মোদির গুণ গেয়ে উত্তরবঙ্গে একমাসের সফরে রাজ্যপাল, বিরোধীদের মতে রাজনীতি

কিশোর সাহা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুণগান গেয়ে নানা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে যেন উত্তরবঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রচারে নামলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মত রাজনৈতিক মহলের। শনিবার, বিকেলে রাজ্যপাল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পা দেওয়ার পরে যে লম্বা সাংবাদিক বৈঠক করেছেন তা শোনার পরে কেউ এমন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেউ আবার সরাসরি রাজ্যপালের বিজেপির হয়ে উত্তরবঙ্গে একমাস ব্যাপী প্রচারে নামার শুরু বলেও কটাক্ষ করেছেন। শুধু তৃণমূল নয়, বাম-কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গের কয়েকজন প্রবীণ নেতা একান্তে আক্ষেপ করেছেন, যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন রাজ্যপাল তাঁরা দেখেননি।

শুধু তাই নয়, এদিন রাজ্যপাল ফের রাজ্যের আইনশৃঙ্খা পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন। রাজ্যের আইএএস-আইপিএসদের একাংশ রাজনৈতিক কর্মীদের মতো আচরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি এটাও দাবি করেছেন, পাবলিক সার্ভেন্টদের রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। না হলে গণতন্ত্রের মর্যাদাহানি হয়। রাজ্যপালের বক্তব্য শোনার পরে বাম-কংগ্রেস ও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কয়েকজন প্রবীণ নেতা জানান, উনি সাংবিধানিক পদে বসে যেভাবে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের গুণগান করছেন, একটি দলের সমালোচনা করছেন তা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা শোভন সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

এদিন রাজ্যপাল একমাসের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরের শুরুতে ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রসঙ্গে টেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দীপ্ত নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

রামমন্দিরের প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘ সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানান। এটাও জানিয়ে দেন, ভারতের সংবিধানের মধ্যে যে কোনও সমস্যার সমাধান রয়েছে। এর পরেই উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলের দীর্ঘদিনের নানা দাবি ও সমস্যার সমাধানও যে সংবিধানের মধ্যেই সম্ভব সেটাও দাবি করেন।

তবে আলাদা গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি কিংবা কামতাপুরীদের পৃথক রাজ্যের দাবি কিংবা গ্রেটার কোচবিহারপন্থীদের রাজ্যের মর্যাদা দাবির প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলেননি রাজ্যপাল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকে মনে করছেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি উত্তরবঙ্গের পাহাড় সমতলের ওই সব দাবির পক্ষে থাকা সংগঠন ও নানা সম্প্রদায়কে কাছে টানতেই এবার রাজ্যপালকে আসরে নামাতে চাইছে। তাঁদের অনেকরই অনুমান, তাই রাজ্যপাল এক মাস ধরে থাকবেন আর উত্তরবঙ্গের নানা এলাকার মানুষের দাবি-সমস্যার কথা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে বারেবারেই জানাচ্ছেন।

বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতাদের কয়েকজন জানান, রাজ্যপালের সফর পুরোপুরি প্রশাসনিক। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে সব বিষয়েই খোঁজখবর নিতে পারেন। বিজেপি নেতাদের মতে, রাজ্যপাল কখনও দলীয় রাজনীতিবিদদের মতো প্রচার করছেন বলা ঠিক নয়। তাঁদের মতে, এটা অপপ্রচার।

কিন্তু, রাজ্যপাল সফরের শুরুর দিন থেকেই যেভাবে চালিয়ে ব্যাট করতে শুরু করেছেন তাতে তিনি রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করতে যে বদ্ধপরিকর- সেটা রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন। এবার দার্জিলিঙে গিয়ে রাজ্যপাল কতটা আগ্রাসী ব্যাটিং করেন সেটাই দেখার বিষয় বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেকে জানান।
উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতারা এখনই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন। তবে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে শাসকদল।

আরও পড়ুন- হাওড়া স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভের জেরে তড়িঘড়ি লোকাল ট্রেন চালাতে রেলকে চিঠি রাজ্যের

Previous articleহাওড়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শর্ত সাপেক্ষে লোকাল ট্রেন চালাতে রেলকে চিঠি রাজ্যের
Next articleবিষ্ণু অপহরণ-খুন কাণ্ডে জালে আরও এক