জলসংরক্ষণের এটাই সঠিক সময়: সিআইআই ওয়াটার কনক্লেভে মত বিশেষজ্ঞদের

জলই জীবন। এক অনন্য সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জলকষ্ট দেখা দেয়। এখন থেকেই জল সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংগ্রহ এবং জলের পুনর্ব্যবহার এসব নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে। এই নিয়েই সিআইআই (CII) ওয়াটার কনক্লেভে মঙ্গলবার, “জলসুরক্ষা এবং রিসোর্সের পুনরুদ্ধার একত্রিকরণঃ একটি স্থিতিস্থাপক ও প্রযুক্তিচালিত ভবিষ্যত” এই ব্যানারে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ‘জল সংরক্ষণ’-এর বিষয়টি নিয়ে একটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনার শুরুতেই ন্যাশনাল ওয়াটার মিশন-এর মিশন ডিরেক্টর অশোক গোয়েল(Ashok Goyal) বলেন, জল মানুষের জীবন। কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে কলকারখানা সর্বত্রই জলের চাহিদা। কিন্তু এখন সময় এসেছে, যতটা কম পরিমাণে জল ব্যবহার করা যায় তা দেখা এবং কীভাবে পরিশোধিত জল সংরক্ষণ করা যেতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা। সরকার সেই নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন। সরকার জমি অধিগ্রহণ এড়াতে সেচের জল পরিবহনের জন্য ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনগুলির দিকে নজর দিচ্ছে। আরও কিছু চিন্তাভাবনা চলছে। যেমন বিভিন্ন স্তরের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকর করা দরকার, যার জন্য সকল রাজ্যের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ডঃ রবি কুমার পিল্লাই(Dr Ravi Kumar Pillai) বলেন , “ভারত একটি দেশ যেখানে জলের ঘাটতি রয়েছে” তবে সেটিকে পরিবর্তন করতে তাকে “একটি পর্যাপ্ত জলের দেশে” রূপান্তরিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী জলের সহজলভ্যতায় ৮.৬% অংশীদারিত্ব থেকে প্রমাণিত হয়। অণু স্তরের ঘাটতি পরিচালনার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত জলের ব্যবস্থাপনাকে(WATER MANAGEMENT) একসাথে পরিচালনা করা দরকার। ডঃ পিল্লাই জলসম্পদ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটিকে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কেন্দ্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে “পরিচালন প্রক্রিয়া” হিসাবে দেখা দরকার।

অভিনাশ মিশ্র(Abhinash Mishra) (আডভাইসর অব ওয়াটার রিসোর্স নীতি আয়োগ) জানান, কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ৯০% জল ব্যবহার করা হয় এবং মাত্র ৪-৫ শতাংশ জল গৃহস্থালী এবং শিল্প খাতে খরচ হয়, ফলে জলের অপচয় হ্রাস করা হয় না।  তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ঘন মেট্রিক জল অপচয় হয় যা নদী এবং ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে তোলে। বিশ্বের দরবারে সর্বোচ্চ জল উত্তোলিত হয় ভারতে। প্রায় ২৫১ বিলিয়ন ঘনমিটার ভূগর্ভস্থ জল এখানে উত্তোলিত হয়। জল বাঁচাতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এবং এটাই সঠিক সময়। জলের সংস্থান ঠিক রেখে ভবিষ্যতের জন্য জল সংরক্ষণের পথকে সুগম করতে পারি বলে জানান তিনি।

“জল বাস্তু ও অর্থনীতি উভয়ের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ”,বলেন সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ডের চেয়ারম্যান জিসি পাতি(G C Pati)। তিনি এদিন জানান, ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জলই সেচের জন্য নিষ্কাশন করা হয়, যা জল সরবরাহের একটি প্রধান উৎস। পাশাপাশি এটি জলস্তরও দিনে দিনে নীচের দিকে চলে যাচ্ছে। যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। সেইসঙ্গে তিনি বলেন জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের খারাপ প্রভাবগুলিও আমাদের ভুললে চলবে না। জলের ব্যবস্থাপনা (WATER MANAGEMENT)-এর বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে জোড় দিতে হবে। ভবিষ্যতে জলসম্পদটিকে ভালোভাবে সুরক্ষার জন্য আমাদের জলের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার, জলের অপচয় হ্রাস, বৃষ্টির জল সংগ্রহ এবং জল সংরক্ষণের দিকে সজাগ হতে হবে। সেইসঙ্গে জল নিরীক্ষণ নির্বাচনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। পরিশোধিত জল ও অপরিশোধিত জলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। এবং সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর অবিশুদ্ধ পানীয় জলের কারণে শিশু মৃত্যুর মত বিষয়টি নজরে আসে।

পিল্লাই-য়ের কথাকে সমর্থন জানিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার আপ্লিকেশন মার্কেটিং ম্যানেজার চঞ্চল দাসগুপ্ত(Chanchal Dasgupta) বলেন, যে আমিও মনে করি জলের অভাবের বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে জল কী করে সংরক্ষণ করা যায়, সেটি দেখা উচিত। বিশেষত মেট্রো সিটিগুলিতে জল কতটা নষ্ট হচ্ছে এবং কীভাবে নষ্ট হচ্ছে সেটা নজর রাখা উচিত। বিশেষ করে নাগপুর(Nagpur) শহরে পানীয় জল খুবই নষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের পলিএথিলিন পাইপ ব্যবহার করা উচিত। গ্যাস ইন্ডাস্ট্রিগুলি ০ % গাস লিকেজ নিশ্চিত করেছে। সুতরাং পলিএথিলিন পাইপ ব্যবহার করে জলের লিকেজও কম করা সম্ভব। তবে জলের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের পলিএথিলিন পাইপ ব্যবহার করা উচিত।

Advt

Previous articleবাংলার ভোটযুদ্ধে নাড্ডার গলায়, ‘বাটলা হাউস’ প্রসঙ্গ
Next articleএবার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের বিলগ্নীকরণের পথে কেন্দ্র