Thursday, December 25, 2025

বাঙালীদের জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ বাংলাপক্ষের, গোবরডাঙ্গায় প্রতিবাদ সভা

Date:

Share post:

উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায় শতাধিক বাঙালীকে উদ্বাস্তু করার চক্রান্ত করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দিভাষী রেল পুলিশ চক্র। এই অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভে সামিল হল বাংলা পক্ষ। বাংলা জুড়ে যে কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি জমি মানেই হিন্দি বলয়ের রাজ্যের মানুষের জবরদখল করার এলাকা । এটা প্রায় নিয়ম হয়ে গিয়েছে। আসানসোল, হুগলি, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল হোক বা কলকাতার বন্দর এলাকা। সব জায়গায় একই চিত্র । এই সব এলাকা ক্রমে বহিরাগতদের ঘাঁটিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে আশপাশের এলাকায় অপরাধ বাড়ছে। ফলে এলাকা থেকে বাঙালী ভূমিপুত্ররা ক্রমে নির্মূল হয়ে যাচ্ছে।

বাংলা পক্ষের অভিযোগ, কখনও এই বাংলার মাটি দখল করা বহিরাগতদের জবরদখল সরায় না। কিন্তু সামান্য কিছু জায়গায় যেখানে বাঙালী ঘর বানিয়েছে যেমন লেক বস্তি বা গোবরডাঙা, সেখানে বারবার চালানো হচ্ছে আক্রমণ।

প্রায় তিন পুরুষ ধরে গোবরডাঙায় বাস করা এমন প্রায় শতাধিক বাঙালী পরিবারকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে উদ্বাস্তু করার চক্রান্ত করছে রেল দফতর। কালীপুজোর আগেরদিন গোবরডাঙার এই নিপীড়িত বাঙালীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্বাস্তু না হতে দেওয়ার লড়াই শুরু করল বাংলা পক্ষ। বাংলা পক্ষর উত্তর ২৪ পরগনা গ্রামাঞ্চল জেলা কমিটির সম্পাদক রাজদীপ ঘোষের নেতৃত্বে বাংলা পক্ষর সদস্যদের একটি বড় দল রেল পুলিশের দ্বারা উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য টার্গেট করা বাঙালী পরিবারদের কাছে যায়। তাদের কাছে বাঙালীরা তাদের ভয়াবহ অবস্থার কথা জানান। তাঁরা জানান, প্রায় ৪০ জন অস্ত্রধারী হিন্দিভাষী রেল পুলিশ এসে তাদের বাড়ি ঘর সব ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছে এবং কালীপুজোর পরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তারা ফের হানা দিয়ে এই বাংলার মাটিতে তাদের কয়েক প্রজন্মের ঘর থেকে উচ্ছেদ করবে। রত্না মন্ডল, ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়, শুভব্রত বন্দোপাধ্যায় সহ জেলা বাংলা পক্ষর সহযোদ্ধারা পুরো এলাকা পরিদর্শন করে, নিপীড়িত বাঙালী পরিবারদের সাথে কথা বলে, লড়াইয়ের মাধ্যমে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেয় এবং বিপদে আপদে যোগাযোগ করার জন্য একাধিক স্থানীয় বাংলা পক্ষ সহযোদ্ধাদের নম্বর দেয়। সেই এলাকায় শত শত বাঙালীর বাস যাদের টার্গেট করে এই শীতকালে, করোনা মহামারীর মাঝে উদ্বাস্তু করে মাথার উপরের ছাদ কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে বাঙালী রেল মন্ত্রক।

ঐ দিনই গোবরডাঙা স্টেশনের পাশে বাংলা পক্ষ একটি পথসভা করে যা শেষ পর্যন্ত জনসভায় পরিণত হয়। এলাকার বাঙালীর এই সভাকে সমর্থন করেন । সভায় বাংলা পক্ষ রেল মন্ত্রককে চ্যালেঞ্জ করে যে, ক্ষমতা থাকলে ইউপি বা বিহারে বা বাংলার “ইউপি-বিহার”-এ পরিণত হওয়া এলাকা যেমন আসানসোল, রানীগঞ্জ, খড়্গপুর, টিটাগড়, ব্যারাকপুর, রিষড়া, নৈহাটি, হাওড়া, সালকিয়া, পার্ক সার্কাস ইত্যাদি এলাকার রেলের জমি থেকে একজন বহিরাগতকেও উচ্ছেদ করে দেখাক রেলের হিন্দিভাষী পুলিশ। বাংলা পক্ষ দাবি করে, বাঙালীকে উদ্বাস্তু বানানোর চক্রান্তে নেমেছে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা। এবং বাংলাকে চিরকাল বাঙালীর মালিকানাধীন রাখার একমাত্র পথ বাঙালী জাতীয়তাবাদ। রেল টিকিটে বাংলা ভাষা ফেরানো, রেলে বাঙালী হকার ও বাঙালী যাত্রীদের উপর হিন্দিভাষী রেল পুলিশের টার্গেট করে অত্যাচারের প্রতিবাদ – এই সব লড়াই করে আসছে বাংলা পক্ষ। সম্প্রতি হাওড়ার বহিরাগত ডিআরএম দাবি করেছে যে বাংলায় মানুষকে বাংলায় তথ্য প্রদান করার কোন নিয়ম নেই। এই কথাটা মহারাষ্ট্রে বা তামিল নাড়ুতে কারুর বলার সাহস হতো না। বাংলাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে প্রায় এক শত বাঙালীর মিছিল নিয়ে বাংলা পক্ষ গোবরডাঙার রাস্তায় মিছিল করে। স্লোগান ওঠে – “তুমি কে, আমি কে, বাঙালী, বাঙালী”, “জয় বাংলা”, ইত্যাদি।

আরও পড়ুন- বিজয়বর্গীয়’ই এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক, সঙ্গে আইটি সেলের অমিত মালব্য, ঘোষণা বিজেপি’র

spot_img

Related articles

এক দশক পর শীতলতম বড়দিন পেল বাংলা!

যিশু জন্মদিনের সকালে (Christmas morning) কলকাতার তাপমাত্রা (Kolkata temperature) নামলো ১৩.৭ ডিগ্রিতে। শীতের আমেজে জমজমাট বড়দিনের আবহাওয়া। দক্ষিণবঙ্গে...

মধ্যরাতে কর্নাটকের ট্রাক-বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঝলসে মৃত্যু অন্তত ১০ জনের

বড়দিনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কর্নাটকে। বেসরকারি একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষের (bus truck accident) ফলে বাসে আগুন ধরে যাওয়ায়...

ক্রিসমাসে রক্তাক্ত ঢাকা, চার্চ টার্গেট করে বিস্ফোরণে মৃত ১

বড়দিনের উৎসব শুরু হবার আগেই বুধবার সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণে রক্তাক্ত বাংলাদেশের ঢাকা (Blast in Dhaka, Bangladesh)। মগবাজার ফ্লাইওভারে...

ক্রিসমাসে ঝলমলে পার্কস্ট্রিট, সান্টা টুপি মাথায় বড়দিনের সকালে পিকনিক মুডে বাঙালি

দেখতে দেখতে বছর প্রায় শেষ হতে চলল। ক্রিসমাসের মধ্য দিয়েই যেন বর্ষবরণের আনন্দ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। বড়দিনের...