চমক। সারদা (saradha) বিতর্কে এক অভিনব নজির। সারদা মিডিয়ার বেতন তো বটেই, বিজ্ঞাপনের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন কুণাল ঘোষ ( kunal ghosh)। বিজ্ঞাপন নিয়েছে বহু মিডিয়া এবং বহু সংগঠন। কেউ ফেরতের নামও করেনি। কুণাল বৈধ আয়ও ফেরত দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি এসবের তোয়াক্কা না করে লম্বা ইনিংসের কথা ভাবছেন। ইডি সূত্রে খবর, তাঁরাও কুণালের এই ভূমিকায় খানিকটা চমকে গিয়েছেন। সন্তুষ্টও হয়েছেন। তবে তদন্তের অন্য বিষয় নিয়ে কুণাল মুখ খোলেননি।

বুধবার ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন-
শুধু বেতন নয়, বেনজিরভাবে সারদার বিজ্ঞাপনের টাকাও স্বেচ্ছায় ফেরাচ্ছি। এবার বলুন !!

সারদা থেকে আমার আয়ের প্রতিটি টাকা বৈধ। নিয়োগপত্র, ব্যাঙ্ক, আয়করে প্রতিষ্ঠিত। রীতিমত পেশাদারি কাজ করে পাওয়া। এই টাকা ফেরতের কোনো দায় আমার ছিল না। তদন্তকারী সংস্থা অনেকের সম্পত্তি নিলেও আমার কোনো সম্পত্তি দখল করেনি। তদন্তের রুটিন নিয়মে সারদার চেক ঢোকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘নো ডেবিট’ করে রেখেছে শুধু।

আয় বৈধ ও আইনি হলেও স্রেফ মানসিক কারণে আমার এই টাকা ফেরতের ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছে বহুদিনের। সেই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সারদার মিডিয়ার সঙ্কটেই তো বৃহত্তর স্বার্থে বেতন বাবদ টাকা থেকেই সাহায্য দিয়েছিলাম আমি।

২০১৩ অক্টোবর। আমি ইডির মুখোমুখি। সব নথিসহ।
২০১৫। ইডি অনেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল। আমার নাম নেই।
২০১৭। আমি জানালাম আয় বৈধ। তবু আয়কর এবং কোম্পানিকে দেওয়া টাকা বাদে বাকি ফেরাতে চাই। বিতর্কিত টাকার এক পয়সা রাখব না।

বলা সহজ। ইচ্ছে ইতিবাচক। কিন্তু সামর্থ কম। কারণ, ততদিনে চক্রান্তমূলকভাবে গায়ের জোরে আমার বন্দিজীবন। প্রথমে রাজ্য পুলিশ, পরে সিবিআইতে হস্তান্তরিত। আইনি যুদ্ধে প্রথমদিকে জলের মত টাকা খরচ। ওদিকে মা গুরুতর অসুস্থ। ফলে স্বেচ্ছায় ফেরত বললেও টাকা জোগাড় কঠিন।

এছাড়া আমার সিদ্ধান্তও ছিল জেদের বশে। শুধু বেতন নয়, আমার অনুরোধে আমার কোনো ইভেন্টে বা কাগজে সারদার যা বিজ্ঞাপন এসেছিল, সেটিও ফেরত দেব। আর্থিক চাপ নিয়েও যখন টাকা ফেরত দেব, তখন এক পয়সাও রাখব না।

এই বিজ্ঞাপনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার সংস্থায় বিজ্ঞাপন এলেও সেটা কোনো কর্মসূচিতে। সাহিত্য সম্মান স্পনসরশিপ, কাগজের বিজ্ঞাপন, সিনেমার পার্ট স্পনসর। এখানে অন্য বিজ্ঞাপনদাতারাও ছিলেন।
মনে রাখবেন, সারদা বা এই ধরণের সংস্থা থেকে বিজ্ঞাপন সবাই নিয়েছে। তাবড় সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন- সবাই। আমি প্রথম নই। একাও নই। আর এই বিজ্ঞাপনবাবদ টাকা আয়োজনজনিত বহু কাজে খরচ হয়েছে, বহু মানুষ পেশাদারি আয় করেছেন।

আরও পড়ুন-শুভেন্দু’র হয়ে প্রচারে নামছেন শিশির অধিকারী, তৃণমূল ত্যাগের জল্পনা তুঙ্গে

কেউ এক টাকার বিজ্ঞাপন ফেরত দেয়নি। হয়ত দেওয়ার কথাও নয়।

কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত ছিল দেব। এক কণাও রাখব না। পারিবারিক বসতবাটি বন্ধক, মায়ের চুড়িবিক্রি, শুভানুধ্যায়ীদের থেকে ঋণ- সম্ভাব্য সব উপায় নিয়ে অঙ্ক কষে এগিয়েছি। জ্ঞানত কোনো অন্যায় না করেও ঘটনাচক্রজনিত কারণে আমি লক্ষ্যবস্তু। জীবন অনেক বাকি। আমি সারদার একটি পয়সাও নিয়ে চলব না।

