Monday, December 1, 2025

উত্তরবঙ্গের সভা বুঝিয়ে দিল বিজেপিতে মুকুলের জায়গা ঠিক কোথায়, অভিজিৎ ঘোষের কলম

Date:

Share post:

অভিজিৎ ঘোষ

মুকুল রায়কে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপির দিল্লির নেতারা? উত্তরবঙ্গে দলের সভা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে মুকুল মঞ্চে ছিলেন, কিন্তু এক বর্ণও বলেননি। বলা ভালো, তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অসুস্থ ছিলেন। তিনি মঞ্চে তাহলে নিশ্চিতভাবে প্রথম বক্তা হতেন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, মুকুল রায়কে কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি?

মুকুল রায় সম্বন্ধে নানা উপমা তার ঘনিষ্ঠ মহল দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর একটি নির্বাচনেও তাঁর ক্যারিশমার প্রকাশ ঘটেনি। যে কারণে রাজ্য বিজেপিকে ভরসা করতে হয়েছে দিলীপ ঘোষের উপর। আর তাই বিধানসভা উপনির্বাচনে ৩-০ তে হারলে রাজ্য সভাপতিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে দল, দলের সমর্থকরা। ফলে তিনি তাঁর ‘নন্দ ঘোষ’ হওয়া প্রমাণ করছে, তিনিই পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখ।

বিজেপির একটি মহল বলছে মুকুল রায়ের নানাবিধ সমস্যা।

এক, তিনি তৃণমূলে অন্যতম শীর্ষস্থানে ছিলেন। এখানে এসে ভেবেছিলেন সেই অধিকারই পাবেন। কিন্তু তা হয়নি। সেই ভাবনা থেকে তিনি কয়েক যোজন দূরে রয়েছেন।

দুই, বিজেপির সব গোষ্ঠী নেতার সঙ্গে মুকুলের মোটেই সদ্ভাব নেই। তিনি যে আসলে কৈলাশ বিজয়বর্গীর বাই প্রোডাক্ট, তা নিজেই বারবার প্রমাণ করছেন। যেখানেই যান কৈলাস আর মুকুল। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়ার পর এই জুটি দেখানোটা বোধহয় মুকুলের ‘বাধ্যতামূলক’ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুকুল বুঝতে পারছেন না, কৈলাসের সঙ্গে যত থাকছেন ততো তাঁর পয়েন্ট কমছে। কারণ, বাংলার মানুষ মোটেই কৈলাসের রাজনৈতিক হাব-ভাব আচার-আচরণ পছন্দ করছেন না। ওসব হিন্দি বলয়ে চলে।

তিন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মুকুল তার গোষ্ঠী বাড়াতে পারেননি। তৃণমূলে ছিলেন যাদের সঙ্গে বিজেপিতেও তাদের সঙ্গে। সেই অনুপম, সৌমিত্র, অর্চনা, সব্যসাচীরা। ফলে মুকুল রায়ের নামের পাশে সর্বভারতীয় বিজেপি নেতার তকমাটা বড্ড খাটো লাগে। মনে হয় তিনি এক গোষ্ঠীর নেতা।

চার, মুকুল মানেই সারদা-নারদা। বিজেপিতে গিয়ে আপাতত নিজেকে ‘সেফ’ রাখলেও তাঁকে ঘিরে এসব প্রশ্ন উঠবে, এবং উঠছে। তাতে দলের বিড়ম্বনা বাড়ছে বই কমছে না।

পাঁচ, কৈলাসের পীড়াপীড়িতে এবং নাছোড়বান্দা মনোভাবের কারণে মুকুল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হতে পারেন, কিন্তু নাড্ডাদের খাতায় মুকুল রায় নামটি মোটেই যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে আসল কর্মক্ষেত্রে। শিলিগুড়ির সভায় যেখানে দিলীপ ঘোষ অনুপস্থিত ছিলেন, সেখানে নিশ্চিতভাবে মুকুল রায়কে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। আর এই ঘটনাই প্রমাণ করছে বিজেপিতে এখনও মুকুল ‘সেকেন্ড গ্রেড সিটিজেন’। দলেরই একজন বললেন, মুকুলকে কৈলাস যতই ‘চাণক্য’ বানানোর চেষ্টা করুন না কেন, এই চাণক্য যে ‘মেড ইন চায়না’, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন-#বয়কটমোদিভাষণ: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বয়কটের ডাক

spot_img

Related articles

এখানে স্লোগান নয়: শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদের কণ্ঠরোধের ‘হুমকি’ মোদির!

বিহার নির্বাচনের অজুহাত দিয়ে বিরোধী দলগুলির মুখবন্ধ করার পন্থা যে স্বৈরাচারী মোদি সরকার বরাবর নিয়ে আসে, তার ব্যতিক্রম...

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চনার নজির, রাজ্যে বন্ধ ১ কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট

ঘটা করে দেশে ব্যাপক ব্যাঙ্কিং পরিষেবার উদাহরণ তুলে ধরতে দেশজুড়ে জনধন অ্যাকাউন্ট খুলেছিল মোদি সরকার। আবার ১০ বছর...

বিয়ে তো হল, হানিমুন কবে? এবার উত্তর দিলেন দিলীপ ঘোষ

ঘটা করে সকলের নজর কেড়েই বিয়েটা হয়েছিল। সেই সময়ই অপকটে বলেছিলেন - বিয়ে হল। হানিমুনও (honeymoon) যথা সময়ে...

পিছোল এসআইআর-এর সময়সীমা! ‘তাড়াহুড়ো’র বিরোধীতা করে কমিশনকে আক্রমণ চন্দ্রিমা–পার্থর

এসআইআর প্রক্রিয়ার নির্ঘণ্ট নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক চাপানৌতনের মধ্যে অবশেষে এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ-সহ গোটা...