Saturday, November 8, 2025

দর্শকবিহীন পুজোর বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে চিকিৎসক কুণাল সরকার

Date:

Share post:

“হেঁটে নয়, নেটে…”! এইটা ট্যাগ লাইনটাই এবার বোধহয় কলকাতার দুর্গাপুজোর “থিম লাইন” হতে চলেছে। এবং যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত এমন এক বৈপ্লবিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন কলকাতার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক সজল ঘোষ। তার এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাতে এবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো প্রাঙ্গণে হাজির বিশিষ্ট চিকিৎসক কুুুণাল সরকার।

সন্তশ মিত্র স্কোয়ারে এসে কুণাল সরকার জানালেন, “বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর তার মধ্যে সেরার সেরা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো। আমি দীর্ঘ ২৪ বছর বাদে এবার পুজোয় কলকাতায় আছি। কিন্তু যেখানেই থাকি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর খবর রাখি। তবে এবার তারা যে বৈপ্লবিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পথ দেখিয়েছে, আমার মনে হয় সেই পথে হেঁটে এবার প্রতিটি পুজো কমিটিকে এমন দর্শকহীন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। জানি বিষয়টা সহজ নয়, তবুও মহামারির হাত থেকে বাঁচতে এইটুকু ত্যাগ আমাদের সকলকেই স্বীকার করতে হবে। কারণ, উৎসবের আগে মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান। আমি বিশ্বাস করি, এবার যদি আমরা পুজোর চারদিন বাড়ি বসে উৎসব উপভোগ করি, তাহলে আগামী বছরগুলোতে আরও ভালো দুর্গাপুজো আমরা দেখতে পাব। কারণ, কলকাতার দুর্গাপুজোয় যে ভিড় বা জন বিস্ফোরণ হয়, তাতে পুজো পরবর্তী এই শহর বা বাংলায় করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি হারে বাড়বে। তাই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের মতো সকলেরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। শুধু পূজা কমিটি নয়, সাধারণ মানুষেরও বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।”

পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, “আমাদের সকলেরই মন খারাপ লাগছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন ছিলো। তবে উৎসবের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য আমাদের কাছে অনেক বেশি বলে মনে হয়েছে। আমরা জানি আমাদের পুজোর উপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কিন্তু আমরা কথা দিচ্ছি, এই বছরটা একটু ত্যাগ করুন, আগামী বছর আরও বড় উপহারের ডালি নিয়ে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার আপনাদের সামনে হাজির হবে। এবার হেঁটে নয়, নেটে দেখুন আমাদের পুজো। কথা দিচ্ছি কেউ বঞ্চিত হবেন না। পুজোর চারদিন হাতে মোবাইলটা রাখুন। প্যান্ডেলের প্রতিটি কোণ থেকে শুরু করে প্রতিমা এবং সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের প্রতিটি অংশের প্রতিটা মুহূর্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরব আমরা।”

পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ ঘোষ থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ নাগরিক ও মহিলারাও দর্শকহীন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, এবার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর থিম উত্তরাখণ্ডের বিখ্যাত বদ্রিনাথ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে। শিল্পী বিপ্লব রক্ষিতের হাত দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। যা কার্যত শেষের পর্যায়। প্রতিমা শিল্পী কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী মিন্টু পাল।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে জনস্বার্থে বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার লেবুতলা পার্ক। এবার ৮৫তম বর্ষে  এই পুজো মণ্ডপে কোনও দর্শকের প্রবেশাধিকার থাকছে না। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের এবারের পুজো হবে সম্পূর্ণ দর্শক বিহীন। গতকাল, এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন পুজো কমিটির সম্পাদক সজল ঘোষ। তিনি জানিয়েছিলেন, “রাজ্য সরকার যেভাবে এই মারাত্মক মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আমরা আশা করব অন্যান্য পুজো কমিটিগুলিও আমাদের সিদ্ধান্তের শরিক হবেন এবং সাধারণ মানুষ আমাদের অসুবিধার কথা বুঝবেন। তাই এবার তাদের স্লোগান ”হেঁটে নয় নেটে পুজো দেখুন”। আর তাঁদের এই সাহসী সিদ্ধান্তকেই কুর্নিশ জানাতে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। এছাড়াও ছিলেন চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মজুমদার, সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ দত্ত এবং
অনির্বাণ দোলুই-সহ আরও অনেকে। তাঁরা প্রত্যেকে এই সিদ্ধান্তকে বিজ্ঞানসম্মত বলেই দাবি করেছেন।

spot_img

Related articles

মতুয়া-ফায়দা লোটার চেষ্টা: অনশন মঞ্চে হঠাৎ হাজির বাম-কংগ্রেস!

বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরোধিতা করাই বাংলার বাম নেতৃত্ব ও কংগ্রেসের নেতা কর্মীদের স্বভাবসিদ্ধ। বিরোধিতার পর্যায়টা এক এক সময়ে...

জন্মদিনে চরম অসৌজন্য! অভিষেককে নিয়ে বিজেপির পোস্টে সরব নেটদুনিয়া

বাংলায় বরাবর সৌজন্যের রাজনীতি দেখিয়ে এসেছে সব রাজনৈতিক দল। বাম আমলে সিপিআইএম নেতা থেকে তৃণমূল বা কংগ্রেস নেতাদের...

আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা, অনুশীলনই বন্ধ রাখল মোহনবাগান

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে মোহনবাগানের(Mohun Bagan) সিনিয়র দলের অনুশীলন। খবর অনুযায়ী, আইএসএল নিয়ে প্রবল অনিশ্চয়তা। টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়...

জন্মদিনে মানুষের ভালবাসা মনে করিয়ে দেয় কর্তব্য: ভিড়ে মিশে গেলেন অভিষেক

সকাল হওয়ার অপেক্ষা নয়। রাত ১২টা বাজার অপেক্ষায় ছিল বাংলার বিপুল জনতা। জননেতা, তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক...