চতুর্থ দফায় রক্তাক্ত ভোটের (West Bengal Assembly Election) সাক্ষী ছিল রাজ্যবাসী। কোচবিহারের (Coachbihar) শীতলকুচিতে (Shitalkuchi) কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central Force) গুলিতে চার তরতাজা যুবকের মৃত্যু নিয়ে উত্তাল রাজনীতি। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শাসক-বিরোধীদের।
কেন চার চারটে তরতাজা প্রাণের বলি হলো? কেন্দ্রীয় বাহিনীর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালানোর মতো কি পরিস্থিতি আদৌ তৈরি হয়েছিল? গ্রামবাসীদের দিক থেকে কি কোনও প্ররোচনা ছিল? শীতলকুচির অভিশপ্ত সেই ১২৬ নম্বর বুথে গত শনিবার চতুর্থ দফার ভোটের দিন ঠিক কী হয়েছিল?
নির্বাচন কমিশনের কাছে যে এসেছিল সেখানে বলা হয়েছে, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে প্রায় তিনশো গ্রামবাসী কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে ধরে তাঁদের উপর হামলা চালায়। আর আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছে বাহিনী। এবং সেই গুলি চালানোর ঘটনাতেই মৃত্যু হয়েছে চার যুবকের। আরও চারজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। একটা মহল থেকে বাহিনীর বন্দুক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও রটিয়ে দেওয়া হয়।
তবে “দুধ কা দুধ, পাণি কা পাণি” হয়ে যায়, গতকাল বুধবার ঘটনার দিন ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে হাজির স্থানীয় কারও মোবাইলে তোলা একটি ভিডিও একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হতেই প্রশ্ন উঠে গেল সেই দাবি নিয়ে। পরবর্তী সময় যা অন্যান্য মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয় যায়।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথের বাইরে জটলা করছেন বেশ কিছু মানুষ। তবে সংখ্যাটি কখনওই ২০-২৫ জনের বেশি নয়। মহিলাররাও ছিলেন। অনেকে হাতে চ্যালাকাঠ-বাঁশ নিয়ে ঘুরছিলেন। কিন্তু সেভাবে আক্রমণাত্মক ছিলেন না। বুথের সীমানার বাইরেও ধীরে ধীরে তাঁরা বেরিয়ে আসছিলেন বাইরে। বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু কোনও বিক্ষোভ বা আক্রমণের ঘটনা গুলি চালানোর ভাগে অন্তত এই ভিডিওতে ঘটতে দেখা যায়নি।
এরই মাঝে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায় বুথের বাইরে। জওয়ানদের তেড়ে আসতে দেখা যায়, কিছু মহিলার চিৎকার শোনা যায়। আর তখনই ভয়ঙ্কর সেই গুলির শব্দ। বেশ কয়েক রাউন্ড।
এরপর প্রাণ বাঁচাতে আর্তনাদ করতে করতে তখন দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়তে শুরু করেছেন মানুষ। মহিলা কণ্ঠে “ও বাবা গো’’, “গুলি করে দিলো গো” চিৎকার আর কান্নার রোল।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথআমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মূল গেটের সামনে পড়ে রয়েছে লাল জামা-কালো প্যান্ট পরিহিত একটি দেহ। নিথর, ধরে প্রাণ নেই। গলায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। ক্যামেরা মাঠে ঢুকতেই দেখা গিয়েছে এমনও আরও দু’টি দেহ। তারপর বুথের দরজায় আছড়ে পড়ে জনআক্রোশ। অনেকেই এম্বুলেন্স এম্বুলেন্স বলে চিৎকার শুরু করে।
ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পরই বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তুলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দাবি করেছে, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই সরাসরি বুক-পিঠ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাতেই মৃত্যু হয়েছে চারজন নিরীহ ভোটারের। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন সেই খবরের লিঙ্ক পোস্ট করে ট্যুইটারে লিখেছেন, “এই ভিডিও ফুটেজ মোদি-শাহ এবং নির্বাচন কমিশনের পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। যা আগে কখনও হয়নি। শীতলকুচিতে ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা হয়েছে। নিরীহ নাগরিকদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। লজ্জা!” ভিডিওটি খতিয়ে দেখছে কমিশন। তদন্তে নেমে ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।