আরও এক কংগ্রেসি ভাবধারার নেতাকে হারাল দেশ, প্রয়াত অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর আরও এক খাঁটি কংগ্রেসি ভাবধারার নেতাকে হারাল দেশ। প্রয়াত অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। গত কয়েকদিন গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা। সোমবার বিকেলে সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মাল্টি অর্গান ফেলিওরের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে।

আরও পড়ুন : করোনা-আক্রান্ত অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর প্লাজমা থেরাপি

গত ২৫ অগাস্ট অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তাঁর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে‌। পরের দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে প্লাসমা থেরাপিও দেওয়া হয়। এরপর তিনি পুরোপুরি সংক্রমণমুক্ত হলে, ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ দুমাস পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফের ২ নভেম্বর গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তাঁকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তবে করোনা মুক্ত হওয়ার পর একাধিক জটিলতা দেখা দেয় তাঁর। একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে গিয়েছিল তাঁর। রবিবার বিকেলের পর থেকেই কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

তাঁর প্রয়াণে রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ একাধিক নেতা। একটি টুইটবার্তায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘শ্রী তরুণ গগৈ জি একজন জনপ্রিয় নেতা এবং বর্ষীয়ান প্রশাসক ছিলেন। অসমের পাশাপাশি যাঁর কেন্দ্রে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিল। তাঁর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। এই শোকের মুহূর্তে তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের সমবেদনা জানাচ্ছি। ওম শান্তি।’

রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘শ্রী তরুণ গগৈ সত্যিকারের কংগ্রেস নেতা ছিলেন। অসমের সব মানুষ এবং সম্প্রদায়কে একসঙ্গে নিয়ে আসার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমার কাছে তিনি ছিলেন অসামান্য এবং বিজ্ঞ নেতা। আমি তাঁকে ভালোবাসতাম এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম। আমি তাঁকে মিস করব। গৌরব (গগৈ) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং সমবেদনা জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন : করোনা আক্রান্ত অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী  তরুণ গগৈ  

ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী থেকে শুরু করে মনমোহন সিং পর্যন্ত, একাধিক কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র ছিলেন গগৈ। পাঁচবারের সাংসদ, চারবারের বিধায়ক এবং টানা ১৫ বছর অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। প্রথমবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন ২০০১ সালে। অসম গণ পরিষদের প্রফুল্ল কুমার মোহন্তকে সরিয়ে বসেন মসনদে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন।

প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। ১৯৭১-৮৫, মোট চারবার নিজের শহর জোড়হাট থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কোলিয়াবর কেন্দ্র থেকে দু’দফায় সাংসদ হন। অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন দুবার। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পি ভি নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও তরুণ গগৈ। প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে অসম তথা গোটা দেশের কংগ্রেসী রাজনীতিতে তৈরি হল বড়সড় এক শূন্যতা।

Previous articleতৃণমূল নেত্রীর প্রতি আনুগত্য, বৈঠকে জানালেন মালদহ জেলা পরিষদ সভাপতি
Next articleজগদ্ধাত্রী রূপে মা তারার পুজো তারাপীঠে