Sunday, November 16, 2025
কণাদ দাশগুপ্ত

শুরুর দিন থেকেই ২০২০ সালটা গোলমেলে৷

এই গোলমাল সর্বস্তরেই৷ মহামারি কেড়েছে হাজার হাজার প্রাণ৷ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাতাল প্রবেশের মাঝেই বেকারত্বের সংখ্যা আকাশ ছুঁয়েছে৷ এক ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ মানুষকে কর্মহীন করা হয়েছে৷ ‘নিউ নরমাল লাইফ’ নামে এক সোনার পাথরবাটি আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে৷

এবং আরও বড় গোলমাল…

… এই ২০২০ সালেই মহালয়ার ৩৫ দিন পর উদযাপিত হবে দুর্গাপুজো। মহালয়া ১৭ সেপ্টেম্বর, আর মহাষষ্ঠী তার ঠিক ১ মাস ৫ দিন পর, ২২ অক্টোবর।

এর কারণ কী ? দুই তিথির মধ্যে এতখানি ব্যবধান কেন? অলৌকিক কিছু? একেবারেই নয়, পুরোটাই প্রাকৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক৷

পঞ্জিকা বলছে, এক মাসে দুটি অমাবস্যা থাকলে তাকে বাংলায় ‘মল মাস’ বলা হয়। এই মাসে কোনও শুভ অনুষ্ঠান করা যায় না বা হয় না। ১৪২৭ সালের আশ্বিনে দু’টি ‘অমাবস্যা’৷ ফলে পুজোর মতো শুভ অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না৷ সে কারণেই পুজো পিছিয়ে চলে গিয়েছে কার্তিক মাসে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস, দুই পঞ্জিকা একই মতপ্রকাশ করছে।
১৯৮২ এবং ২০০১ সালেও এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তখনও মহালয়ার সঙ্গে মহাষষ্ঠীর দিন-পার্থক্য ছিল ১ মাসেরও বেশি৷ প্রতি ১৯তম বছরে ১ মাসের ব্যবধান থাকে মহালয়া ও দুর্গাপুজোর মধ্যে। এই ১ মাসের মধ্যে পারিবারিক নিত্যপুজো ও অন্যান্য পুজো অবশ্য করা যায়৷

এবার দেখা যাক ‘মলমাস’ কী ?

সূর্য ও চন্দ্র মাসের গণনার ভিত্তিতেই হিন্দু ক্যালেন্ডার নিয়ন্ত্রিত। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী একটি সূর্যবর্ষ ৩৬৫ দিন ও ৬ ঘণ্টার হয়ে থাকে। চন্দ্রবর্ষ হয় ৩৫৪ দিনের। এই দুইয়ের মধ্যে ১১ দিনের ফারাক থাকে। ফলে প্রতি ৩ বছরে এটি ১ মাসের সমান হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত মাসের পার্থক্য দূর করার জন্য প্রতি ৩ বছরে একবার অতিরিক্ত মাস আসে। একেই অধিকমাস, পুরুষোত্তম মাস বা মলমাস বলা হয়।
সেই হিসাবে এবছরের আশ্বিন মাস অধিকমাস। অধিকমাসে পবিত্র কাজ করা যায় না৷ অধিকমাসে কোনও সূর্য সংক্রান্তি না-থাকায় এই মাসটি মলিন হয়ে যায়। তাই একে মলিনমাস বা মলমাস বলা হয়। আর একটি ধারণা অনুযায়ী, একই মাসে দুটি অমাবস্যাকেও মলমাসের অন্যতম কারণ মনে করা হয়।
পঞ্জিকা বলছে, ২০২০ সালে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিতৃপক্ষ৷ দেবীপক্ষ শুরু হচ্ছে কার্তিক মাসের ১৭ অক্টোবর। মহালয়ার দিন, ১ আশ্বিনে পড়েছে একটি অমাবস্যা৷ আর তার পরের অমাবস্যাও পড়ে গিয়েছে আশ্বিনেই, ইংরেজির ১৬ অক্টোবর৷ এই দুই অমাবস্যাই আশ্বিন মাসকে ‘অশুভ’ করে তুলেছে৷ ফলে দুর্গাপুজো সরে গিয়েছে কার্তিক মাসে।

১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া। মহালয়ায় এবার তর্পণের পুণ্যতর সময় ভোর ৫.২৫ থেকে বিকেল ৪.৩৫ পর্যন্ত৷ সকাল ৭.৪২ থেকে দুপুর ১.১৮ পর্যন্ত পুণ্যতম সময়। প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে তর্পণ করতে হবে করোনা-বিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে৷ তবে স্পষ্ট নয়, বিধি মেনে তর্পণ আদৌ সম্ভব কি’না!

