চিন যুদ্ধ ডেকে আনলে জবাব দিতে তৈরি ভারত

সীমান্তে যতই উত্তেজনা থাকুক, ভারত আগ বাড়িয়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করবে না। বরং সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে লাগাতার আলোচনা চালিয়ে সহমত তৈরি করাই দিল্লির লক্ষ্য। কিন্তু চিন যদি প্ররোচনা ছড়িয়ে যুদ্ধ ডেকে আনতে চায় তাহলে জবাব দিতে তৈরি ভারত। সেজন্য বায়ুসেনা ও স্থলসেনাকে পুরোপুরি তৈরি রাখা হচ্ছে, যাতে হঠাৎ করে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিলে ভারত সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রতিরোধ ও জবাব দিতে পারে। এমনিতে পূর্ব লাদাখের কাছে পঞ্জাব, হরিয়ানা, কাশ্মীর, লেহ-সহ ভারতের একাধিক এয়ারবেস থাকায় সেথান থেকে সামরিক সরঞ্জাম উড়িয়ে আনা অনেক বেশি সহজ। তুলনায় দূরত্বের জন্য চিনকে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে। কারণ চিনা বাহিনীকে বহুদূর থেকে সামরিক সরঞ্জাম বয়ে আনতে হচ্ছে। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতার গালওয়ান উপত্যকায় যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করা ও রণকৌশলের দিকে থেকে চিনা বাহিনীর থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা। ভারতের আকাশসীমাকে সমস্ত দিক থেকে সুরক্ষিত রাখতে কমব্যাট ফাইটার জেট নামিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। টহল দিচ্ছে সুখোই-৩০, মিরাজ-২০০০ ফাইটার জেট ও মিগ-২৯ ফাইটার জেটের নয়া ভার্সন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ডাবল ইঞ্জিন মাল্টিরোল এয়ার সুপিরিয়রিটি ফাইটার জেটগুলির অন্যতম হল সুখোই। এই ফাইটার জেট থেকে আবার ব্রহ্মস মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তিও রয়েছে। ফ্রান্স থেকে কেনা রাফাল ফাইটার জেটও চলে আসবে লাদাখ সীমান্তে। রাফাল পৌঁছনোর আগে ভারতের তৈরি দুটি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টারকেও সীমান্তে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া শক্তিশালী অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচে এএইচ-৬৪ই, সিএইচ-৪৭ এফ চিনুক মাল্টি-মিশন হেলিকপ্টারও নামিয়েছে বায়ুসেনা। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কমব্যাট এয়ার পেট্রলিং-এর জন্য নামানো হয়েছে চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার ও আ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার। রাতে পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই কথা ভেবেই অ্যাপাচে ও চিনুক কপ্টারকে কাজে লাগানো হয়েছে। চুশুল এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে অ্যাপাচে, অন্যদিকে দৌলত বেগ ওল্ডিতে রাতে চক্কর কাটছে চিনুক। চিনুকের সঙ্গে যৌথভাবে চিনের লাল ফৌজের গতিবিধির উপর নজর রাখছে অ্যাপাচে কপ্টার। এএইচ অ্যাপাচে-৬৪ কপ্টারকে বলা হয় বোয়িং অ্যাপাচে অ্যাটাক কপ্টার। যুদ্ধাস্ত্র বয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার প্রয়োজনমত নিশানায় আঘাতও হানতে পারে। এর পাশাপাশি সীমান্তে টহল দিচ্ছে ইজরায়েলি সশস্ত্র হেরন ড্রোন। ‘আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল’ (ইউএভি) হেরন টিপি ড্রোনের প্রতিটিতেই অস্ত্র ভরার ব্যবস্থা আছে। দূরপাল্লার এই ড্রোন দিয়ে শত্রু ঘাঁটিতে অনায়াসেই টার্গেট করা যায়। একইসঙ্গে, এর বিশেষ ক্যামেরা যে কোনও আবহাওয়ার মধ্যে যে কোনও সময় শত্রু ঘাঁটির ছবি তুলে আনতে পারে।

লাদাখের লেহ-র কাছেই ভারতের বায়ুসেনা ঘাঁটি আছে। সেখান থেকে সুখোই-৩০এমকেআই, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই উড়ে এসেছে প্যাঙ্গং রেঞ্জে। হ্রদ পেরিয়ে বিপরীতে চুশুল রেজিমেন্টে টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক ও টি-৭২ যুদ্ধট্যাঙ্ক তৈরি হয়েই আছে। টি-৯০ ‘ভীষ্ম’ ট্যাঙ্কের ২এ৪৬এম ১২৫ মিলিমিটার ট্যাঙ্ক-গান থেকে ৬০ সেকেন্ডে ৮টি সেল ছোড়া যায়। এর পাল্লা ১০০ মিটার থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত। কাজেই চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বাড়াবাড়ি করলে তাদের সামরিক কাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে বেশি সময় লাগবে না ভারতীয় বাহিনীর।

 

Previous article‘জোর করে নেওয়া বয়ান’ প্রত্যাহার করলেন রিয়া, আজ ফের জামিনের শুনানি
Next articleএক বছর ‘গোপন কথাটি গোপনই’ রাখতে চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা!