কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়লেন মহিলা মৎস্যজীবী

দেওরকে সঙ্গে নিয়ে গাড়োল নদীর পাড়ে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের রীনা মণ্ডল। প্রাণ হাতে করে এর আগেও অনেকবার কাঁকড়া ধরেছেন তিনি। বাঘের ভয় সেদিনও ছিল। কিন্তু এবার আর সেই ভয়কে জয় করতে পারলেন না রীনা। বুধবার সকালে সকলের অলক্ষ্যে আচমকাই রীনার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে বাঘ। পলকের মধ্যে রীনার দেহ নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায় ‘দ্যা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’। প্রত্যক্ষদর্শীরা ততক্ষণে নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। নিমেষে বাঘের মুখে বৌদির এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছিলেন না রীনার দেওর, মহন্ত মণ্ডল। জানান, বৌদিকে চোখের সামনে বাঘের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে পড়েছিলাম।

পেশায় মৎস্যজীবী রীনা মণ্ডলের বয়স ৪৭। সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের লাহিড়িপুর এলাকার বিধান কলোনির বাসিন্দা ছিলেন তিনি। বুধবার দলের অনান্যদের সঙ্গে কাঁকড়া ধরার সময় দেওরও ছিলেন। কিন্তু বাঘের মুখ থেকে কেউই রীনাকে উদ্ধার করতে পারেনি। বৌদিকে বাঘ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর হতবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ছিলেন দেওর। তারপর সম্বিৎ ফিরতেই চিৎকার করতে করতে ছুটে যায় বাড়িতে। পরিবারের সকলকে বৌদির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর দিতেই শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। ঠিক এমনভাবেই চার বছর আগে জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন রীনার স্বামী।
বনদফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ মৎস্যজীবীর বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া যে সমস্ত জায়গায় মাছ ও কাঁকড়া ধরার উপর বনদফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, অনুমান করা হচ্ছে সেখানেই গিয়েছিলেন রীনা। এর আগেও এহেন ঘটনা ঘটেছে। বনদফতর আধিকারিকের দাবি, নিষিদ্ধ জায়গায় মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এক শ্রেণির মৎস্যজীবী সেই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেইসব স্থানেই যান এবং বিপদের মুখে পড়েন, এই ঘটনাও তারই পুণরাবৃত্তি। সেইকারণে এই সমন্ধে আরও বেশি সচেতনতা অবলম্বন করা জরুরি।

অন্যদিকে সুন্দরবনে বাঘের মুখে পড়ায় স্বামীহারা মহিলাদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে বাসন্তী ব্লকের শিবগঞ্জ চম্পা মহিলা সোসাইটি। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য,’সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের আক্রমণে মৎস্যজীবীদের মৃত্যু নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়েছে। স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছেন বহু কমবয়সী মেয়ে। তাই সরকারের প্রতি আবেদন তাঁরা বিকল্প কোনও জীবিকার সন্ধান দিলে মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। সেক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মৃত্যুও ঠেকানো সম্ভব হবে’।

Advt

Previous articleCAA ও NRC-র জন্য দেশে কতগুলি ডিটেনশন ক্যাম্প? জবাব দিলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক
Next articleপ্রয়াত ‘মিত্র ও ঘোষে’র অন্যতম কর্ণধার ইন্দ্রানী রায়, শোকস্তব্ধ বইপাড়া