‘ডক্টর’ সীতারামন এবং বেহাল অর্থনীতিকে সবল করার ‘ভ্যাকসিন’

কণাদ দাশগুপ্ত

করোনার ধাক্কায় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ‘প্রশাসনিক চিকিৎসার অভাবে’ ভেন্টিলেশনে গিয়েছে দেশের অর্থনীতি৷ তলিয়ে যাওয়া ইকোনমি’কে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে উপযুক্ত ‘ভ্যাকসিন’- এর খোঁজ নির্মলা সীতারামন পেলেন কি’না, তা জানা যাবে সোমবার৷
দেশ এখনও কোভিড-মুক্ত (Covid-19) হয়নি, টিকাকরণ কর্মসূচি এখনও প্রাথমিক স্তরে৷ কিন্তু এরই মধ্যে নাকি করোনা’র ধাক্কা কাটিয়ে তলিয়ে যাওয়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে গত কয়েকমাস ধরে দাবি করে আসছে কেন্দ্র, আরও স্পষ্টভাবে বললে, প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi) এবং অর্থমন্ত্রী (Nirmala Sitharaman)৷ এই দাবি কতখানি বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে অবশ্য দেশজুড়ে প্রশ্নও তুলেছেন অর্থনীতিবিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। সমান সরব বিরোধীরাও। তাই সেই দাবিরই অ্যাসিড-টেস্ট পয়লা ফেব্রুয়ারি৷ সোমবার অর্থমন্ত্রী হিসাবে নির্মলা সীতারামন তৃতীয়বার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন।

ওদিকে কেন্দ্র তথা শাসক দলের বক্তব্য, করোনা-থাবায় মুখ থুবড়ে পড়া আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার “বিশেষ ত্রাণ বা প্যাকেজ” ঘোষণা করেছিলেন। দেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সিদ্ধান্তে ওই সময়কালে নগদ ও খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার কথা সেদিন ঘোষণা করেছিলেন নির্মলা সীতারামন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপের আগেই অনেকটাই শ্লথ ছিল ভারতীয় অর্থনীতি। তারই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা দেয় করোনা ভাইরাস। ফলে গোটা পৃথিবীর মতোই ধুঁকছে ভারতের অর্থব্যবস্থাও। করোনার আগেও অপুষ্টিতে ভোগা ভারতীয় বাজারে টাকার জোগান অক্ষুন্ন রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু কোনও পদক্ষেপই সুস্থ করতে পারেনি অর্থনীতিকে৷ আর এই ‘অসুস্থ’ অর্থনীতি তড়িৎগতিতে সংক্রমণ ঘটিয়ে ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতে বসা প্রতিটি দেশবাসীকে আশঙ্কিত করেছে৷

আগামী আর্থিক বছরের বাজেটে কী কী ঘোষণা হতে পারে,তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে জোরদার চর্চা চলছে৷ সংসদে ইতিমধ্যেই পেশ হওয়া অর্থনৈতিক সমীক্ষায় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ১১% বৃদ্ধির৷ কিন্তু অর্থনীতিকদের আশঙ্কা, তবুও চলতি অর্থবর্ষে ৭.৭ % হারে অর্থনীতি সংকুচিত হবে৷ IMF বা আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রধান দেশগুলির তুলনায় ভারতীয় অর্থনীতির উত্থান হবে সর্বাপেক্ষা দ্রুতহারে৷ তবে এই মুহুর্তে যেটা বাস্তব, তা হলো, করোনার আগের সময়ের থেকে আগামীদিনে আর্থিক উন্নয়ণের ছবি সেভাবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এখনও পরিস্থিতি খুব একটা ভরসাযোগ্য নয়। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করতে পারেন সীতারামন।

◾বাজেটে কী কী ঘোষণা হতে পারে?

◾করোনা-অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হয়ে দেশের জনস্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দবৃদ্ধি হতে পারে। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় যে প্রচুর ফাঁক রয়েছে, তা ধরিয়ে দিয়েছে করোনা। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় স্বাস্থ্যখাতে খরচের মাত্রা এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে GDP-র ২.৫% থেকে ৩% শতাংশ করা হতে পারে৷

◾মহামারীকালে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য নিয়মকানুন ছাড় দিতে পারেন সীতারামন।

◾করোনা এবং লকডাউনে নড়ে গিয়েছে দেশের অর্থনীতি। লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন৷ ছোট বা মাঝারি ব্যবসা কার্যত উঠে গিয়েছে। নতুন ব্যবসা শুরু করার পর, পরবর্তী মূলধনের অভাবে তা বন্ধ হয়েছে৷ বেতন পাননি অসংখ্য মানুষ৷ অর্থাভাবে ধুঁকছে বহু প্রতিষ্ঠান। শুধুই করোনার ধাক্কা নয়, সাধারণ মানুষের সীমাহীন অর্থনৈতিক ক্ষতিও হয়েছে। এই বেনজির পরিস্থিতির কেন্দ্রীয় বাজেটে কিছু সুরাহার খোঁজ দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী ৷

◾করদাতারা অনেকটাই ছাড় পেতে পারেন৷

◾শহর ও গ্রামের দরিদ্র মানুষজন ছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু হতে পারে৷

◾বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) প্রকল্পের বৃত্ত বা দরিদ্রদের জন্যে নগদ স্থানান্তর করার বৃত্তের পরিধি বৃদ্ধি হতে পারে৷ দরিদ্র প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও বিধবাদের জন্যে DBT-র মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার ঘোষণা হতে পারে৷

◾মনরেগায় মজুরি বৃদ্ধি হতে পারে৷

◾গত মার্চ মাসে মাসে কেন্দ্র যে আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছে, তার রেশ হিসেবেই আগামী অর্থবর্ষের বাজেটকে ধরা হতে পারে।

◾জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কর ছাড়ের ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট থেকে।

◾বাংলা দখলে মরিয়া বিজেপি এই বাজেটে এ রাজ্যের জন্য একাধিক বিশেষ প্রকল্পও ঘোষণা করতে পারে দলীয় রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে৷

পাশাপাশি এটাও ভুললে চলবে না, কেন্দ্রীয় বাজেটের জন্য মানুষ আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করেন৷ অর্থনীতিকে ভাল দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী কী প্রস্তাব রাখলেন অর্থমন্ত্রী, তা দেখার প্রত্যাশা থাকে। সীতারামনের তৃতীয় বাজেটে প্রত্যাশিত বিষয়গুলির অধিকাংশেরই উল্লেখ নাও থাকতে পারে৷ বাজেট পেশের আগের মুহুর্তে মনে হয়, অর্থনীতির সার্বিক অবনতির দিকে দৃষ্টি দেবেন নরেন্দ্র মোদি সরকার। সেই আশা পূরণ নাও হতে পারে৷

আপাতত অপেক্ষা বাজেট পেশের। তাতে কতখানি সুরাহা মিলবে, সেদিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।

আরও পড়ুন- সোমবার তিনদিনের উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী

Advt

Previous articleব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleডুমুরজলাতেই ৭ ফেব্রুয়ারি বিজেপির জবাবি-সভা তৃণমূলের