে। এমনই জীবন ছিল টোটো প্রজাতির মেয়েদের। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল। স্কুলমুখী করেছেন মেয়েদের। এবার সেই শিক্ষিকার হাতে শিক্ষক দিবসের দিন জাতীয় পুরস্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

এই টোটো সম্প্রদায়ের বাস মূলত উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে। চা বাগানে কাজ করেই পেট চলে তাদের। গত কয়েক বছরে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা। যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন রোগ। একই সঙ্গে রোগ নিয়ে অবহেলা, মধ্যযুগীয় ধ্যানধারনা এবং বাল্যবিবাহ। এমনকী কৈশোরে মা হতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে বহু মেয়ের। আবার মাদকাসক্ত হয়েও মৃত্যুর নজির আছে এই সম্প্রদায়ের অন্দরে।

আরও পড়ুন : করোনা-কালে দার্জিলিঙের মন জয় করছে এইচএমআই-এর অ্যাম্বু ব্যাগ

ধানিরাম টোটো উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিশা ঘোষাল। ২০০৮ সালে স্কুলে যোগ দেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়েছেন মেয়েদের। তাঁর হাত ধরে কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যা। মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহ বেড়েছে।অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন কেন মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজন। মিশা বলেন, “২০০৮ আমি স্কুলে যোগ দিই। তার আগে খুব কম ছাত্রী মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোত। তার আগেই ছেড়ে দিত লেখাপড়া। অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়েছিলাম আজকের দিনে মেয়েদের পড়াশোনা কেন জরুরি। অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বারণ করেছি।”

ধানিরাম টোটো উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ৯৯ শতাংশ ছাত্রীই তফশিলি উপজাতির। তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশ টোটো সম্প্রদায়ের। দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছয় তারা। এই পথ পেরোতে সমস্যা হয় ছাত্রীদের। বিশেষত বর্ষাকালে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। যাতায়াতের সমস্যার জন্য স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল অনেকে। ওই মেয়েদের জন্য হস্টেলের ব্যবস্থা করেছে পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দফতর। তাতে উপকৃত হয়েছে ছাত্রীরা। সেখান থেকেই লেখাপড়া করছে বহু পড়ুয়া। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষিকা।

মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মিশাকে অনুপ্রাণিত করেছেন তাঁর মা। কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষিকা। তারপর এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন। আদিবাসী মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারকে।

মিশা বলেন, “আমার স্কুলের এক ছাত্রী রিতা টোটো এখন স্নাতক পাশ করে সরকারি চাকরি করছেন। খুব ভালো লাগে যখন দেখি মায়েরা মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসছেন। তখন মনে হয় আমি অনেকটাই পেরেছি। এই লড়াইয়ে বহু দিনের। মেয়েদের স্কুলমুখী করতে টানা ১২ বছর পরিশ্রম করেছি। এখনও সেই পরিশ্রম জারি আছে।”

আরও পড়ুন : আজই তলব, সাতসকালে রিয়াকে সমন ধরিয়ে এল এনসিবি

Related articles

বিরক্ত মিঠুন? এড়াচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক কর্মসূচি

বারবার রং বদল করে আপাতত গেরুয়াতে ঠেকেছেন ডিস্কো ড্যান্সার মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। ভোটের আগে বা বিজেপির. (BJP)...

আরজি কর কাণ্ডে ভুয়ো প্রচারের অভিযোগ! নোটিশ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়া অভয়ার মৃত্যুকে ঘিরে ভুয়ো প্রচার মামলায় নোটিশ ধরাল কলকাতা পুলিশ। পুলিশের...

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...
Exit mobile version