মহালয়া অথবা দুর্গাপুজো নিয়ে এ বছর যতই চর্চা হোক, শারদীয়া উৎসবের সূচনা হয় বিশেষ এক আগমনী বার্তায়৷ সেই ১৯৩১ সালে বাঙালির মহালয়ার ভোর হয়েছিল এক কায়েতের ছেলের চণ্ডীপাঠে। সেই ধারা আজও বহমান৷
৮৯ বছর আগের সেদিন দেবীপক্ষের ঊষালগ্নে আকাশ বাতাস অনুরণিত করে শুরু হয়েছিলো ‘আকাশবাণী’র প্রথম প্রভাতী অনুষ্ঠান ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাংলার মানুষের মনে সৃষ্টি করেছিলো এক আলাদা অধ্যাত্ম ভাবরস। কিন্তু এই পথ চলা সহজে হয়নি৷ শোনা যায়, “কায়েতের ছেলে হয়ে চণ্ডীপাঠ করবে! এ কেমন কথা? এতো কানে শোনাও পাপ। সমাজ কী বলবে? লোকে ছিঃ ছিঃ করবে যে”৷ মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী থেকে সরাসরি চণ্ডীপাঠ করবেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, এমন শোনা যেতেই নাকি রেডিও অফিসের চারধারে ঝড় তুলেছিল এসব মন্তব্যই। এ ধরনের মন্তব্য শোনার পর বীরেনবাবু নাকি বিষন্ন মুখে পঙ্কজ মল্লিকের কাছে আবেদন
জানিয়েছিলেন তাঁকে বাদ দেওয়ার জন্য৷ কিন্তু পঙ্কজবাবু নাছোড়। তাঁর একটিই কথা, এবারের মহালয়ার সূর্য উঠবে বীরেন ভদ্রের স্ত্রোত্রপাঠ শুনতে শুনতে।

আরও পড়ুন- গুড়াপে পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’ র জের, দায় পড়ছে তৃণমূলের ঘাড়ে

পঙ্কজ মল্লিকের জেদের কাছে হার মেনে মহালয়ার আগের রাতে সমস্ত শিল্পী আকাশবাণীতে। ব্রহ্মমুহূর্তে স্ত্রোত্র পাঠ শুরু করলেন বীরেন্দ্রবাবু। আস্তে আস্তে ডুবে যেতে লাগলেন মন্ত্রের মধ্যে। তাঁর পাঠের সঙ্গে চলছে স্বর্ণযুগের শিল্পীদের কালজয়ী গান৷ পাঠ এগোচ্ছে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ যেন আর নিজের মধ্যে নেই৷ অন্তিমপর্বে মাতৃ আরাধনায় তিনি যেন অন্য জগতে। শোনা গিয়েছে, তখন বীরেন ভদ্রের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শরতের শিশিরের মতো৷ বাঙালি আচ্ছন্ন হয়ে শুনছেন সেই পাঠ।

সেই মুহুর্ত থেকে আর কেউ জানতে চাননি, যিনি পাঠ করলেন তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান না কায়েতের ছেলে! হৃদয়মথিত ওই আকুতিতে আজকের শ্রোতারাও কি বাক্যিহারা হননা ? সেদিন থেকে প্রতিটি মহালয়ার সূর্য উঠেছে ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে মঙ্গল শঙ্খ’ শোনার পর৷ মাঝে এক বছর অবশ্য মহানায়ক উত্তমকুমার এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো৷ আর ওই একবারই আপামর বাঙালি প্রত্যাখ্যান করেছিলো উত্তমকুমারকে৷

ভাগ্যিস সেদিন নিজের জেদ দেখিয়েছিলেন পঙ্কজ মল্লিক !

আরও পড়ুন- ভারতের নতুন সংসদ ভবন তৈরির বরাত পেল টাটা গোষ্ঠী

Related articles

২৪ ঘণ্টা পার: উত্তরপ্রদেশে পাথরখনি ধসে আটকে ১৫ শ্রমিক! মৃত ২

নিয়ম না মেনে খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানো। তার জেরে বড় সড় ধস উত্তরপ্রদেশের শোনভদ্রের পাথর খনিতে (stone quarry)। শুক্রবার...

লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণস্থলে সেনা কার্তুজ উদ্ধার! উৎস নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা 

দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় (Car blast near Red fort) এবার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এল। রবিবার...

বিহারে হঠাৎ বাড়ল ৩ লক্ষ ভোটার! কমিশনের তথ্যেই কারচুপি প্রমাণিত

বিহার নির্বাচনে বিজেপির অস্ত্র নির্বাচন কমিশন। বারবার নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলি সেই অভিযোগেই সরব ছিল। বিহারে এসআইআর (Bihar...

বাংলাদেশের জেলে কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীর রহস্যমৃত্যু, পরিকল্পনা করে খুন! অভিযোগ পরিবারের

'ভুলবশত' বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জলসীমা (Bangladesh water border) অতিক্রম করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছিল কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী। ৩২ বছরের বাবলু...
Exit mobile version