তিন ললনায় হাটখোলা শোভন

বক্তা হিসাবে শহরের প্রাক্তন মেয়র তালিকার ৮৮-৮৯ নম্বরে থাকবেন। অর্ধেক কথা পেটে এলেও তাঁর মুখে আসে না। ফলে টানা দুরন্ত গতিতে শোভন( shovan) বলছেন, এমন দৃশ্য কার্যত দেখা যায়নি কোনওদিন। নিন্দুকরা বলছেন, টানা তিন বছর গোল পার্কের বিলাসবহুল আবাসনে স্বেচ্ছাবন্দি থেকে, আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ পেয়েও তাঁর বুদ্ধির গোড়ায় যে কিছুমাত্র সার-জল পড়েনি, তা বক্তা শোভন বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তিন নারীতে ‘গ্ল্যাক্সো বেবি’ এতটাই নাকাল যে চায়ের ঠেকের ভাষা ব্যবহার করা শুরু করেছেন। যা দেখে বিজেপি মহলেই আলোচনা, ইনি তিন নারী চরিত্রের মাঝে ‘কিমা’ হচ্ছেন। এতো নিজেও ডুববেন, দলকেও ডোবাবেন।

রত্না-বৈশাখী-দেবশ্রী। প্রথমজন শোভনের ধর্মত ও আইনত স্ত্রী। যদিও শোভন এই ‘বেড়াজাল ও মায়াজাল’ থেকে বের হতে আদালতে গিয়েছেন। এক সময়ে শোভন ঘনিষ্ঠরা বলতেন, দেবশ্রী তাঁর প্রাক্তন বান্ধবী। যা নিয়ে নাকি সংসারে প্রথম অশান্তির শুরু। আর বৈশাখী হলেন শোভনের বর্তমান বান্ধবী। শোভনের ভাষায় বৈশাখী আসলে ঝড়, তাঁর শেষ পাড়ানির কড়ি!!

গেরুয়া ঝান্ডা হাতে নিয়ে মাঠে নামার পর শোভন বারবার মুখ খুলেছেন রত্নার বিরুদ্ধে। শুধু কী মুখ খোলা? রাজনীতির মিছিলে দাঁড়িয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে তিনি তাঁর স্ত্রী সম্বন্ধে বলছেন, রত্নার ফোনে দিনে প্রায় একশোটি কল কার আসত? যদি তা হয়েও থাকে, রোড শোতে দাঁড়িয়ে কোনও নেতার এ কথা বলা সাজে? যদি বলেনও, তার স্থান-কাল-পাত্র আলাদা হতে বাধ্য। শুধু কী তাই, তিনি বলছেন, আমার গোডাউন, সম্পত্তি কেন দখল করে রাখা হয়েছে? গেরুয়া মঞ্চে কোথায় নীতি-আদর্শ নিয়ে কথা বলবেন। না, তিনি সম্পত্তি আর স্ত্রীকে জড়িয়ে কেচ্ছার কথা বলছেন? শোভনের এইসব অবিমৃশ্যকারিতা দেখে তাঁরই এক প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেছেন, আরে ওর এই মস্তিষ্কের উর্বরতার কারণেই না নেত্রী কোনও এক অনুষ্ঠানে মেয়র ‘জল শোভন’কে জলেই ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন!

রত্নাকে শোভন কী-কীভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন? কখনও অভিযোগ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের। কখনও সম্পত্তি হাতানোর। কখনও বলেছেন রত্নার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে, মনোরোগী।

আর বিজেপি নেতাকে কী কী ভাষায় আক্রমণ করছেন স্ত্রী রত্না? বলেছেন, মুখে পচা ডিম গুঁজে দিতে ইচ্ছে হয়। সন্তানের বাবা হয়ে পরস্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বৈশাখীকে পেতে চটির মতো মন্ত্রিত্ব ছেড়েছে। ভাবতে অবাক লাগে এই মানুষটার সঙ্গেই এত বছর ছিলাম!!!

প্রাক্তন বান্ধবী দেবশ্রীকে আক্রমণ করতে গিয়ে অযোগ্য বিধায়ক, টোটো কেলেঙ্কারির নায়িকা, ওর জন্য এলাকার ( রায়দিঘির) মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছি।মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি বলে শোভন ‘ডায়নি’ বলতেও ছাড়েননি। উনি সন্তানের মা নন, তাই ওনার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উপদেশ শুনব না, ওনার সংসারের পরিণতি কী, কেন হলো?

পাল্টা দেবশ্রীর (debashree roy)তোপ… শোভনের মতো মানুষ আসলে সামাজিক অস্বস্তি। যে স্ত্রী ছেলেমেয়েকে আপন করতে পারে না, সে মানুষকে আপন করবে কীভাবে?

বৈশাখী আমার জীবনের ছন্নছাড়া জায়গাগুলো গুছিয়ে দিয়েছে। তাই বন্ধু হিসাবে আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। শোভনের বিখ্যাত এই ডায়ালগ এখন ফিল্মের সেরা সিনের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর বৈশাখী শোভনকে গাছের মগডালে তুলে বলেছেন, উনি আমার আদর্শ, রাজনৈতিক গুরু। আমার দেখা সেরা ব্যক্তিত্ব। কখনও রত্না সম্বন্ধে বলছেন, ওই মহিলার নাম আমি মুখে আনতে চাই না। আবার দেবশ্রীকে বলেছেন অযোগ্য বিধায়ক।

চারজনের মন্তব্যকে জোড়া দিলে নিশ্চিতভাবে একটা উপন্যাস লেখার প্লট হয়ে যাবে। যার নামকরণ এক বিখ্যাত সাহিত্যিক ঠাট্টার ছলে বলেছেন… তিন ললনায় শোভন হাটখোলা!!

আরও পড়ুন:১৮ ফেব্রুয়ারির পর বাংলায় নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের সম্ভাবনা কমিশনের

Advt

Previous article১৮ ফেব্রুয়ারির পর বাংলায় নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের সম্ভাবনা কমিশনের
Next articleশিলাবৃষ্টি নিউটাউনে, ফের নামবে পারদ