দার্জিলিং অথবা ডুয়ার্সে ফিরতে চান গুরুং, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছে প্রকাশ বিনয়-অনীতের

কিশোর সাহা

বিমল গুরুংকে নিয়ে ফের সরগরম দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনীতি। কারণ, গুরুং অনুগামীরা অনেকেই একান্তে দাবি করছেন, সব ঠিকঠাক থাকলে ১০ নভেম্বর অথবা ধনতেরাসের দিন মানে ১২ নভেম্বর গুরুং দার্জিলিঙে ফিরতে পারেন। সে কথা মাথায় রেখে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আগেভাগেই কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বিনয় তামাং ও অনীত থাপারা। বিনয়-অনীতদের সূত্র দাবি করছে, আগামী ৩ নভেম্বর কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে তৈরি হচ্ছেন জিটিএ-তে ক্ষমতাসীন মোর্চার ওই দুই নেতা।


৩ নভেম্বরই কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চের অবকাশকালীন বেঞ্চে জামিনের আবেদনের শুনানি চেয়ে আর্জি জানাবেন গুরুংয়ের আইনজীবীরা। তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরের ৩, ৫ এবং ৭ তারিখ সার্কিট বেঞ্চের অবকাশকালীন বেঞ্চ খোলা থাকার কথা। হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ ও কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তার মতে, সম্প্রতি কলকাতায় গুরুং যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন তার সিডি দাখিল করা হতে পারে। তা দিয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানানো হতে পারে যে, পুলিশ খুঁজলে গুরুং কলকাতায় প্রেস কনফারেন্স করে বহাল তবিয়তে বেরোতে পারতেন না। ফলে, গুরুংকে জামিন দিলে তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটার কথা নয় বলে ওই আইনজীবী ও প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের একাংশ মনে করেন। তাঁরা অনেকেই জানান, সাম্প্রতিক যা ঘটনাক্রম তাতে গুরুংয়ের জামিন পেতে খুব অবসুবিধে হওযার কথা নয়।

আরও পড়ুন : রাজ্যপালের সফরে গুরুংয়ের দল ভাঙানোর চেষ্টা করবে বিজেপি, আশঙ্কা অনুগামীদের
এই অবস্থায়, পাহাড়ের রাজনীতির রাশ পুরোপুরি ফের গুরুংয়ের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা এবং বিনয় তামাং ও জিটিএ-এর বর্তমান কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান অনীত থাপাদের হাতেই বা কতটা থাকতে পারে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সব মহলেই। সে জন্য বিনয়-অনীত জুটি নিজেরা কলকাতায় গিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিনয়-অনীতদের কাছের লোকজনদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সে জন্যই তাঁরা দুজনে আগামী ৩ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চাইছেন।


পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের রাজনীতিতে শোরগোল দেখে আসরে নেমেছে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিও। প্রকাশ্যে গুরুং বিরোধিতা করলেও একান্তে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির অনেকেই মানছেন, এখনও গুরুংই সুবাস ঘিসিংয়ের পরে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের প্রধান মুখ। গত তিন বছর ধরে পালিয়ে বেড়ালেও তাঁর জনসমর্থন এতটুকুও যে কমেনি তা আগের লোকসভা ভোটেই প্রমাণ হয়েছে বলে তাঁরা অনেকেই দাবি করেন। শুধু তাই নয়, সিপিএমের একাংশ চান, গুরুং যাতে জামিন না পান সে জন্য প্রয়োজনে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হোক। বিজেপি সূত্রেও কয়েকজন দাবি করেন, ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির মাধ্যমে পুরানো মামলায় গুরুংকে বেকায়দায় ফেলা যায় কি না তা নিয়ে খোঁজখবর হচ্ছে। অথচ, তিন বছর আগে পাহাড়ে গোলমালের কারণে য়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়েছিল তার কোনটিই এনআইএকে হস্তান্তর করা হয়নি বলে গুরুং অনুগামীদের কয়েকজন খবর পেয়েছেন। উপরন্তু, মদন তামাং হত্যা মামলায় গুরুংয়ের নাম চার্জশিটেই নেই। তাই গুরুং দেওয়ালির আগে ফিরবেন বলে তলে তলে প্রচারে নেমেছেন তাঁর অনুগামীরা।

আরও পড়ুন : ১২ বছর ছবি টাঙিয়ে রাখা হোক, সরকারি আধিকারিকদের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট নীতিন
শেষ অবধি কী হবে তা সময়ই বলবে। তবে এটা বলাই যায়, তিন বছর আত্মগোপন করে থাকলেও শতাধিক মামলায় অভিযুক্ত গুরুংয়ের ফেরার অপেক্ষায় পাহাড়-তরাই ও ডুয়ার্সের রাজনীতি এখন জমজমাট।

Previous articleগলা কেটে নৃশংস খুন, ফ্রান্সে গির্জা চত্বরে নিহত মহিলা-সহ ৩
Next articleস্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক? গুলি করে খুনের চেষ্টা স্বামীর