শহরে পরিবহনমন্ত্রী: মমতার সঙ্গেও কথা হয়, বুঝিয়ে দিলেন শুভেন্দু

“ছড়িয়ে থাকা ফুল দিয়ে মালা গাঁথি, আমি হলাম ভোটের ডক্টরেট!” আজ, সোমবার কলকাতায় এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় পর্বে এবং একান্ত আলাপচারিতায় হাসতে হাসতে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যেও পরিবহন ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর এই কয়েকটি শব্দ খুব তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমি খড়গপুর-কালিয়াগঞ্জে ভোট করেছিলাম। কী ফলাফল হয়েছে সেটা সকলেই দেখেছেন।”

শুভেন্দু তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তার মধ্যে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর কিছু হারানোর নেই। সমাজের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। নিজেকে “গার্হস্থ্য সন্ন্যাসী” বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “আমার তিনটে পেট্রোল পাম্প আছে। নিজেদের বাড়ি আছে। বাবা-ভাই সাংসদের বেতন পান। আমি প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে ভাতা পাই। বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন পাই। একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট রয়েছে। আমরা মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করি। অর্থের কোনও প্রয়োজন আমার নেই। মানুষের জন্য কাজ করাটাই আমার নেশা। আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কাজ করি।”

তবে সাম্প্রতিক কর্মসূচিগুলি থেকে তিনি এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর মন্তব্য, “ওসব মিডিয়ার বাজার গরম করা জল্পনা-কল্পনা। এখনও পর্যন্ত আমাকে কেউ আমার পার্টি বা পার্টির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটিও শব্দ ব্যয় করতে শুনেছেন? শুনবেন না। কারণ, আমি দলের মধ্যে থেকে কিংবা সরকারি পদে থেকে এমন মন্তব্য করতে পারিনি। যাদবপুরের এক সাংসদ ছিলেন, যিনি তৃণমূলে দাঁড়িয়ে, তৃণমূলের টিকিটে জিতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, আবার তখন দলও ছাড়েননি। দলের মধ্যে থেকে দলের বিরুদ্ধে কথা বলা অনৈতিক। তবে আমার বিরুদ্ধে যাদেরকে দিয়ে কথা বলেনো হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে তাঁদের যোগ্যতাও নেই। ভোটও নেই। আমি ছড়িয়ে থাকা ফুল দিয়ে মালা গাঁথি। আমি ভোটে ডক্টরেট।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার কি কথা হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা অবাক হয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী। উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কি কোনও সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হয়, আমি একটি দল করি, সেই দলের সর্বোচ্চ নেত্রী এবং আমি একটি সরকারি পদে আছি, সেই সরকারের শীর্ষে যিনি আছেন তাঁর সঙ্গে আমার কথা হবে না?”

একুশের নির্বাচনে কেমন ফলাফল হতে পারে এ রাজ্যে? শুভেন্দুর কৌশলী বিশ্লেষণ, “২০-২৫ টা আসন বাদ দিয়ে সোজা লড়াই হবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। তবে সামগ্রিকভাবে কী ফলাফল হবে সেটা যে যে রাজনৈতিক দলের যাঁরা যাঁরা ভোট পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। আমি আমার বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামটা বলতে পারি। নন্দীগ্রামে কেউ দাঁত ফোটাতে পারবে না।”

বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত জানিয়েছেন তিনি আর ভোটে লড়বেন না। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “ওনার মনে হয়েছে অন্য দল থেকে বারাকপুরে দাঁড়ালে জিততে পারবেন। তাই হয়তো বলেছেন তৃণমূল থেকে দাঁড়াবেন না। উনি তো শুধু বলেছেন তৃণমূল থেকে দাঁড়াবেন না। অন্য কোনও দল থেকে যে দাঁড়াবেন না, সে কথা তো বললেন নি।”

১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের সমাবেশ নিয়ে শুভেন্দু বলেন, “২০১০ সালের পর থেকে নন্দীগ্রামের সূর্যোদয় নিয়ে শহিদদের সম্মান জানাতে প্রতিবছরই আমি মিছিল করি। সমাবেশ করি। এর মধ্যে আলাদা কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক খুঁজে বের করা বোকামির কাজ।”

তিনি রাজ্যের পরিবহন ও সেচ দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তাহলে সরকারি দফতরে না গিয়ে ময়দানের তাঁবুতে কেন? মন্ত্রী শুভেন্দুর সোজা উত্তর, “আসলে করোনা আবহের মধ্যে ময়দানে পরিবহন দফতরের এই তাঁবু থেকেই সরকারি কাজকর্ম করছি। এখানে কিছুটা লোক কম, নিরিবিলি পরিবেশ। করোনার মধ্যে আমি সমস্ত সরকারি কাজ করার জন্য সপ্তাহে তিনদিন করে এই তাঁবুতে আসি।”

তিনি বিভিন্ন সময়ে বলে থাকেন, সাদাসিদে-অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। বিয়েও করেননি। মানুষের কাজ করতেই ভালোবাসেন বিবাহসূত্রেও আবদ্ধ হননি। তাহলে কোথাও দলনেত্রীর জীবনযাপনের সঙ্গে তাঁর জীবনযাপনের অদ্ভুত মিল আছে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

উল্লেখ্য, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিস্তর আলোচনা ও জল্পনার মাঝে হঠাৎ কলকাতায় রাজ্যের পরিবহন ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। আজ, সোমবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ তিনি ময়দানে পরিবহন দফতরের তাঁবুতে আসেন। তাঁর দফতরের প্রশাসনিকস্তরের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁবুতে বৈঠক করেছেন। তাঁর পরিবহন দফতরের একাধিক আধিকারিক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। জানা গিয়েছে, দফতরের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মন্ত্রীকে দিয়ে সই করাতে এসেছিলেন।

এছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলার শাসক দলের মাঝারিস্তরের দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে তাঁবুর মধ্যে যেতে দেখা যায়। এবং বেশ কিছুক্ষণ পরে তাঁরাও চলে যান। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সৌজন্য বিনিময় করেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

আরও পড়ুন-Shuvendu update : এ পাশে ব্যানার, ও পাশে অখিল গিরি, কাঁথি জমজমাট

Previous articleরাজ্য-রেল বৈঠক শেষ, কী বললেন মুখ্যসচিব
Next articleনির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের, স্বস্তিতে কমল নাথ