Wednesday, December 31, 2025

‘আমার রাজনীতি- পাঠের ভাষায় পরিবর্তন প্রয়োজন’, পিকে-কে তোপ মিহির গোস্বামীর

Date:

Share post:

ফের তোপ দাগলেন কোচবিহার-দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী৷ কয়েকদিন আগে তিনি এক ফেসবুক পোস্টে নাম না করে প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর দলবলকে আক্রমণ করেছিলেন৷ এবার প্রশান্ত কিশোর তো বটেই তৃণমূল-কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও অভিমানের সুরে অনেক কথাই বললেন মিহির গোস্বামী ৷

ফেসবুকে এবার তিনি লিখেছেন, “দিদির দলে যোগ দিয়েছিলাম কারণ তখন সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইতে কং-দাদাদের চাইতে দিদিকেই বেশি আস্থার মানুষ মনে হয়েছিল। অবাক হয়ে দেখলাম লড়াইতে জিতে ক্ষমতা দখলের পরে দিদি সেই সিপিএমেই আস্থা রাখছেন বেশি। যে বিশিষ্ট মানুষগুলি দিদিকে অজস্র অকথা কুকথা বলতে কখনো ছাড়ে নি, তারা একে একে সসম্মানে এদলে এসে দখল করল ছোট বড় গদি। তাই বলে আমার মত কর্মী কিন্তু দিদির উপরে আস্থা হারাইনি।
গত দশ বছরের শাসন ক্ষমতা ভোগ করার সময়ে দিদিকে ঘিরে যে পারিষদ বলয় তৈরি হয়েছিল তার থেকে সামাজিক দূরত্ব রেখে গিয়েছি বরাবর। তবু গত দশ বছরে দলের মধ্যে অপমানিত হয়েছি অগুনতিবার। কিন্তু তাই বলে দিদির উপর আস্থা হারাইনি। আজ যখন দেখছি দিদির দলে কোনো ঠিকাদার থিংকট্যাংক কোম্পানি ঢুকে পড়ে তছনছ করে দিচ্ছে ঘরবাড়ি, অপমানিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, অথচ দিদি অন্তরালে নির্বিকার, তাহলে সেই ঘরবাড়ির মতই দিদির প্রতি এতদিনের সব আস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?”

পর পর দুটি পোস্টের প্রায় প্রতিটি লাইনেই তাঁর একরাশ অভিমান ঝরে পড়েছে। তিনি লিখেছেন, “আজকাল নিজেকেই নানা প্রশ্ন করি। বয়সটা যখন বাইশ বছর কম ছিল, আবেগের পরিমাণ তো তখন বেশি ছিল। কিন্তু সেসময় প্রিয়রঞ্জনকে ছেড়ে মমতার অনুগামী হয়েছিলাম আবেগকে বেশি পাত্তা না দিয়েই। তবে কি রাজনীতিতে কেরিয়ার তৈরির জন্যই পৃথক তৃণমূল পরিবারে শামিল হয়েছিলাম? তাহলে কেন পারলাম না একটা মোটর গাড়ি কিনতে? কেন পারি নাই কলকাতায় একটা ছোট ফ্ল্যাটের মালিক হতে? কেন এক ফালি জমি শান্তিনিকেতন বা মন্দারমনিতে কিনে রাখতে পারি নাই একটা ছোট বাগানঅলা ভিলা বানাব বলে? কেন দলবেঁধে একটা বিদেশ সফরে ঘুরে আসতে পারলাম না অলিম্পিকের রাশিয়া কিংবা মাল দ্বীপ বা মালয়শিয়া? কী দশা হল তবে সেই কেরিয়ারের?”
তৃণমূলের এই বিধায়ক লিখেছেন, “উত্তরে যদি সততার কথা তোলেন, তবে বলব যে কেউ চাইলেই নিজের জন্য ওই শব্দটি ব্যবহার করতে পারে না। আমি বরং বলব জীবনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু ভাবার ক্ষমতাই আমার হয় নি। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার নিয়ে দুবেলা খেয়েপরে বাঁচা আর মাথার উপরে ছাদ – এটাই জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল। মানুষের আকাঙ্ক্ষা যে আকাশ ভেদ করে কোথায় উঠে যেতে পারে তা বাইরে থেকে খালি চোখে দেখে বারবার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। এই ছাপোষা জীবন নিয়ে গত দশ বছর সর্বত্র অপাংক্তেয় হয়ে গিয়েছি, ক্লাসের সবচেয়ে নিরীহ দুর্বল ছাত্রটির মত সবার পেছনে স্থান পেয়েছি। যার কাছে অর্থ নেই, যার বড়লোক হবার স্পৃহা নেই তাকে দলে কেন নেবে বাকিরা? অতএব একসঙ্গে হাঁটার চেষ্টা করে পেছন থেকে ল্যাং খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছি, বাকিরা দেখে হেসে হেসে চলে গেছে ট্রেন ধরতে, পরে একবারও খোঁজ নেওয়ার সহমর্মিতাটুকুও ছিল না কারো! আজ বুঝতে পারি, আমার ভব্যতাবোধই আমার দুর্বলতা হয়ে ধরা পড়েছে তাদের চোখে। অথচ আমি তো কেবল মানুষের জন্যই কাজ করতে চেয়েছি। বিনিময়ে আমি তো কেবল সম্মান-ভালোবাসাটুকুই চেয়েছি।
আজ বুঝতে পারি আমার রাজনীতি-পাঠের ভাষায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন শিগগির। কারণ আমার কোচবিহার ও আমার উত্তরবাংলার জন্য বহু কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও এখনো সুযোগ পেলাম কোথায়?”

