Thursday, December 25, 2025

বড়িশা ক্লাবের “পরিযায়ী” দুর্গা প্রতিমা সংরক্ষণের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

Date:

Share post:

করোনা আবহে এবার দুর্গাপুজোয় বেহালা বড়িশা ক্লাবের প্রতিমা নজর কেড়েছে সকলের। সাম্প্রতিক, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শিল্পশৈলীর অনবদ্য নিদর্শন রেখেছিলেন থিম শিল্পী রিন্টু দাস। তাঁর হাত দিয়ে গড়ে ওঠা বড়িশা ক্লাবের দুর্গার পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের রূপ ভাইরাল হয়েছে সর্বত্র।

এবার সেই “পরিযায়ী” প্রতিমা সংরক্ষণের ভাবনা। এই মাতৃমূর্তি এবার সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। প্রতি বছর শহরের সেরা প্রতিমাগুলিকে রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে থাকা “মা ফিরে এল” প্রদর্শন কক্ষে সংরক্ষণ করা হয়। নিউটাউনের ইকোপার্কেও রয়েছে এমন ব্যবস্থা। তবে এ বছর মহামারীর জেরে সেভাবে আলাদা করে নতুন ধরনের বিগ্রহ তৈরি হয়নি। যা হয়েছে, তা সবটাই মাটির। তবে মাটির প্রতিমা বছরভর রাখা সমস্যার। এবার বড়িশা ক্লাবের এই প্রতিমা তৈরি হয়েছে ফাইবার গ্লাসে। সূত্রের খবর, পুজো উদ্বোধন করতে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে ধরেছিল এই মাতৃরূপ।

কঠিন সময় কেড়ে নিয়েছে কাজ। পেটে খিদে। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ। তবুও সংগ্রামী স্বভাবে ছেদ পড়েনি। লড়াইয়ের মানসিকতাও অটুট। আসলে তিনি মা। সন্তান অভুক্ত থাকলে মা কি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে! করোনা ।মোকাবিলায় দীর্ঘ লকডাউনের জেরে দেশ গড়ার কারিগরদের দুর্দশা দেখেছে ভারতবাসী। আসলে এদেশের শ্রমিকরা কতটা অসহায়, চোখের সামনে দেখেছে দেশবাসী। যাঁদের পরিশ্রমের উপর ভর করে এই দেশের উন্নতির চাকা গড়াচ্ছে তাঁরাই থাকে অভুক্ত। সরকার আসে, সরকার যায়। উৎসব আসে উৎসব যায়, বছর ঘুরে যায়। কিন্তু এদেশে শ্রমিকদের কপাল ফেরে না। শ্রমিক মায়ের সন্তান আধপেটা খেয়েই থাকতে হয়।

এবার দুর্গাপুজোয় পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের এই লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে বড়িশা ক্লাব। বেহালার এই ক্লাব পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের রূপে দেবী দুর্গাকে উপস্থাপিত করবে। বড়িশা ক্লাবের এবারের থিম ছিল নাম “ত্রাণ”। অর্থাৎ, ত্রাণের খোঁজে লকডাউনের সময় এদেশের শ্রমিকদের অবস্থা কতটা করুণ ছিল, সেটাই তুলে ধরা হয়। এমন ভাবনা যাঁর মাথা থেকে এসেছে, সেই শিল্পী রিন্টু দাসের কথায়, ”খিদে পেটে, চড়া রোদ মাথায় নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক মাকে হাজার কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছে। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে মা বদ্ধপরিকর ছিল। তাই হাজার কষ্ট উপেক্ষা করেও খাবারের খোঁজ চালিয়ে গিয়েছে। এমনকী একটু খাবার জলের জন্যও লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের কত কষ্ট করতে হয়েছে। তাই এই ভাবনা।”

বড়িশা ক্লাবের মায়ের হাতে কোনও অস্ত্র ছিল না। কোলে সন্তান আর হাতে ছিল ত্রাণের থলি। রিন্টু দাস বলেছেন, ”লকডাউন-এর সময় হাজার হাজার কিলোমিটার হাঁটতে দেখেছি পরিযায়ী শ্রমিকদের। কত অসহায় মা কোলে শিশু নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে। রোদ, ঝড়, জল সব কিছু উপেক্ষা করেছে। তখন থেকেই এমন একটা থিমের কথা মাথায় এসেছিল।” শিল্পী রিন্টু দাসের ভাবনায় ৩২ তম বর্ষে বেহালার বড়িশা ক্লাবের পরিযায়ী মা ইতিমধ্যেই নেটিজেনদের কলমে সুপারহিট। কোলের সন্তানটি কার্তিক। গণেশ বসে অসুরের উপর। অর্থাৎ অসুর বিনাশ করলে আবার ব্যবসায়ীরা সিদ্ধিলাভের মুখ দেখবেন। আবার কাজ পাবেন পরিযায়ী মা।

spot_img

Related articles

ক্রিসমাসে রক্তাক্ত ঢাকা, চার্চ টার্গেট করে বিস্ফোরণে মৃত ১

বড়দিনের উৎসব শুরু হবার আগেই বুধবার সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণে রক্তাক্ত বাংলাদেশের ঢাকা (Blast in Dhaka, Bangladesh)। মগবাজার ফ্লাইওভারে...

ক্রিসমাসে ঝলমলে পার্কস্ট্রিট, সান্টা টুপি মাথায় বড়দিনের সকালে পিকনিক মুডে বাঙালি

দেখতে দেখতে বছর প্রায় শেষ হতে চলল। ক্রিসমাসের মধ্য দিয়েই যেন বর্ষবরণের আনন্দ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। বড়দিনের...

সময়ের দেরিতেই বাঁধা প্রেমের গল্প-২৫ দিনের মাইলস্টোন ছুঁয়ে হলে ‘দেরি হয়ে গেছে’

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় নস্টালজিয়া, আবেগ আর রহস্যের মিশেলে দর্শকদের মন জয় করে প্রেক্ষাগৃহে টানা ২৫ দিনের বেশি সময় ধরে সফলভাবে...

নতুন তিন বিমান সংস্থা: ইন্ডিগোর একচেটিয়া দখল ভাঙছে দেশের আকাশে 

দেশের আকাশপথে একচেটিয়া দখল ভাঙতে যাচ্ছে। ইন্ডিগোর বিমান বাতিল ও যাত্রী অসুবিধার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন তিনটি সংস্থাকে...