শুভেন্দুকে নিয়ে বিস্ফোরক পোস্টে কী লিখলেন “সামান্য কর্মী” কুণাল ঘোষ?

শুভেন্দু অধিকারী খবরের শিরোনামে। তাঁকে নিয়ে সাংবাদিকরা একাধিক প্রশ্ন করছেন মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে। সেই প্রেক্ষিতে খোলা মেলা পোস্ট করলেন কুণাল।

তিনি লিখেছেন-

প্রসঙ্গ: শুভেন্দু অধিকারী

গত কয়েকদিনে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের বন্ধু শুভেন্দু অধিকারীর এখনকার পর্বটি নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার বক্তব্য:

শুভেন্দু এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। শীর্ষ কমিটির সদস্য।
আমার ভ্রাতৃপ্রতিম।
এবং কলকাতায় আমার প্রতিবেশিও বটে।

শুভেন্দুর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। মাঝখানে কিছু ভুলবোঝাবুঝি ছিল। কী কারণে তা হয়েছিল, তা সম্ভবত দুজনেই বুঝেছি। সেটির যথাসম্ভব অবসান ঘটিয়ে আবার দুজনের যোগাযোগ এবং বাক্যালাপ আছে।

শুভেন্দু স্বকীয় ব্যক্তিত্ব, ইগো, জেদে চলা একটু ভিন্ন ঘরানার ছেলে। তার পজিটিভ এবং নেগেটিভ, দুদিকই ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু কথা বলতে ভালো লাগে।
আমার বন্দিদশার পর মায়ের মৃত্যু শুভেন্দুকে নাড়া দিয়েছিল। আজও বলে,” আপনার মা খুব কষ্ট পেয়েছেন, আপনিও।” মা চলে যাওয়ার পর শ্রাদ্ধের জন্য আমি কাছা পরে নিজাম প্যালেস গিয়ে মুকুলদাকেও আমন্ত্রণ করে এসেছিলাম। মুকুলদা তখন তৃণমূলে। আসেনি। অনেক পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে আমাদের পুজো উদ্বোধনে এসেছিল। কিন্তু শুভেন্দু কলকাতার একটি স্থানে এই কাছা পরা কুণাল ঘোষের জন্যে এসেছিল এবং রাতে দুঘন্টা সময় দিয়ে নানা আলোচনা করে আমাকে মানসিকভাবে ঠিক রাখার ভূমিকা পালন করেছিল। আগামী দিন যাই হোক এই ব্যক্তিগত অংশ মনে রাখব।

এখন শুনছি শুভেন্দুর নানা ক্ষোভ আছে। শুভেন্দু বেশ কিছু পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছে। ও নাকি সরাসরি বিজেপিতে যোগ দেবে। অথবা আলাদা একটি দল বা মঞ্চ গড়ে বিজেপি ও অন্য একাধিক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে। যদিও এখনও সে দলেই আছে।

আমি আশা করি শুভেন্দু দলেই থাকবে।

শুভেন্দুর ক্ষোভগুলি জানি। কিছু বিষয়ে একমত নই। আবার হয়ত কিছু বিষয়ে আলোচনার অবকাশ আছে। কিন্তু তাই বলে শুভেন্দুর দল ছাড়ার ভাবনা সমর্থন করি না।

শুভেন্দু সাংগঠনিক নেতা। আমি তা নই। কিন্তু তৃণমূলের কঠিন দিন থেকে আমি যা যা ভূমিকায় ছিলাম, সেই স্লটটাও যে কোনো দলের পক্ষে অতি জরুরি। মাঠে নেমে লড়াই অবশ্যই গুরুত্বের, কিন্তু অন্য দিকের কাজটা ছাড়া সামগ্রিক যুদ্ধ অসম্পূর্ণ। আমি সেই ভূমিকাতে ছিলাম। তাতে আপাতদৃষ্টিতে আমার সমর্থকের সংখ্যা দলে কম হতে পারে, কিন্তু যে বা যারা বিকল্প ভূমিকায় সক্রিয় ছিল, তাদের অবদানও ফেলনা নয়।

শুভেন্দু তৃণমূলের অন্যতম মুখ।

কৈলাস বিজয়বর্গীয়র প্ররোচনা শুনলাম-” শুভেন্দু সম্মান নিয়ে চলে। ও তৃণমূলে থাকতে পারবে না।”

আমি বলব, আমিও জানি শুভেন্দু সম্মান নিয়ে চলে।
এখন তারই পরীক্ষা।

তৃণমূল শুভেন্দুকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষপদ, দলের শীর্ষপদ দিয়েছে। তৃণমূলে ও ভালোবাসার মুখ। মমতাদি ওকে সাংসদ থেকে মন্ত্রী করে এনেছেন।

আর বিজেপি 2016 সালের ভোটের মুখে নিজেদের পার্টি অফিসে টিভি স্ক্রিনে নারদার ভিডিও দেখিয়ে, শুভেন্দুকে কালিমালিপ্ত করে, গ্রেপ্তার চেয়ে, সিবিআই আর ইডি লাগিয়েছে।

আজ নিজেদের স্বার্থে বিজেপি নেতারা ওর প্রশংসা করছেন।
শুভেন্দু সেই অসম্মান ভুলে বিজেপির ফাঁদে পা দেবে?

