ঢাল কুণালও!! অগ্নিমিত্রাকে তুলোধনা করলেন বৈশাখী

একে কী বলা উচিত? বিজেপির অন্দরমহলে চুলোচুলি? না, অস্তিত্ব জাহিরের তাগিদ? নাকি, চরম পরশ্রীকাতরতা? কিংবা ঘটনা তার থেকেও বেশি কিছু!

সামাজিক মাধ্যমে লড়াই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অগ্নিমিত্রা পালের। দুই জুজুধান ‘সুন্দরী’ সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে আগুনে তোপ দাগছেন! আর সে আগুনে পুড়ছেন কৌতূহলীরা। শুধু কী তাই? দুই বিজেপির প্রকাশ্য লড়াইয়ে যেমন দলেরই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর সমর্থনকারী হিসাবে টেনে এনেছেন বৈশাখী, তেমনি দলমত নির্বিশেষ রাজনৈতিক কর্মীকে কীভাবে মর্যাদা দিতে হয়, সে নিয়ে সহবত শেখানোর ভঙ্গিতে অধ্যাপিকা বৈশাখী তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যও টেনে আনতে কসুর করেননি। সঙ্গে উপরি পাওনা বেশ কিছু ছবি। ‘লড়াই- লড়াই-লড়াই চাই/ লড়াই করে বাঁচতে চাই’,… সিপিএমের বহুল প্রচারিত এই স্লোগান যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে দুই বিজেপি নেত্রীর আকচা-আকচিকে।

শুরুটা কোথায়? বিজেপির অন্দরে সাম্প্রতিক শোভন-বৈশাখী পর্বে বিজয়াসম্মিলনীতে শোভনকে আমন্ত্রণ করা হলেও বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে জল অনেক দূর গড়ায়। সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মিডিয়ার সামনে মুখ খোলেন। বলেন, এই ঘটনা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। সব অনুষ্ঠানে সকলে আমন্ত্রিত হবেন, এমন নয়। তাছাড়া বৈশাখী নিশ্চয়ই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সমান মর্যাদা আশা করতে পারেন না!

আর এতেই যার পর নাই ক্ষেপেছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির নেত্রী বৈশাখী। পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার ভঙ্গিতে তিনি এক-দুই করে পয়েন্ট করে অগ্নিমিত্রাকে আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়েই কটাক্ষ করেছেন।কী বলেছেন বৈশাখী?

১. অগ্নিমিত্রা রাজনীতিতে আসার আগে আপনার কোনও রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল না, পরিচিতি ছিল না। ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার। তা সত্ত্বেও আপনি কৃতজ্ঞ থাকুন এই কারণে যে বিজেপি আপনাকে মহিলা মোর্চার মতো বিশাল দায়িত্ব দিয়েছে।

২.মহিলা মোর্চার দায়িত্ব পাওয়ার আগে আপনি কোন পদে ছিলেন বলতে পারবেন? আর WBCPUA এর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আমার আন্দোলনের একটা ইতিহাস আছে। খোঁজ নিন।

৩. এবার অগ্নিমিত্রাকে পেজ থ্রির প্রোডাক্ট বলে কটাক্ষ করে বৈশাখী বলছেন, আমার ছবি কোনও সংবাদপত্রের পেজ থ্রিতে দেখা যায়নি। বরং আমাকে চ্যানেলে-কাগজে দলের একবগগা সমর্থক হিসাবেই দেখা গিয়েছে।

৪. সংগঠনের নেত্রী হিসাবে আমি পুরুলিয়া থেকে ধর্মতলা, গোসাবা থেকে যাদবপুর ঘুরেছি। মোটেই নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার জন্য নয়।

৫. শিক্ষাবিদ হওয়ার পাশাপাশি লড়াই করেছি স্বাক্ষরতা আন্দোলনে, ডোমেস্টিক ভায়োল্যান্স কিংবা শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

৬. মানুষের সমর্থন পাওয়ার জন্য আমি কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হালকা ছবি’ পোস্ট করিনি। বরং আন্দোলনে থাকার ছবি দিয়েছি।

