Thursday, August 28, 2025

আলোর শহর চন্দননগরেই হতাশার অন্ধকার, শিল্পীর হাতে আঁশবটি-কর্ণিক

Date:

আলোর শহর চন্দননগর।  পুজোয় যে আলোর রোশনাই কলকাতা, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছত, সেই আলোই আজ নিভেছে। অন্ধকারে ডুবেছে ফরাসডাঙা। যাঁদের হাতের কারিকুরিতে আলোকমালায় ফুটে উঠত কাশ্মীরের জঙ্গি হানা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-সহ আরও অসংখ্য ঘটনা, তাঁদের হাতে আজ মাছ কাটার আঁশবটি। কেউ ধরেছেন কর্ণিক। বাড়ির বউ এখন দোকান দিয়েছে রাস্তার মোড়ে। আলোক শিল্পী স্বামীর কাজ বন্ধ। মেয়ে দুটোকে কী করে বড় করবেন সে চিন্তায় ঘুম উড়েছে।

জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত ফরাসীদের প্রাক্তন উপনিবেশ চন্দননগর জুড়ে এখন হাহাকার। এ শহরের পরিচিতি তার আলোক শিল্পের জন্য। কলকাতার দুর্গাপুজো হোক বা মুম্বইয়ের গণেশ পুজো আলোর বরাত পান চন্দননগরের শিল্পীরাই। সুদূর বিদেশেও পাড়ি দেয় এখানকার আলো।

আরও পড়ুন : মেট্রো সুড়ঙ্গ থেকে স্রোতের মতো বইছে কাদাজল ! আতঙ্কে সবাই

তবে এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর সর্বনাশ ডেকে নিয়ে এসেছে করোনাভাইরাস ও লকডাউন। প্রভাব কিছুটা উমপুনেরও।চন্দননগরের আলোক শিল্প ঘিরে হাজার হাজার মানুষের রুটি রুজি ছিল।কুলু পুকুর ধার থেকে বিদ্যা লঙ্কা। বিস্তীর্ণ এলাকার দু’পাশে শুধুই সারিবদ্ধ আলোর দোকান।

বছরের শুরুতেও সেখানে গেলে আপনি দেখতে পেতেন আলোয় ঝলমল করছে সে সমস্ত দোকান। কারখানায় দম ফেলার সময় থাকত না।কত রকমের পুজো। বরাত নেওয়া শুরু হত জানুয়ারি থেকেই। বিহার, অসম, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে আলো নিয়ে যেত লোকে। এখন আলো নেওয়া দূরের কথা অগ্রিম বাবদ পুজো উদ্যোক্তারা যা দিয়েছেন তা ফেরতের জন্য তাগাদা আসছে। আলো ঝলমলে দোকানের সমস্তরই ঝাঁপ বন্ধ।

শুধু চন্দননগর নয় হুগলি জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আলোকশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। যে মানুষগুলো আলো জ্বালিয়ে এতদিন সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তাঁরাই আজ অঝোরে কাঁদছেন। বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। কেউ আলোর সরঞ্জাম গুটিয়ে সবজি, মনোহারি ও মুদিখানার দোকান দিয়েছেন। কেউ পুঁজির অভাবে দোকান বন্ধ করে মাছ কি মুরগির মাংস বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন: করোনা-যোদ্ধা ও সফল পড়ুয়াদের সম্মান প্রদর্শন কাঁকুড়গাছিতে

ঘরের বউ এসে দোকানদারি শুরু করেছে। কেন এই অবস্থা হল প্রশ্ন করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন, শুধু নিজের সংসার নয় আরো ১০-১৫টি সংসার চলত তাঁদেরই আলোর ব্যবসাতে।কিন্তু লকডাউন, চিন থেকে মাল আসা বন্ধ হওয়াতেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাই। তিনি ধারদেনা করে দোকানে মুদি ও মনোহারি জিনিস তুলে দোকানদার সেজে দাঁড়িয়েছেন সংসার বাঁচাতে।

একদিন যাঁদের আলোকশিল্পী বলেই জানা যেত তাঁরা আজ কেউ মাছ বিক্রি করছেন, কেউ সবজি। প্রত্যেকের মুখেই একটি কথাই শোনা গিয়েছে, “আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।এখন সংসার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে এই ব্যবসাতেই নামতে হয়েছে”।লকডাউনে চিন থেকে মাল আসা বন্ধ, ট্রেন বন্ধের জন্য বাইরের লোক আসা বন্ধ। পুজোর অর্ডার ক্যানসেল হয়ে গিয়েছে। তাই বাঁচার জন্য এই পথ বেছে নিতে হয়েছে।

আলো ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে শহর চন্দননগর।

Related articles

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...

সুখবর! পুজোর আগে পার্ট টাইম কর্মীদের বেতন বাড়াল রাজ্য 

পুজোর আগে রাজ্যের আংশিক সময়ের কর্মীদের জন্য বড় সুখবর দিল নবান্ন। বিভিন্ন দফতর ও সরকার অধীনস্থ সংস্থায় কর্মরত...
Exit mobile version