Monday, August 25, 2025

প্রচার পছন্দ করতেন না। মাত্রাতিরিক্ত বাক্যালাপ, নিজেও করতেন না। তাঁর সামনে কেউ করলে তাকে প্রশ্রয়ও দিতেন না।

তাঁর রাজনৈতিক সত্ত্বা ছিল। প্রবলভাবে ছিল। তাঁর প্রতিটি লেখায়, কবিতায় রাজনৈতিক ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু কোনও দিনই নিজেকে স্লোগান করে তোলেননি। বা কোনও এক পক্ষের সমর্থনে নিজেকে প্রতীকী করে তুলতে চাননি। বহুত্ববাদ, সমাজবাদ ছিল তাঁর জীবনদর্শন। আজীবন তিনি ছিলেন মানবতার উপাসক। মানবতাবিরোধী যে-কোনো পদক্ষেপে স্পষ্ট অথচ দৃঢ় প্রত্যাখ্যান ফিরিয়ে দিতে পিছপা হননি এই মিতবাক কবি।  প্রতিটি মানুষকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়াই মানুষের ধর্ম। এই ছিল তাঁর আড়ম্বরহীন জীবনযাপনের শিক্ষা। সে ব্যক্তিগত জীবনের ছোটো ছোটো ঘটনাই হোক কিংবা তাঁর  সাহিত্যকীর্তি। সর্বত্রই ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে তাঁর জীবনের এই বাণী। সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই শঙ্খ ঘোষ  রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু অতি নীরবে। তাঁর হৃদয় যে রাজনৈতিক ভাবধারার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হতে চেয়েছিল তাকেই তিনি আপন করেছেন। আর তা হল মানবতা। তিনি জীবনের কথা বলতেন। দিন বদলের কথা বলতেন। নতুন জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু অত্যন্ত নীরবে। সন্তর্পনে।  তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে তিনি আগামীর  স্বপ্নের কথা লিখেছেন।  তাঁর প্রতিটি কবিতা, প্রতিটি শব্দ-বর্ণ জীবন ছুঁয়ে থেকেছে কিন্তু কখনও স্লোগান হয়ে যায়নি। কারণ তিনি নিজেকে স্লোগান হতে দেননি। প্রচারসর্বস্ব হতে চাননি ।  ধর্ম নিয়ে উন্মাদনা, সম্প্রদায় নিয়ে ভেদাভেদ কখনওই পছন্দ করতেন না। তাই তো শঙ্খবাবুই  প্রস্তাব দিতে পারেন, ‘যদি অল্পবয়সের ছাত্রছাত্রীদের স্কুল বিনিময় চালু করা যায়, যেমন হিন্দু এলাকার স্কুলের কিছু ছাত্রদের মুসলিম এলাকার স্কুলে এক সপ্তাহ পড়তে পাঠানো হলো, আবার উল্টোটাও । এটা করে দেখা যেতে পারে। তাহলে হয়তো কমবয়স থেকেই তাদের মধ্যে একটা পারস্পরিক আস্থাবর্ধক পরিবেশ গড়ে তোলা যাবে। বুঝতে পারবে একে অন্যকে।  ধর্ম নয়, মানুষের অগ্রাধিকার হল তার আত্মসম্মান।’ জীবনকে এতো সহজভাবে সর্বজনগ্রহণীয় করে তোলার ভাবনা তঁর পক্ষেই সম্ভব। তাই তো নন্দীগ্রাম, কামদুনি, সিঙ্গুর সব ক্ষেত্রেই তিনি প্রতিবাদী হয়েছেন। দল-মত-ধর্ম-ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে। কোনও একটি রঙ তাঁকে রাঙিয়ে দিয়ে যাক এমন ভাবনা তাঁর ছিল না। তাই বারবার নানা ঘটনার প্রতিবাদে তিনি রাজপথে পা রেখেছেন। সেখানে কোনও  রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা তাঁর পথ রোধ করতে পারেনি।  কখনও কেউ তাঁর কণ্ঠ রোধ  করতে পারেনি। ভয়কে তিনি জয় করেছেন অবলীলায়, অবহেলায়। তাই তো তিনিই বলতে পারেন ‘তোমরা চুপ করে। শব্দহীন হও। ‘

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...
Exit mobile version