পৌলমী, আপনাকে সম্মান করি, অকারণ রাগছেন কেন? অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’-এ প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে আপনার মন্তব্য পড়লাম। খবরে অসভ্যতা কথার অর্থ ঠিক বুঝলাম না। একটি জল্পনা ভিত্তিক এবং কিছু নির্দিষ্ট শোনা কথার ভিত্তিতে খবর লেখা। সে খবর ভবিষ্যতে ঠিক হতে পারে, নাও হতে পারে। এর মধ্যে অসভ্যতার কী আছে!

সভ্যতা আর অসভ্যতার মাপকাঠি আপনারা নিজের নিক্তিতে মাপলে মুশকিল। যে সব শিল্পীরা হঠাৎ বিপ্লবী হয়ে আপনার বন্ধনীর মধ্যে ঢুকে পাশে দাঁড়ানোর ভান করছেন, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, ২০১৪ সালে ওই কেওড়াতলা মহাশ্মশানেই অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের শেষকৃত্যের দিনেই দুজন প্রার্থীর নামে সিলমোহর পড়েছিল। একজন মুনমুন সেন, অন্যজন মিঠুন চক্রবর্তী। ইতিহাসটা জেনে তর্ক করবেন। নিজেদের মহাজ্ঞানী ভাবার ঠিকেদারি নিন, কিন্তু অন্যের উপর জ্ঞান ফলাতে যাবেন না। যাওয়ার আগে পাঁচবার তাঁরা যেন ভাবেন। অযথা অসভ্যতা, মানসিক অসুস্থতা, ডাস্টবিন, মনুষ্যত্ববোধহীন বলে নিজেদের মহান সাজার চেষ্টা করবেন না। কয়েকজনকে পরিচিত লাগল। তাদের ‘সভ্যতার’ কথা সামনে আনলে বোধহয় খুব একটা সুবিধার হবে না।

এক কবি দেখলাম, একটু বেশি বিদ্রোহী। তাঁর কলমের খোঁচায় অতি কড়া হিন্দুত্ববাদীরা যখন রে রে করে তেড়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনি এই সরকারেরই আঁচলের তলায় লুকিয়ে পরম শান্তি পেয়েছিলেন। সব বিদ্রোহ সেদিন উবে গিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে অবশ্য ‘নভেম্বর বিপ্লব’-এর সুযোগ অনেক বেশি। বলে দিলেই হলো। সামনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার করতে হবে না! ফলে শিল্পীর আড়ালে নিজেদের বুদ্ধিজীবী ভাববেন না। যেটা করে সংসার চলে সেটার প্রতি সৎ থাকুন। নইলে অজানা বিষয়ে বলতে গিয়ে এমন মণিমুক্ত ছড়াচ্ছেন, যে তাতে বলার রাস্তা আরও বেশি করে খুলে দিচ্ছেন।

শিল্পীদের রাতারাতি শিবির বদলানোর কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল। ‘পাল্টি’ খাওয়ার রেকর্ড শিল্পীদের মধ্যেই বেশি। কেউ মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক হয়েছেন, কেউ কমিটিতে আছেন, বেশিরভাগ পাল্টি খেয়েই। আর সে কথা লিখলেই সাংবাদিকদের বাপান্ত-শাপান্ত! বাঃ ভারি অদ্ভুত তো! ২০১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রচারে থাকা শিল্পী ২০১৬ সালে মন্ত্রী হননি? একের পর এক শিল্পী রাতারাতি শিবির বদলে নানা কমিটির পদ অলঙ্কৃত করেননি? বিপ্লব যারা করছেন, তাঁরা কোর্টের হলফনামা দিয়ে বলতে পারবেন, সরকার বদলে কেউ সরকারি পদ, কমিটি নেবেন না? আগের সরকারে ছিলেন না? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের মাথায় যে মোরগটি থাকে সেও বুদ্ধিজীবী। তার মুখ দেখেই বোঝা যায় হাওয়া কোন দিকে যাচ্ছে!

পৌলমী, আপনার খবরটা পছন্দ নাই হতে পারে। আপনার প্রতিবাদ জানাতে পারতেন। তা বলে এই ভাষায়! মামলার হুমকি! অপেক্ষায় রইলাম, সেই মামলা আমরা লড়ব, কিন্তু যন্ত্রণা নিয়ে লড়ব। আপনাদের অসম্মান না করেও আপনি লোকের ধুয়োতে প্ররোচিত হচ্ছেন। আপনার সিদ্ধান্ত আপনি রাজনীতিতে আসবেন না। যদি তাই হয়, সেটাও আমরা বড় করে ছাপব। আর এ ধরণের নজির তো রয়েছে। মুনমুন সেন তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। কোনও দল যদি কোনও গুণী মহিলাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে প্রার্থী করেন, তার মধ্যে অন্যায়টাই বা কোথায়? এরমধ্যে অপরাধটাই বা আপনি দেখছেন কেন? যাদের বাবা-মা মারা যান, তাঁরা তাঁদের ফেলে আসা চাকরি করেন না? তাঁরা জীবনে অন্যান্য কাজ করেন না? তাহলে?

আপনি লিখেছেন, ‘এবার লিগাল অ্যাকশন নেব। দিজ হ্যাজ টুবি স্টপড।’ প্রশ্ন কোনটা বন্ধ করতে চাইছেন? আপনার পরিবারের রাজনীতিতে আসাটা? না, জল্পনার খবর? প্রথমটা আপনার এক্তিয়ারে। দ্বিতীয়টা আপনি বন্ধ করার কে? সে জল্পনা চললে আমরা লিখব। সে স্বাধীনতায় আপনি হস্তক্ষেপ করার কে?

পৌলমী রাজনীতিতে আসাটা তো অসম্মানের নয়। তা না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বললেন। ফলে আমাদের কথাও সেখানেই বলতে হল। কেউ লেখেনি। আমরাই লিখেছিলাম, সৌমিত্র আজন্ম বামপন্থী ছিলেন। তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক জগতের মুখে বিপ্লব মানায় না। তাঁরা বারবার রঙ বদলেছেন বেরঙিন ভাবে।

আরও পড়ুন:প্রয়াত কবি অলোকরঞ্জন, ক্রমাগত নিঃস্ব হচ্ছে বাংলার ভাবনার জগত

সৌমিত্রবাবুর মৃত্যু দুঃখের, কিন্তু অকাল মৃত্যু নয়। ফলে জীবন আপনার, আপনার মতো করেই এগোতে হবে, এটাই বাস্তব।সৌমিত্রবাবুর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমরা আগের দিনই বিশ্লেষণ করেছি। সেই জায়গায় কোনও কম্প্রোমাইজ করেননি, বারবার লিখেছি। মুখ্যমন্ত্রীর সান্নিধ্যেও নন। অন্য কেউ বলার বা লেখার সাহস করেননি। আপনিও বলেননি। শুধু একবার বলেছিলেন, ‘আমরা কমরেডস ছিলাম।’ ব্যাস ওখানেই শেষ। অবশ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কমিটমেন্ট আপনার কাছে আশা করাটাও অন্যায়!!!

Previous article১৩ বছরের নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত ৬০ বছরের দুই জ্যেঠু
Next articleনিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সুপ্রিম কোর্টের, জেলায় ঢুকতে পারবেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সুশান্ত ঘোষ