৭. বিজেপিতে আমার যোগদানকে দারুনভাবে স্বাগত জানিয়েছেন আপনারই পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায়। নানা কর্মসূচিতে তিনি আমায় আমন্ত্রণ জানান। আমাকে অবাক করেছে আমার দলেরই সহকর্মী আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বলছেন। আপনি একটু কষ্ট করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের সোমবারের মন্তব্য শুনে নেবেন। তিনি বিরোধী দলের হলেও আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে বলেছেন, বৈশাখী একজন শিক্ষিত, রুচিশীল, ব্যক্তিত্ববান মহিলা। শুধু তাই নয়, আমাকে তৃণমূল পরিবারের সদস্য বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। কুণাল-লকেটের মন্তব্যই প্রকৃত রাজনীতির ধারাটাকে দেখিয়ে দেয়। বাকি যেটা আপনি করেছেন, সেটা ছোট মনের পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

৮. অগ্নিমিত্রার উত্থানের পিছনে কার হাত! সে নিয়েও কটাক্ষ করতে গিয়ে বৈশাখী লিখেছেন, রাজনীতিতে আমার কোনও গড ফাদার নেই। আমি শিখেছি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়দের কাছ থেকে। আর বিজেপিতে শিখছি রামলালজি, শিব প্রকাশিজি, মেননজি, অমিতাভবাবুদের কাছ থেকে।

৯. একেবারে শেষ দিকে এসে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বৈশাখী কার্যত ‘পলিটিক্যাল গড’-এর তকমা দিয়েছেন। বলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় আমার মেন্টর, আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি পুজো করি। তিনি শিখিয়েছেন, কীভাবে উৎকণ্ঠিত সময়েও নম্র থাকা যায়। যিনি আত্মসম্মানের প্রশ্নে নিজের সব ক্ষমতা দূরে সরিয়ে দিতে পারেন। নিঃস্বার্থ হতে তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন। অথচ আপনি না জেনে প্রকাশ্যে মন্তব্য করে দিলেন! কোথাও শুনেছেন, শোভন আমার রাজনৈতিক পদের জন্য উমেদারি করছেন?

১০ সব শেষে দলের মহিলা মোর্চার নেত্রীকে শিক্ষা দেওয়ার ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, কিছু অজ্ঞানতা হঠাতে কিছু জ্ঞানের কথা এই কারণেই বললাম, শব্দ চয়নের প্রশ্নে যাতে আপনি আরও সংযত থাকেন।

এখানেই শেষ নয়, অগ্নিমিত্রাকে ‘পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড’ ছাড়া কার্যত হঠাৎ টপকে পড়া নেত্রী বলার পাশাপাশি নিজের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস বোঝাতে তৃণমূলে থাকাকালীন নানা কর্মসূচির ছবি পোস্ট করেছেন।

বৈশাখীর এই পোস্টে রাজনৈতিকমহল সরগরম। কারণ, বিজেপির বিরুদ্ধে বিজেপির লড়াই। সেই সঙ্গে অগ্নিমিত্রাকে অপদস্থ করতে বৈশাখী যেমন একদিকে মহিলা মোর্চা বাংলায় তৈরির মূল কারিগর সাংসদ লকেটের প্রশংসা করেছেন, তেমনি রাজনৈতিক সহবত শেখাতে তাঁর সম্বন্ধে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যও সামনে এনেছেন। এই ঘটনায় বিজেপিতেও প্রবল অস্বস্তি। সামনের সারির নেতারা এই পোস্ট পড়া হয়নি বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই হেমন্তে গেরুয়া শিবিরে অসময়ের বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস। বিজেপি এই আভাসকে কত দ্রুত শোভনীয় ভঙ্গিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, এখন সেটাই দেখার।

আরও পড়ুন-আগামী ২৬ নভেম্বর ধর্মঘটের সমর্থনে বাম-কংগ্রেসের মহামিছিল

Previous articleএনামুলের কোভিড রিপোর্ট ফের পজিটিভ, সন্দেহ প্রকাশ করল সিবিআই: সূত্র
Next article“একসঙ্গে কাজ করতে হবে”- কীসের বার্তা শুভেন্দুর