Wednesday, May 14, 2025

বারবার প্রত্যাখ্যাতরা ফেরাতে পারবেন বামভোট ! কণাদ দাশগুপ্তর  কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

জোট বা আসন সমঝোতা যতই হোক, প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক কাদের দেখে বাংলার মানুষ ভোট দেবেন বামেদের ?

প্রায় দেড় দশক ধরে যে মুখগুলি সামনে রেখে বামেরা এ রাজ্যের সর্বস্তরের নির্বাচনে গিয়েছে, প্রতিবারই রাজ্যের নির্বাচকরা সেই মুখগুলিকে খারিজ করেছে৷ ২০২১-এর গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনেও সেই একই মুখ বামেদের তরফে ভোট চাইতে নেমেছেন৷ এনাদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে ঠেকে যাওয়া সত্ত্বেও, বিকল্প উপযুক্ত মুখের অভাবে তাঁরাই এবারও বামেদের ‘পোস্টার-ম্যান”৷ এই পোস্টার-ম্যান বাহিনী পরের পর নির্বাচনে দল বা ফ্রন্টকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি৷ অনেকের গায়েই ‘হেরো’ ছাপ লেগেছে৷ নেতৃত্বের চরম সংকটে ভুগছে বামেরা৷ ফলে এবারের ভোটেও আলিমুদ্দিনের হাতে সেই পক্ককেশ-ব্রিগেড৷ তাঁরাই ফের প্রার্থী হবেন, তাঁরাই অন্য প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন এবং ফলপ্রকাশের পর জেলা কমিটি থেকে পলিটব্যুরো, পর পর আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডেকে ‘শোকপ্রস্তাব’ গ্রহণ করবেন বিগত নির্বাচনগুলির মতোই৷

এই সংকট সম্পর্কে আলিমুদ্দিন যথেষ্টই ওয়াকিবহাল৷ অথচ বিকল্প ভাবনাচিন্তা করার উপায় নেই বামফ্রন্টের৷ ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন পরম নিষ্ঠায় এবং পরিকল্পিতভাবে ‘পঙ্গু’ করে রাখে দলের ছাত্র-যুব শাখাকে৷ যে কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র বা যুব শাখাই ওই দলের উপযুক্ত, পরীক্ষিত, নেতা সরবরাহ করার ‘সাপ্লাই-চেন’৷ সেই সরবরাহের পথটাই বন্ধ করে দেন তৎকালীন দোর্দন্ড প্রতাপশালী মহাকরণ আর আলিমুদ্দিন ৷ পাছে তারা ছাত্র বা যুবস্বার্থে বাম সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলনে নেমে পড়ে৷ ছাত্র-যুবরা প্রথাগতভাবেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী৷ প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাতেই সফল নেতা উৎপন্ন হয়৷ বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বার বার এর প্রমান দিয়েছে৷ সেই ক্ষেত্রটিকে কার্যত নিষিদ্ধ করে দেয় শাসক বামেরা৷ যার ফল এখন ভুগছে আলিমুদ্দিন৷ দলের সর্বস্তরে চরম সংকট উপযুক্ত নেতৃত্বের৷ নতুন মুখ হিসাবে জেলা বা রাজ্যস্তরে বামেরা যাদের দায়িত্বে এনেছে, তাঁদের অধিকাংশকে পাশের বাড়ির লোকজনও চেনেন না৷ এর মাঝে অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে, তবে তাদের সংখ্যা এতটাই কম যে বামেদের চাদরে মাথা ঢাকতে গেলে পা উন্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ এমনই তো হওয়ার ছিলো৷
ঠিক একই পথে হাঁটছে বর্তমান শাসক দলও৷ দলের ছাত্রশাখা এখন কাগজ-কলমে৷ ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়না চার বছর৷ পরীক্ষিত, অভিজ্ঞ নেতা তৈরি হবে কোথা থেকে ?

ফলে, এই একুশেও নিরুপায় বামেদের হাতিয়ার সেই সব মুখগুলি, যাদের বাংলার মানুষ ফিরিয়ে দিয়েছে বহু বছর আগে৷ যাদের নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতাই আজ প্রশ্নের মুখে, তাঁদের কথায় বাংলার মানুষ আস্থা রাখবেন কেন? শুধু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোটে কোনও কেন্দ্রে কোনও দলের কোনও প্রার্থী জয়ী হননা৷ সাধারণ মানুষের সমর্থন একশো শতাংশ প্রয়োজন৷ অন্য দলের প্রতি আগ্রহশীল সাধারণ মানুষ কাদের দেখে বামপ্রার্থীদের সমর্থন করবেন ?

এই সব কারনেই সিপিএমের নতুন প্রজন্ম জোরালো দাবি তুলেছে, এবারের ভোটে ‘ফ্রেশ’ প্রার্থী চাই, প্রচারে এই জেনারেশনের ‘টেস্টেড’ নেতা-নেত্রীদের প্রাধান্য দিতে হবে৷ আলিমুদ্দিনের পাকা-চুল বাহিনীকে ‘আতঙ্কিত’ করে এই দাবি ক্রমশই জোরালো হচ্ছে৷ দলের অন্দরে দাবি উঠেছে বিধানসভা ভোটে সামনের সারিতে আনতে হবে JNU ছাত্রসংসদের বাঙালি ছাত্রনেতা নেত্রীরা। দাবি উঠেছে, দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী করতে হবে JNU ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষকে। হাওড়ার কোনও আসন থেকে প্রার্থী করতে পারেন আরেক JNU প্রাক্তনী দীপ্সিতা ধরকে।
আলিমুদ্দিনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ২৮ তারিখের ব্রিগেডে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকবেন না৷ বুদ্ধবাবু আজও ‘আইকন’ হিসাবেই বাংলায় সমাদৃত৷ কিন্তু শারীরিক কারনে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব৷ তাহলে কে অক্সিজেন যোগাবেন বাম কর্মী-সমর্থকদের ? বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম বা শরিক দলের
পর্দার আড়ালে থাকা ‘শীর্ষ’ নেতারা আজ ওজন হারিয়েছেন৷ কার কথায় টগবগ করে ফুটবেন ব্রিগেডে আসা বাম-জনতা ?

তাই আওয়াজ উঠেছে, ব্রিগেডে বামেদের প্রধান বাম-মুখ হিসাবে রাখতে হবে কানহাইয়া কুমারকে৷ তাঁর ‘আগুন ঝরানো’ বক্তৃতার প্রভাব অসীম৷ এই মূলধনকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে৷

কিন্তু ঐশীদের প্রার্থী করা বা কানহাইয়াকে সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে মানসিকভাবে কতখানি প্রস্তুত আলিমুদ্দিন? নতুন প্রজন্মের গ্রহণযোগ্যতা বা সাফল্য তো পাকাপাকিভাবেই
পক্ককেশদের বাণপ্রস্থে পাঠাতে পারে ?

এই হারাকিরিতে কতখানি আগ্রহী বামনেতারা, সেটাই এবার দেখার ৷

spot_img

Related articles

সন্ত্রাসবাদ রোখার সময় শান্তি চেয়ে পথে! বাম মিছিলে ইন্দিরা-স্তূতি

গোটা দেশ একজোট হয়ে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থনের পথে গিয়েছে সিপিআইএম (CPIM) কেন্দ্রীয়...

আন্টি ও মনে হয় আর নেই: আকুল হয়ে রিঙ্কুকে ফোন করেন প্রীতমের বান্ধবী

যে ফোনটি পেয়ে উদভ্রান্তের মতো ছুটে গিয়েছিলেন সৃঞ্জয় দাশগুপ্তর মা রিঙ্কু মজুমদার, সেটি করেছিলেন তাঁর বান্ধবী। ফোনে তিনি...

রাজ্যের পরিবহনে নতুন দিশা! ১ কোটিরও বেশি যাত্রা সম্পূর্ণ ‘যাত্রী সাথী’র  

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি হওয়া অ্যাপ-নির্ভর ক্যাব পরিষেবা ‘যাত্রী সাথী’ ইতিমধ্যেই ১ কোটিরও বেশি সফল যাত্রা সম্পূর্ণ করেছে।...

রেকর্ড রূপান্তরকামীদের! সিবিএসই দশম-দ্বাদশের ফল প্রকাশ, এগিয়ে মেয়েরাই 

একইসঙ্গে প্রকাশিত হল সিবিএসই দশম ও দ্বাদশের ফল। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৩৯ দিনের মাথায় প্রকাশিত হল সেন্ট্রাল বোর্ড...