Thursday, May 22, 2025

ভক্তি নয়, রাগ করেই বারোয়ারি দুর্গা পুজো করতে শুরু করেন ১২ জন বন্ধু

Date:

Share post:

বাংলার দুর্গাপুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, আজকের এই বারোয়ারি পুজোর প্রচলন হয়েছিল প্রায় ৪০০ বছর আগে। বাংলায় তখন রাজ করছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ব্রিটিশরা পুরোপুরি নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেনি। যদিও, ব্রিটিশদের পা চাটা নব্য বাঙালি বড়লোকদের বড়লোকি, রমরমিয়ে চলছে কলকাতায়৷ দীর্ঘদিনের সামন্ততন্ত্র একটু একটু করে ক্ষয় হতে শুরু করেছে৷ এমনই এক সময় বাংলায় শুরু হয় বারোয়ারি দুর্গাপুজো৷ সালটা ১৭৯০।

শোনা যায়, তখনকার দিনে কলকাতার বাবুদের বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হত। আলোর রোশনাই, ঢাকের আওয়াজে গমগম করত গোটা এলাকা। কিন্তু সেই পুজোয় প্রবেশের অনুমতি ছিল না জনসাধারণের। শুধুমাত্র অতিথিরাই ঢুকতে পারতেন সেখানে। দরজায় চাবুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকত মস্ত গোঁফধারী দারোয়ান। বাইরের কেউ ঢুকতে গেলেই, পিঠে পড়ত চাবুকের বাড়ি। এই নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, দুঃখের অন্ত ছিল না। বচ্ছরকার দিনে, তাঁরা মায়ের মুখ টুকুও দেখতে পেতেন না। ওই সময়ই, এমন এক শরতের বিকেলে, ১২ জন বন্ধুর আলোচনায় উঠে এল বাবুদের বাড়ির পুজোর প্রসঙ্গ। স্বভাবতই, ক্ষোভ উগরে দিলেন সকলেই। আর সেই ক্ষণেই সকলে মিলে ঠিক করলেন, নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ঘরে আনবেন মা-কে। আর যেমন কথা, তেমন কাজ। সেই থেকেই হুগলির গুপ্তিপাড়ায় প্রথম শুরু হল বারোয়ারি পুজো। যদিও অনেকের মতে জায়গাটির আসল নাম গুপ্তবৃন্দবন পাড়া।

আরও পড়ুন : করোনার কারণে দিল্লিতে সর্বজনীন দুর্গাপুজোয় অনুমতি নয়

“বারো” জন বন্ধু বা “ইয়ার” মিলে শুরু করেছিলেন বলে, এর নাম হয় “বারোইয়ারি” পুজো। যদিও পরবর্তীকালে লোকমুখে “বারোইয়ারি” পুজো অপভ্রংস হয়ে, হয়ে যায় “বারোয়ারি” পুজো। শোনা যায়, পুজার পৌরহিত্য না করার জন্য ব্রাহ্মণদের চাপ দেওয়া হয়েছিল। তখন পুজো সম্পন্ন করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন এক নবীন ব্রাহ্মণ।

আরও পড়ুন : শারদীয়া ডিজিটাল ইম্প্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড: জমবে সোশ্যাল মিডিয়ার পুজোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

এই ভাবে ধীরে ধীরে, একক উদ্যোগের দুর্গাপুজো পরিবর্তিত হয় একাধিক জনের পুজোতে। বিত্তবানদের বাড়ি ছেড়ে সর্বসাধারণের হয়ে ওঠে দুর্গা পুজো। এটি শুধুমাত্র উৎসব ছিল না, ছিল সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে একরকম বিদ্রোহ। গুপ্তিপাড়ার পুজোকে অনুসরণ করে পরবর্তীকালে, মফস্বল এলাকাগুলোয়, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও জনপ্রিয় হয় এই বারোয়ারি পুজো।

গ্রামে গঞ্জে বারোয়ারি পুজোর প্রচলন হলেও, শহর কলকাতায় এর আঁচ এসে পৌঁছতে লেগেছিল আরও প্রায় ১০০বছর। ১৮৩২ সালে, কলকাতায় প্রথম বেশ ঘটা করে শুরু হয়েছিল বারোয়ারি পুজো। পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ। কিন্তু কিছু বছর পর, আর্থিক অনটনের কারণে পুজো বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিন্তু এত সহজে হাল ধরতে রাজি ছিলেন না স্থানীয় মানুষজন। প্রথমেই এগিয়ে আসেন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলে আদিগঙ্গার তীরবর্তী বলরাম বসু ঘাট রোডের বাসিন্দারা। এলাকার কয়েকজন যুবক ও ব্যবসায়ীরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভবানীপুর সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভা’। তাঁদের উদ্যোগেই চাঁদা তুলে সর্বজনীন দুর্গা পুজো আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বারোয়ারি পুজো হয়ে ওঠে সর্সাধারণের পুজো, সর্বজনীন পুজো। সালটা ১৯১০।

সেই প্রথম কলকাতা শহরের এক বারোয়ারি পুজো সর্বজনীন দুর্গো পূজা হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর, ১৯১১ সাল থেকে শুরু হয় শ্যামপুকুর আদি সার্বজনীন দু্র্গোৎসব, শ্যামবাজারের সিকদার বাগান এবং ১৯১৯ সালে নেবুবাগানে ( বর্তমানে বাগবাজার সার্বজনীন ) শুরু হয় পুজো।

সাবেকি রীতি বজার রেখেই এই মা’কে পুজো করা হত মণ্ডপে। থিম পুজোর প্রচলন ছিল না তখন। তা সত্ত্বেও, বাংলার বিশেষ করে কলকাতার মাটিতে পরাধীন ভারতের পুজোয় একটাই থিম ছিল -তা হল স্বাধীনতা।

spot_img

Related articles

প্রয়োজনে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে দিল্লিতে টিম! নায্য পাওনা আদায়ে এবার কড়া অবস্থানের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও বাংলা জুড়ে চলছে উন্নয়নের জোয়ার। কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য দেয়নি। এমনকী বাংলা থেকে জিএসটি তুলে নিয়ে...

পথশ্রী প্রকল্পে গ্রামীণ রাস্তায় ঢালাও উন্নয়ন! উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে খতিয়ান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী 

১৪ বছরের রাজ্যে এক লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৪৭ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। পথশ্রী প্রকল্পে ৩৮ হাজার...

কাশ্মীরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল উপত্যকায়, বৈঠক ওমর আবদুল্লার সঙ্গে 

পহেলগাম সন্ত্রাস হামলার পরবর্তী সময়ে কাশ্মীরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পৌঁছাল উপত্যকায়। সীমান্তবর্তী...

পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজর মুখ্যমন্ত্রীর

বাংলার বিভিন্ন শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। বাংলায় ফিরে এলে তাদের যাতে কোনওরকম...