মিহিরবাবুর এই মনোভাব বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক মহল বলছে, তিনি একটা কথা যেমন খুব পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি কতখানি ভরসা ও শ্রদ্ধা করতেন, একইসঙ্গে এটাও বলেছেন, “আমার রাজনীতি-পাঠের ভাষায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন শিগগির। কারণ আমার কোচবিহার ও আমার উত্তরবাংলার জন্য বহু কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও এখনো সুযোগ পেলাম কোথায়?” রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, প্রশান্ত কিশোরের কাজের ধরন এবং গতিবিধিতে তৃৃণমূলের অন্দরে, নেতা-বিধায়ক মহলেই উষ্মা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ শুভেন্দু অধিকারী, শীলভদ্র দত্তর পর মিহির গোস্বামীও আঙুল তুলেছেন ওই পিকে’র দিকেই৷
পাশাপাশি অনেকে বলছেন, আসলে মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করছেন৷ এখন দেখার দল হিসাবে তৃণমূল মিহির গোস্বামীর এইসব কথা কোন নজরে দেখে৷

আরও পড়ুন- দিল্লিতে রাজ্যপালের লিখে আসা স্ক্রিপ্ট বাংলায় বসে পড়লেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী!

spot_img

Related articles

জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের টানেলে মুখোমুখি দুই ট্রেন, আহত একাধিক

উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand )চামোলিতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের টানেলে মুখোমুখি দুই ট্রেনের সংঘর্ষ(Tunnel Train Acciden), আহত কমপক্ষে ৬০ জন। মঙ্গলবার রাতে...

বিজেপি রাজ্যে বাঙালি নির্যাতন, একটাও কথা বললেন না শাহ! প্রশ্ন তৃণমূলের

বাংলায় ক্ষমতায় এলে বাঙালির জন্য না কি বিজেপি প্রভূত উন্নয়ন করবে। অথচ সাম্প্রতিক উদাহরণ স্পষ্ট করছে, কীভাবে শুধুমাত্র...

জোড়া সুখবর বঙ্গ শিবিরে, বড় জয়ের দিনেই শামির প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত

২০২৫ সালের শেষ দিন দারুণ ভাবে শেষ করল বাংলা(Bengal) দল, জম্মু-কাশ্মীরকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিল।এই জয় নেট রান...

মেয়ের মৃত্যুর অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টা তামান্নার মায়ের!

মেয়ের মৃত্যুর ৭ মাস পরে অবসাদে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন তামান্না খাতুনের (Tamanna Khatun) মা সাবিনা। কালীগঞ্জ...