পুলিশকর্তাকে ছিনতাইকারী ভেবে নাক ফাটালেন সাব ইন্সপেক্টর

খায়রুল আলম, ঢাকা: পুলিশের এক পরিদর্শকের নাক ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার এক এসআই-এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তাকে হাতকড়া লাগিয়ে থানায় নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়েছিল। ঘটনাটি কয়েক দিন আগের হলেও তা চেপে গিয়েছিলেন নগর পুলিশের কর্মকর্তারা। তবে এতদিন পর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের এবং ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশের ভেতরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে কোতোয়ালি থানার রেয়াজউদ্দিন বাজারের প্যারামাউন্ট সিটির সামনে এই ঘটনা ঘটে বলে ওই পরিদর্শক অভিযোগ করেছেন। তার আগে গত ২২ অক্টোবর রেয়াজউদ্দিন বাজারের এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ পরিচয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।

তিন দিন পর রেয়াজউদ্দিন বাজারে পারিবারিক বাজার করতে গিয়েছিলেন নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসাইন।তখন তাকেই ছিনতাইকারী সন্দেহ করে ওই কাণ্ড ঘটান কোতোয়ালি থানার এসআই রবিউল ইসলাম।আফতাব চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান, বোমা উদ্ধারসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্তে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, পেয়েছেন আইজিপি ব্যাজও।

আরও পড়ুন:তেজস্বীতেই নড়বড়ে মোদি, কী হবে মমতায়? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

এসআই রবিউলের হাতে মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দেন পরিদর্শক আফতাব। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী গত ২৫ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পরিচিত এক ব্যক্তিকে নিয়ে রেয়াজউদ্দিন বাজারের গোলাম রসুল মার্কেটে যান আফতাব। তিনি ছিলেন সাদা পোশাকে। সেখান থেকে বাজার করে তারা প্যারামাউন্ট সিটি মার্কেটের নিচে যান।

লিখিত অভিযোগে আফতাব বলেন, সেখানে দাঁড়ানো অবস্থায় সাদা পোশাকে থাকা এসআই রবিউল দলবল নিয়ে তাকে হাতকড়া লাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি তার সঙ্গে থাকা ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের পরিচয় দিলে এসআই রবিউল তার নাকে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেন।আফতাব বলেছেন, তাকে হাতকড়া লাগানো এবং রক্তাক্ত করার পর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা গেইট লাগিয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে এসআই রবিউল কোতোয়ালি থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) সাথে টেলিফোনে নিজে এবং আফতাবকে কথা বলতে দেন। এ সময় পরিদর্শক (তদন্ত) নির্দেশ দেওয়ার পর হাতকড়া খুলে দেন এসআই রবিউল। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আফতাব লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ঘটনার কিছু না জানা সত্ত্বেও তাকে সিএনজি অটোরিকশায় করে থানায় নেওয়ার পথে এসআই রবিউল ছিনতাই হওয়া টাকা তাকে ফেরত দিতে বলেন, যা তিনি তখনও বোঝেননি। আফতাবের অভিযোগ, থানায় নেওয়ার পর তাকে প্রথমে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে বসিয়ে রেখে এসআই রবিউল তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। পরে ওসির রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার এবং থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওসি ও উপ-কমিশনারও টাকা ফেরত দিতে বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন আফতাব।

তিনি দাবি করেছেন, তখন তিনি জানতে পারেন যে গত ২২ অক্টোবর জনৈক নূর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাই হয়েছে। আফতাবের দাবি, ছিনতাইয়ের শিকার নূর মোহাম্মদের ছেলে ও স্বজনরা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে এবং তার সঙ্গে থাকা হাসানকে নিয়ে পুলিশে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে।

আফতাব বলেছেন, তার ও হাসানের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) এবং বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, তারা ছিনতায়ের ঘটনার সময় নিজেদের বাসায়ই ছিলেন। এরপর ছিনতাইয়ের শিকার নূর মোহাম্মদ ও তার স্বজনরা ভুল করে তাদের শনাক্তের কথা স্বীকার করে লিখিত দেন বলে জানান আফতাব।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, “এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পুলিশ সিভিল ড্রেসে ছিল। বিষয়টি আমরা দেখছি।”

পরিদর্শক আফতাবের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনও আমি পাইনি। হয়ত ডেস্কে আসতে পারে। আসলে সামলে নেওয়া হবে।”

Previous articleস্পেশাল ট্রেনে ওঠার দাবি: দফায় দফায় বিক্ষোভ হুগলিতে
Next articleকাটছে না আতঙ্ক, ভূমিকম্পের ৩ দিন পরেও চলছে উদ্ধার কাজ