দলের বিরুদ্ধে আমার ক্ষোভ ছিল না? আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়নি? আমার জীবন নষ্ট করা হয়নি? জ্ঞানত কোনো অপরাধ না করে আমি জর্জরিত। আমি সোচ্চার প্রতিবাদ করেছি। তবু দল ছাড়িনি। একা লড়েছি। তবু দলকে সদস্যপদের চাঁদা দিয়ে গিয়েছি। দলবদলটা নীতিবিরুদ্ধ মনে হয়েছে। দল কাজে না ফেরালে বসে থাকতাম। কিন্তু অন্য দলের মঞ্চে কখনও নয়।
আর আমি যখন ক্ষোভ জানিয়েছি দল তখন সুপ্রিম ক্ষমতায়। আমি সেই সাহস দেখিয়েছি।
আজ ভোটের মুখে কেন দলকে বিপাকে ফেলব? আজ যখন প্রতিপক্ষ সর্বশক্তিতে নামছে, তখন দলের সঙ্গে থাকব, যে দলে ছিলাম এবং আছি।

কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে আমার মামলাও আছে। আমি সামান্য কর্মী তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে এই সন্ধিক্ষণে তৃণমূল করছি। আমার মত দুর্বল লোক এটা করতে পারলে শুভেন্দু পারবে না? জল্পনা হবে সিবিআই ইডির ভয়ে শুভেন্দু দলকে সমস্যায় ফেলছে। এটা ওকে মানাবে না। মানাতে পারে না।

শুভেন্দুর যা যা ক্ষোভ, দলে থেকে দলের মধ্যে বসে লড়াই করুক। মেটাক। 2021 নির্বাচনের আগে এসে হঠাৎ ক্ষোভ দেখাতে গিয়ে বিজেপির সুবিধে করে দেওয়া শুভেন্দুর মত রাজার মেজাজে থাকা ছেলেকে মানায় না। আমি মনেপ্রাণে চাইব শুভেন্দু তৃণমূলে থাকুক। স্বমহিমায় থাকুক।

আর যদি একান্তই অন্য কিছু হয়, যদি কোনো বাধ্যবাধকতায় কোথাও কথা দেওয়া থাকে, তাহলে পথ আলাদা হবে। তখন স্বাভাবিক নিয়মেই নেতিবাচক দিকগুলি পরস্পরের অস্ত্র হবে। মজা দেখবে অন্যরা।
আমি তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র। আমার কর্তব্যও আমাকে করতেই হবে। তৃণমূলের তরফ থেকে যা যা বলার আছে, সেসব বলতে হবে। শুভেন্দুর শিবির আমাকে আক্রমণ, ব্যক্তিগত আক্রমণ করবে। সে আর কী করা যাবে। এই জন্মে তো নীলকন্ঠ হয়েই গিয়েছি। ও সব ভাবি না।

তবু, নিজের অঙ্কে নয়, সামগ্রিক অঙ্কে চাই শুভেন্দু তৃণমূলে থাকুক।
শুভেন্দু বিশিষ্ট নেতা।
আর শ্রীমান অভিষেক আমাদের থেকে অনেক ছোট। অক্লান্ত পরিশ্রম করছে দলটাকে নিয়ে। বিতর্কে এবং প্রতিপক্ষের প্রতিমুহূর্তের লক্ষ্যবিন্দু। কৌশলে তাকে বিদ্ধ করছে বিজেপি। আমরা বসে বসে দেখব? শুভেন্দু, ক্ষোভ থাকলে দলের মধ্যেই আমরা সমাধান করব, আমার জীবনের ন্যায়বিচারের লড়াই আমারও চলছে, কিন্তু এই সন্ধিক্ষণে একবার প্রবল প্রতাপশালী বিজেপিকে আমরা বোঝাব না, যে এটা বাংলা। এখানে মমতাদি তো দূর, আগে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ে দেখাও।
যোদ্ধার কাছে তো এটা স্বপ্নের লড়াইয়ের ময়দান।

শুভেন্দু, যে বিজেপি নিজেদের পার্টি অফিসে নারদের ভিডিও চালিয়ে তোমার গ্রেপ্তার চেয়েছিল, কালি লাগিয়েছিল, সিবিআই ইডির বকলস পরিয়েছে, সেই বিজেপি মজা পাচ্ছে। তোমাকে ঘুঁটি করতে চাইছে। ফাঁদ পাতছে।

যে দলে এত বছর তোমার কাজ, যে দলে থেকে সাংসদ মন্ত্রী, যে দলে তুমি গ্ল্যামারবয়, যে দলে তুমি নানা সংস্থার চেয়ারম্যান, যে দল তোমার কাজের স্বীকৃতিতে উজাড় করে দিয়েছে, যে দল অন্যকে না দিয়ে তোমাকে ভরিয়েছে আলোয়; ক্ষোভ থাকলে ভেতরে যুদ্ধ হোক। তার সময় অনেক আছে। আমাদের অনেকেরই হয়ত ক্ষোভ অভিমান আছে। কিন্তু ভোটের মুখে দলকে অস্বস্তিতে ফেলার মত কাপুরুষোচিত কাজ তোমাকে আমাকে আমাদের কাউকে মানাবে না। মানাতে পারে না। দলের বিষয় দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করা যাবে।

কিন্তু যে দল তোমাকে নারদার কালি লাগিয়ে সিবিআই ইডির বকলস পরিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, তাদের চক্রান্তে আত্মসমর্পণ করো না।

এখনও বিশ্বাস রাখি, কারণএখনও মনে করি তুমি সেই চেনা শুভেন্দু।

 

Previous articleব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleমেদিনীপুরে মমতার সভা ঘিরে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