প্রবল চাপে দিল্লি পুলিশ জানালো, দাঙ্গায় অভিযুক্ত নন ইয়েচুরি- যোগেন্দ্র যাদবরা

গত ফেব্রুয়ারির দিল্লি- দাঙ্গার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সীতারাম ইয়েচুরি, অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে দিল্লি পুলিশ।

করোনা-আগ্রাসনের আগে গোটা দেশ উত্তাল হয়েছিলো দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে৷ পরে ওই দাঙ্গার তদন্তে নামে দিল্লি পুলিশ৷ তদন্তের শেষে দিল্লি পুলিশের পেশ করা সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সীতারাম ইয়েচুরি, অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদব,দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের নাম থাকা নিয়ে জাতীয়স্তরেই তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ দাঙ্গার প্ররোচনাকারী হিসেবে এইসব নাম উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে৷ মূল চার্জশিটে ইয়েচুরিদের নাম না থাকলেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে দিল্লি পুলিশ এই নামগুলি যুক্ত করেছে৷ জানা গিয়েছে, এই তালিকায় আরও একাধিক নাম রয়েছে৷ যুক্ত করা হয়েছে ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর, উমর খালিদ-সহ বেশ কিছু নেতার নামও।
বিতর্ক মাথাচাড়া দিতেই দিল্লি দাঙ্গার তদন্ত এবং চার্জশিট নিয়ে প্রশ্নের মুখে দিল্লি পুলিশ!

সর্বস্তরের প্রবল চাপে দিল্লি পুলিশ শেষপর্যন্ত সাফাই দিতে নামলো ৷ দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে রবিবার বলা হয়েছে, সীতারাম ইয়েচুরিদের অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিটে নাম দেওয়া হয়নি। পুলিশের সাফাই, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন এইসব নেতা এবং বিশিষ্টদের নাম বলেছেন৷ সে কারনেই এই নামগুলি চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এনারা কেউই অভিযুক্ত নন।

বামদলগুলি অভিযোগ করেছে, অসত্য তথ্য যুক্ত করে, সাক্ষ্যপ্রমাণ বিকৃত করে, রাজনৈতিক প্রভুদের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ এই কাজ করেছে। সিপিএমের তরফে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের নির্দেশে দিল্লি পুলিশ CAA-NRC বিরোধী আন্দোলনকে ‘দাঙ্গা’ বলে চিহ্নিত করেছে৷ চার্জশিটে সে কারনেই ইয়েচুরিদের আন্দোলনকে ‘দাঙ্গায় প্ররোচনা’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ বলে চিহ্নিত করেছে। কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, “দিল্লি পুলিশ RSS ও বিজেপির শাখা হিসাবে কাজ করছে। স্বৈরাচারি মনোভাব দেখাচ্ছে সরকার। কেউ কিছু বলতে পারবে না, চুপ করে থাকতে হবে। কেন্দ্র প্রতিটি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাচ্ছে। আজ সীতারাম ইয়েচুরিকে ফাঁসানো হয়েছে। কাল হয়তো আমাদের মধ্যে কাউকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হতে পারে নোংরা রাজনৈতিক খেলা হচ্ছে।”
দিল্লি পুলিশ অবশ্য এদিন বলেছে, এঁরা প্রত্যেকেই ভারত সরকারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, দিল্লি পুলিশের তরফে প্রথমে বলা হয়েছিলো, সীতারাম, যোগেন্দ্র যাদবরা CAA- বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উসকানি দিয়েছিলেন। এমনকী এঁরাই CAA বা NRC-কে ‘মুসলিম বিরোধী’ বলে চিহ্নিত করেন। এবং এর ফলে ভারত সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়৷ এনারা বিক্ষোভে উসকানি দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেই দাবি থেকে সরে আসে দিল্লি পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩-২৬ তারিখের মধ্যে উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গায় ৫৩ জনের মৃত্যু এবং ৫৮১ জন আহত হন। মৃত ও আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৭ জনের শরীরে বন্দুকের গুলির ক্ষত ছিলো বলেও অভিযোগ ওঠে।

এদিন দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে, JNU-র ছাত্রী দেবাঙ্গনা ও ছাত্র মহেশ নারওয়াল স্বীকার করেছে যে তারা হিংসার সঙ্গে পরোক্ষে জড়িত। এমনকী অধ্যাপক জয়তী ঘোষ, অপূর্বানন্দরাও যে তাদের মদত ও সাহস জুগিয়েছিল তাও নাকি স্বীকার করেছেন এই মেধাবী পড়ুয়ারা।

আরও পড়ুন-রাজ্যপালের সঙ্গে কথা, গ্রেফতারির ভয়ে কঙ্গোনা বিজেপির ‘শেল্টারে’!

Previous articleবিজিবি-বিএসএফ বৈঠক স্থগিত
Next articleকোভিড-১৯ আক্রান্ত দুই দলের দুই সাংসদ, অধিবেশনে যাওয়া হচ্ছে না