পাচারের বিরোধিতা করার ফলেই কি জাকিরের উপর পরিকল্পনা মাফিক বিস্ফোরণ?

হঠাৎ করে নয়, রাজ্যের শ্রম দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জাকির হোসেনের (Jakir Hossain) উপর হামলার (Attack) আশঙ্কা অনেক আগে থেকেই ছিল। ঘটনার গোড়ায় যেতে হলে ফিরে যেতে হবে দু’বছর আগে। মন্ত্রী জাকির হোসেন বরাবরই পাচারের (Smuggling) বিরোধিতায় সরব (Protest)। তাঁর প্রতিবাদী চরিত্রের জন্যই জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। একবার সাংবাদিক বৈঠক করে জাকির বলেছিলেন, “হাজার হাজার গরু মাঠের উপর দিয়ে পাচার হওয়ায় চাষের ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, প্রাণে মেরে দেবে। আমি কাউকে ভয় করি না। প্রতিবাদ করবই।”

এরপরই পাচারকারীদের হুমকির(Threat) মুখে পড়তে হয়েছিল। মন্ত্রীর আশঙ্কা ছিল, যে কোনও সময় তাঁর উপর হামলা হতে পারে, এমনকী তাঁকে মেরে ফেলাও হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে মন্ত্রীর নিরাপত্তাও (Security) বাড়ানো হয়। তবে এত কিছুর পরেও তাঁর উপর হামলা আটকানো যায়নি। বুধবার রাতে নিমতিতা স্টেশনে পরিকল্পনা করেই তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে খবর, প্রায় দু’মাস আগেই জাকির হোসেনকে খুনের ছক কষা হয়েছিল। তিনি কখন, কোথায়, কার সঙ্গে যাচ্ছেন— সবই ছিল আততায়ীদের নখদর্পণে। একাধিকবার রেইকি করা হয়েছে। বুধবার রাতে তিনি কখন স্টেশনে আসবেন, সেই খবরও ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। সেইমতো বোমা রাখা হয়েছিল প্ল্যাটফর্মে। অনেক অঙ্ক কষে তাঁর উপর হামলা চালানো হয়েছে। এই বিস্ফোরণের সঙ্গে গরু পাচারকারীদের সরাসরি যোগ থাকতে পারে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

সিআইডি’র পাশাপাশি জেলা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্তকারীরা নিশ্চিত, অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরক ব্যাগে ভরে প্ল্যাটফর্মে আগেই রাখা হয়েছিল। মন্ত্রী যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, সেই সময় ওই ব্যাগটি নজরে আসে তাঁর অনুগামীদের। তাঁদেরই একজন সেটি সরাতে গেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়।

আবার বিস্ফোরক হিসেবে IED ব্যবহার করা হয়েছিল কি-না, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের সন্দেহ বাড়ে, বিস্ফোরণস্থলের কিছুটা দূর থেকে উদ্ধার হওয়া একটা তারের টুকরো দেখে। আর সেইসঙ্গে রেললাইন থেকে পাওয়া ব্যাটারির ২টো টুকরো। এখন এগুলি IED-র অংশ কিনা, তা নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থল থেকে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এখন নমুনায় পাওয়া রাসায়নিক পদার্থ যদি ব্যাটারি ও তারের টুকরোতেও মেলে, তবে IED ব্যবহার করে বিস্ফোরণের তত্ত্ব-ই জোরালো হবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কলকাতায় আসার ট্রেন ধরার জন্য মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন মন্ত্রী জাকির হোসেন। সেই সময়ই হামলার ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে মারাত্মক জখম হন তিনি। বাঁ পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে তাঁর। আঘাত লাগে শরীরের একাধিক অংশেও। আজ এসএসকেএমে মন্ত্রীর অস্ত্রোপচার হয়। হামলার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ইতিমধ্যেই এসটিএফ, আইবি, সিআইএফ, স্থানীয় পুলিশকে নিয়ে এডিজি সিআইডি অনুজ শর্মার নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে।

আজ, শুক্রবার ঘটনাস্থলে যাবে সিট। তবে হামলার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই হামলা কিনা, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

 

Previous articleবারবার প্রত্যাখ্যাতরা ফেরাতে পারবেন বামভোট ! কণাদ দাশগুপ্তর  কলম
Next articleউদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতি: সংক্রমণ ঠেকাতে মহারাষ্ট্রের দুই জেলায় ফের ‘লকডাউন’