নেট দুনিয়ায় তারকা প্রার্থীদের ফোন নম্বর ভাইরাল, বাকবিতণ্ডায় তপ্ত সোশ্যাল মিডিয়া

যা এতকাল ছিল গোপন, তা যদি হঠাৎই উম্মুক্ত হয়ে যায়? রুপোলি পর্দার প্রিয় তারকারা এতদিন ছিলেন শুধুই রূপকথার মানুষ। এখন তাদের জীবন খোলাখাতা। তাঁদের ফোন নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য সবই হাতের নাগালে। কিন্তু গোপন তথ্যের ঝুড়ি মেঝেতে উপুড় করে দিলে যা যা হওয়ার তাই তাই হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রায় সব তারকা প্রার্থীর ফোন নম্বর নেট দুনিয়ায় ফাঁস হয়েছে। আর তারপরেই তা ভাইরাল। কত কত কত জনের ওয়ালে এবং পেজে যে সেই নম্বর শেয়ার হয়েছে তার হিসেব নেই। তাতেই শুরু হয়েছে যত বিপত্তি।

মধুরিমা তরফদার নামে এক নেটিজেন প্রথমে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন নম্বরের তালিকাটি নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন। তারপর সেটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য। তৃণমূল-বিজেপি নির্বিশেষে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এমন একাধিক ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তিত্বদের নম্বর এখানে ফাঁস করা হয়েছে । সেই তালিকায় মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, বৈশালি ডালমিয়া, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো রাজনীতিবিদরা তো আছেনই। আছেন রাজ্য চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, জুন মালিয়া, সায়ন্তিকা, সায়নী ঘোষ, কৌশানি, শ্রাবন্তীর মতো তারকা প্রার্থীরাও। তবে বাবুল সুপ্রিয়,পার্নো মিত্র নিজেরাই কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় এই দুজনের নাম বাদ রাখা হয়েছে। শুধু নম্বরের তালিকা ফাঁস করেই ক্ষান্ত থাকেননি , ওই পোস্টে দাবি করা হয়েছে যাঁরা মানুষের পাশে থাকার জন্য রাজনীতি করতে এসেছেন, তাঁদের নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। মানুষ এবার তাঁদের সরাসরি ফোন করুন।

আর তারপরেই ধুন্ধুমার বেধে যায় নেট দুনিয়ায়। কে কোন তারকাকে আগে ফোন করবে তাই নিয়ে বেধে যায় লড়াই। প্রিয় তারকাদের হাতের নাগালে অনুরাগীদের প্রেম নিবেদন করা নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু তাঁকে দিবারাত্র উত্যক্ত করা, অপমান করা, গালিগালাজ করা, শাসানো, ধমকি দেওয়া…. নেট দুনিয়ার ভাষায় যাকে ট্রোল বলা হয়, তেমন কিছু ঘটলে তা অবশ্যই অত্যন্ত আপত্তিকর।

তবে নেটিজেনদের মধ্যেও এনিয়ে মতভেদ রয়েছে। একদলের মত, যারা রাজনীতি করতে এসেছেন, মানুষের কাছে, মানুষের পাশে থাকার সদিচ্ছা নিয়ে এসেছেন তাঁদের কিন্তু এই ফোন নম্বর ভাইরাল হওয়া নিয়ে আপত্তি থাকার কথা নয়। জনগণের প্রশ্ন বা মতামত না শুনলে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায় নাকি?

ভিন্নমত অন্য পক্ষের। তাদের মতে ফোন নম্বর সবসময় ব্যক্তিগত । আর অনুমতি ছাড়া কারোর মোবাইল নম্বর শেয়ার করা,, সে তিনি তারকাই হন বা সাধারন, আপত্তি থাকাই স্বাভাবিক। তাঁদের মতে এটি কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা। যা কঠোরভাবে দন্ডনীয় অপরাধ। এ ব্যাপারে আইন কী বলছে?

সাইবার আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, “২০১৯ সালের পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল যতক্ষণ না পর্যন্ত আইনে রূপান্তর হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও জনসাধারণের প্রাইভেসি বিঘ্নিত হলে ক্রিমিনাল কোর্টে মামলা করা যাবে না। ২০১৭ সুপ্রিম কোর্ট গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর মানুষ হাইকোর্টে রিট ফাইল করতে পারেন। তবে ফোন করে কেউ হুমকি দেয় শাসায় তাহলে মামলা করা যাবে। পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন আইন পাশ হওয়ার পর কিন্তু পার্সোনাল ডেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনৈতিকভাবে শেয়ার করা জামিনঅযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং তিন বছর আবধি জেলও হতে পারে।”

কিন্তু যাদের নিয়ে এই বিভ্রাট তাঁরা কি বলছেন? যশ দাশগুপ্ত বললেন , গতকাল থেকে আমি ৫ হাজারেরও বেশি কল পেয়েছি। এখনও আমার ফোন নন-স্টপ বেজে যাচ্ছে। অমি মনে করি যারা এটা করেছে তারা মানুষের ভাল করার জায়গায় ক্ষতি করেছে কারণ আমরা যারা অ্যাকচুয়াল কাজগুলো করে ছিলাম, কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করা, কাউকে অক্সিজেন সাপ্লাই করানো, সেইগুলো এখন দেরি হচ্ছে। যাদের সত্যিকারের প্রয়োজন তাঁরা ফোনে ধরতে পারছে না, করাণ ব্যস্ত আসছে।

পার্নো মিত্রর মতে, আমি কখনও জানিয়ে মানুষের জন্য কাজ করিনি এবং করিওনা। আমার কাছের মানুষেরা জানেন আমফানের সময়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াব বলে কীভাবে টাকা জোগাড় করেছি। লোকের কাছে হাত পেতে ছি। তা-ই আলাদা করে মানুষের জন্য কাজ করতে ভয় পাইনি কখনও। এত ফোন আসছে, কিছুজনকে সাহায্য করতে পেরেছি। কিন্তু আমি কোভিড আক্রান্ত। শরীর একেবারে ভাল নেই। তা-ও যতটুকু সম্ভব করছি। ”কাঞ্চন মল্লিক বললেন, গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ৫০০-৭০০ টা ফোন কল পেয়েছি। কোনো সভ্য মানুষ এটা করতে পারেন না। জুন মালিয়া জানালেন, রবিবার রাত থেকেই ফোনের পর ফোন পাচ্ছি। তার সঙ্গে অশালীন মেসেজ। তবুও আমি ফোন নাম্বার বদলাবো না। জানি রাজনীতিতে থাকতে গেলে এসব ঝক্কি ঝামেলা ঝামেলা একটু একটু পোহাতেই হবে। তবে এই তারকা প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তিনি বললেন, আমি মনে করি় এভাবে কারোর ব্যক্তিগত নম্বর ও তথ্য ফাঁস করে দেওয়া একদম ঠিক নয়।।

Advt

Previous articleকরোনা আক্রান্ত মিঠু চক্রবর্তী, হোম আইসোলেশনেই রয়েছেন তিনি
Next articleকরোনা রোগীদের সাহায্য করতে WBDF এর উদ্যোগ