দীপঙ্করের তৃণমূল-নীতি : ফ্রন্টের মধ্যেই বর্ষীয়ানদের বাস্তবজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন

লিবারেশন নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর ঘোষণায় সিপিএম দ্বিধাবিভক্ত। ঘোর দ্বন্দ্ব সিপিএমের নব্য প্রজন্মের সঙ্গে বর্ষীয়ানদের।

কে বড় শত্রু? বিজেপি না তৃণমূল? এই প্রশ্নে আড়াআড়ি বিপরীত অবস্থান এখন দলের মধ্যেই। ফলে রাজ্যে বাম মহলে অস্বস্তি বাড়ছে ক্রমশ।

বিহারের ভোটে সিপিআই(এমএল)-এর চোখে পড়ার মতো ফল। ১২ আসনে জিতে আপাতত রাজ্য অন্যতম বিরোধী শক্তি। আর ভাল ফল করেই বাংলার বামেদের উদ্দেশে দলের নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর বিবৃতি, দেশের প্রেক্ষাপটে ভাবুক বামফ্রন্ট। বিজেপি পয়লা নম্বর শত্রু। তাতে যদি তৃণমূলকে আগামিদিনে সঙ্গে করে নিয়ে চলতে হয়, হবে। নইলে লড়াই লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে।

আর এখানেই গোল বেধেছে বাম মহলে। সরাসরি দীপঙ্করের বিরোধিতা করতে পারছেন না তাঁরা। উত্তরবঙ্গে গিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, বাংলা-বিহারের পরিস্থিতি আলাদা। তৃণমূল ও বিজেপি দুই সমান শত্রু। বিজেপি সাম্প্রদায়িক। আর তৃণমূল অনেক ক্ষেত্রে তাই। বাংলায় তৃণমূলের নরম হওয়া বা সমঝোতার কোনও প্রশ্ন নেই।

বিমানের এই বয়ানে বামেদের তরুণ প্রজন্ম মোটেই খুশি নয়। দলের রাজ্য স্তরের এক ছাত্র-যুব নেতার স্পষ্ট কথা, তৃণমূল সাম্প্রদায়িক লড়াইয়ে অনেক ক্ষেত্রে সমঝোতাকারী মেনে নিয়েও বলতে হয় বিজেপিকে হঠাতে ওয়ান পয়েন্ট টার্গেট করে এগোতে হবে। লড়াই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেলে তা দুর্বল হতে বাধ্য। ফলে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি হয়ে যাবেই। বিজেপিকে হঠিয়ে তারপর তৃণমূল বিরোধিতা। বামফ্রন্টের শরিক দলের এক নেতাও সিপিএম যুব নেতার যুক্তিতে শিলমোহর দিয়ে বললেন, সিপিএমের এই এক বগগা নীতির কারণে রাজ্যে বামেরা এখন প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা তো কংগ্রেসের হাত ধরেছি। যে কংগ্রেস ৭২-৭৭-এর কালো দিনেফ নায়ক। তাহলে তৃণমূল সম্বন্ধে এই ছ্যুৎমার্গ কেন থাকবে? দেশের সব বিরোধী শক্তিকে এক মঞ্চে আনতে হবে। বিহারেও তো বহু কেলেঙ্কারির নায়ক আরজেডির সঙ্গে জোট করতে হয়েছে বামেদের। তাহলে?

রাজ্যের বামমহলকেও এই বিতর্কই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে। শুধু বিজেপি, না একসঙ্গে বিজেপি-তৃণমূল? দীপঙ্করের এক বয়ানে তত্ত্ব ও নীতিবাগিশ সিপিএম মহল কোনঠাসা।

এক বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা চিমটি কেটে বলেছেন, সিপিএম বা বাংলার বামেদের চেতনা হয় অনেক পড়ে। তখন গিয়ে বলবে, সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আর সেই সব ‘ঐতিহাসিক ভুল’-এর খেসারত দিতে গিয়ে দেশের প্রেক্ষাপটে দলটার অস্তিত্বই এখন ঘোর সঙ্কটে।

 

Previous articleলাদাখকে চিনের অংশ দেখিয়ে বিপাকে টুইটার, সংস্থাকে জবাবদিহি করল কেন্দ্র
Next article‘রাহুল গান্ধীর ভাবনাচিন্তা এখনও যেন পরিনত হয়নি’, স্মৃতিচারণায় বারাক ওবামা