কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের মামলায় সোমবার দ্বিতীয় চার্জশিট দিতে চলেছে সিআইডি। তাতে বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাম থাকছে। সিআইডি তদন্তে আরেক এফআইআর নামাঙ্কিত মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্যতালিকা থাকলেও বিস্ময়করভাবে উপরমহল থেকে আপাতত মুকুলের নাম বাদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে সিআইডিই ধন্দে পড়েছে। তাহলে কি শীর্ষমহলে কোনো গোপন সেতুবন্ধন চলছে? নাহলে প্রায় একই তথ্যপ্রমাণের উপর জগন্নাথের নামে চার্জশিটের নির্দেশ এলেও মুকুলকে বাদ রাখার নির্দেশ এলো কেন? সোমবার সিআইডি ১৭৩ ধারায় তদন্ত চালু রাখার দরজা খোলা রেখেই চার্জশিট দেবে। ফলে আবার চার্জশিটের সম্ভাবনা থাকছেই।

২০১৯ সালে সরস্বতী পুজোর দিন খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। দুজন গ্রেপ্তার হয়। পুলিশ প্রাথমিক চার্জশিট দেয়। এরপর এফ আই আরে নাম থাকা মুকুল রায় ডিসচার্জ পিটিশন করলে জেলা জজ তা খারিজ করে দেন। নিম্ন আদালতের রায় এবিষয়ে নাকচ করেন জেলা আদালত। তখন আবার তদন্ত শুরু হয়।

সর্বশেষ খবর, তদন্তে জগন্নাথ সরকার ও মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। রিপোর্ট পেশ করা হয় উপরমহলে। তাতে সব কিছুর উল্লেখ আছে।
এরপর যা নির্দেশ এসেছে, সেইমত সোমবার শুধু বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে চলেছে সিআইডি। মুকুল রায়ের নাম এই চার্জশিটে থাকছে না। যদিও ভবিষ্যতে চার্জশিটের দরজা খোলা থাকছে।

এদিকে সোমবারের আগেই এনিয়ে চাঞ্চল্য তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠেছে জগন্নথ সরকারকে বলি দিয়ে কি কাউকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে? যদি হয়, তাহলে তা কেন হচ্ছে? যে তথ্যের উপর জগন্নাথকে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে, একই তথ্যে মুকুল ছাড় পান কী করে? তাহলে কি মুকুলের উপর বিশেষ কেউ কেউ বিশেষ কোনো কারণে নরম হয়ে আছেন এবং চাইছেন আপাতত মুকুল বিড়ম্বনামুক্ত হয়ে বিজেপিতেই থাকুন? এই নিয়ে জল্পনা ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু ঘটনা হল, সোমবার খুনের মামলায় শুধু সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নামেই চার্জশিট জমা পড়ছে।

সূত্র বলছে, সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে আলাদা করে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য ও তথ্য আছে, তার বিস্তারিত উল্লেখ আছে। জগন্নাথ এবং মুকুল, দুয়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আছে। তদন্তের রিপোর্ট আছে। কিন্তু মুকুলের বিরুদ্ধে এখন চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না।

অসমর্থিত সূত্রে প্রকাশ, মঙ্গলবার বা বুধবার বেশি রাতে একটি বিশেষ কথোপকথনের পরেই এই চার্জশিট থেকে আপাতত মুকুলকে বাদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সোমবার যে চার্জশিট পেশ হবে কোর্টে, তাতে ১৭৩ নম্বর ধারা দিয়ে আরও তদন্ত ও চার্জশিটের দরজা খোলা থাকছে।

একটি মহলের মতে, এই কারণেই মুকুলকে চাণক্য বলা হয়। একদিকে তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব তাঁর প্রতি দুর্বল, আসল জায়গায় বোঝা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতাদের তিনি নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে নিজের নেতৃত্ব মানিয়েই ছাড়ছেন। আর তৃণমূল মুচকি হাসছে। মুকুল অবশ্য এর মধ্যে নেত্রী বা তৃণমূলকে রুটিন বিবৃতির বাইরে কোনো আক্রমণ করেননি।

যাই হোক, সবার নজর আপাতত সোমবার পেশ হতে চলা চার্জশিটের দিকে।

আরও পড়ুন- কলকাতা পুলিশের ৮০% সিসি ক্যামেরা বিকল, আটকে যাচ্ছে তদন্ত