অবশেষে সেই অঙ্কটি মেলানোর পরিস্থিতিতে এসে পৌঁছনো গেছে। বেতন এবং আমার ইভেন্ট বা কাগজে বিজ্ঞাপনবাবদ সারদার থেকে এসে থাকা পুরো পরিমাণ ফেরতের জায়গায় আমি পৌঁছেছি। স্বেচ্ছায়, অপরাধ ছাড়া বিবেকজনিত কারণে। ইডিকে আমি ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা দিচ্ছি। কিছু জীবনবীমা আর ‘নো ডেবিট’ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ইডিকে গ্রহণ করতে বলেছি। বাকি টাকা ডিমান্ড ড্রাফটে দিচ্ছি। যাঁরা এই পর্বে চরম বিপদে, তাদের দিয়ে দেওয়া হোক।

আমি সারদায় আয়মুক্ত জীবনে আগেও ছিলাম। ভবিষ্যতেও থাকব। মামলা যা আছে বা আইনিভাবে থাকবে, সাধ্যমত লড়ব।
যে বা যারা আমাকে এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পাশে থাকলেন, ঋণ দিলেন, আমি কৃতজ্ঞ।

এর সঙ্গে দুটি কথা।
1) আমি বেতন ছাড়াও বিজ্ঞাপনের টাকা ফেরত দিয়ে নজির রাখলাম।
ফলে সব মিডিয়া, যারা চিটফাণ্ডের খবর করে, তারা অন্যের খবর করার আগে নিজেরাও সব চিটফাণ্ড থেকে আসা টাকা ফেরত দিক। সব সংগঠন, সংস্থাও ফেরত দিক। যাদের কাছে বৈধভাবে আসা সারদার টাকাও আছে, তারাও ফেরত দিক।
2) নিয়োগপত্র, চেক পেমেন্ট, আয়করের পরেও আমি স্বেচ্ছায় ফেরত দিচ্ছি। কিন্তু যে বা যারা অবৈধ নগদে নিয়েছে, পরোক্ষভাবে নিয়েছে, তারা কেন নিশ্চিন্তে তদন্তের বাইরে থাকবে? আমার অনুরোধ, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রী ও সুবিধেভোগীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা হোক। অবৈধ নিলে প্রমাণ ছাড়া বহাল তবিয়ত আর বৈধ নিলে তদন্ত, এটা চলতে পারে না।
পুনশ্চ: আমাকে দুএকজন বলেছেন, মিঠুনদা তো আগেই ফেরত দিয়েছেন।
মিঠুনদাকে সম্মান দিয়েও আমার বক্তব্য:
আমি দিতে শুরু করেছি ২০১৩ সালে সারদা মিডিয়ার সঙ্কটের সময়। বাঁচাতে।
তখন মিঠুনদা কোথায়? তখন দিলে কোনো মিডিয়াকে হয়ত বাঁচানো যেতো।
যখন রাজ্য সরকারের তদন্ত চলছিল, শ্যামল সেন কমিশন ছিল, তখন তৃণমূল সাংসদ মিঠুনদা কোথায় ছিল?
যখন মামলায় ইডি, সিবিআইর চাপ বাড়ল, তখন মিঠুনদার ফেরত মনে পড়ল।
তাছাড়া মিঠুনদা এক বছরে যতগুলি যা যা কাজের চুক্তি ছিল, তা করা হয়ে ওঠেনি। মাত্র নটা পর্ব শুটিং হয়েছিল।
ফলে মিঠুনদা কাজ না করে পাওয়া টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর সব টাকাই কি ফেরত দিয়েছেন? আমি ঠিক জানি না।🤫 অন্যদিকে আমি উদয়াস্ত কাজ করে কাগজ, চ্যানেলগুলি জনপ্রিয় করেছিলাম।
দয়া করে তুলনা করবেন না।
যাই হোক, স্রেফ মানসিক জেদ থেকে স্বেচ্ছায় বেতন এবং বিশেষভাবে বিজ্ঞাপনবাবদ পাওয়া বৈধ টাকাও ফেরত দিচ্ছি। এতে হয়ত আর্থিক চাপে থাকব। কিন্তু আমি খুশি। বিশ্বাস করি এতে ঈশ্বরও খুশি হবেন।
তদন্তে আমার সহযোগিতা ছিল, আছে, থাকবে।
তদন্তও নিরপেক্ষ থাকুক।