দিলীপ শিবিরের আপত্তি, তবু দিল্লির সম্মতিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু

দিলীপ ঘোষ সহ আদি বিজেপি শিবিরের প্রবল আপত্তি। তবু নানা অঙ্ক ও কৌশলে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের সমর্থন পেয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। শেষ মুহূর্তে নতুন কোনও অঘটন না ঘটলে নন্দীগ্রামের বিধায়কের এই পদপ্রাপ্তি পাকা।

গত দুদিন ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা (opposition leader) কে? ৭৭ টি আসন পাওয়া বিজেপি (bjp) এবার বাম-কংগ্রেস শূন্য বিধানসভায় বিরোধী দলের ভূমিকায়। অপ্রত্যাশিত হারের ধাক্কা কাটিয়ে এখন শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে মনোযোগ দিতে চান অমিত শাহরা। আর এই কাজে পরিষদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতার পাশাপাশি চড়া সুরে তৃণমূল বিরোধী অবস্থান নেবেন এমন মুখ চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এবারের ভোটে মর্যাদার লড়াইয়ে হারের পর তৃণমূলের প্রতি ‘নরম’ মনোভাব দেখানো বা বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব আছে এমন কোনও নেতাকে যে তাঁরা বিরোধী শিবিরের মুখ চাইবেন না, বলাই বাহুল্য। মোট কথা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁর সরকারকে স্বস্তিতে থাকতে দেবেন তেমন কাউকে বিরোধী দলনেতা করতে চান না অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা। আর এখানেই পিছিয়ে পড়েছেন প্রথমবার নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হওয়া মুকুল রায়। কারণ একটাই। অভিজ্ঞতায় প্রবীণ হলেও তাঁর অবস্থান, বিশেষত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মনোভাব ঘিরে ধোঁয়াশা। এমনকি বিজেপি সহ সভাপতির পদপ্রাপ্তির আগে তিনি তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলেও খবর। ফলে শাসক দলের প্রতি সময় বিশেষে নরম মনোভাব নিতে পারেন বলে মুকুলকে নিয়ে সাম্প্রতিককালে ধারণা তৈরি হয়েছে বিজেপির অন্দরেই। এই বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি থেকেই বিরোধী দলনেতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছেন মুকুল। যদিও ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই পদ পেতে আগ্রহী বলে জানাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের লোকেরাই। আর একারণেই নাকি নিজের বিধানসভা আসনে জেতার লক্ষ্যে এবারের ভোটে বাইরের অন্য কোনও বিষয়ে মাথাই ঘামাননি!

বিশ্বাসের ঘাটতি যদি মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তাহলে এটাই আবার শুভেন্দু অধিকারীর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। মুকুলের চেয়ে অনেক পরে তৃণমূল ছেড়েও তিনি কট্টর তৃণমূল বিরোধিতার প্রশ্নে মুকুল রায়কে পিছনে ফেলে দিয়েছেন। দলবদলু বিজেপি নেতাদের মধ্যে যে কজন তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভূমিকায় প্রচার চালিয়েছেন, তার মধ্যে প্রথম নামটিই শুভেন্দু অধিকারী। শুধু তৃণমূল নয়, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাঁচাছোলা আক্রমণের নিরিখেও শুভেন্দুর ধারেকাছে আসতে পারেননি বিজেপির প্রথম সারির আর কোনও নেতা। সবচেয়ে বড় কথা, বিতর্ক থাকলেও খাতায়কলমে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর কৃতিত্বও শুভেন্দুর। যা বাকি সব জয়ী প্রার্থীর চেয়ে তাঁর নম্বর বাড়িয়েছে। এছাড়া প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রী হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতাও শুভেন্দুর আছে। মুকুল রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন, তাঁর বাংলা বিধানসভায় কাজের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুকুল রায়ের চেয়ে পরিষদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ শুভেন্দুর নম্বর বেশি। মুকুলকে ইতিমধ্যেই বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির পদ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সে অর্থে শুভেন্দু এখন কোনও পদে নেই। ফলে বিরোধী দলনেতার দৌড়ে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের চেয়ে আপাতত অনেকটাই এগিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

তবে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও আদি বিজেপি লবি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে অখুশি। তাঁদের যুক্তি: ১) শুভেন্দু মাত্র মাস চারেক হল বিজেপিতে এসেছেন। এবারের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলবদলু বিজেপি প্রার্থীকেই দুরমুশ করেছেন ভোটাররা। নির্বাচনী ফলাফলে দলবদলুদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মানুষ। এর পরেও ভোটের মুখে দলবদল করা নব্য বিজেপি নেতাকে বিরোধী দলনেতার পদ দিলে জনমানসে বিজেপি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। দলের আদি কর্মীরাও ক্ষুব্ধ হবেন। ২) শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নারদ ও সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযোগ রয়েছে। এই দুটি বিষয়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে বিজেপি। এখন যদি সেই দুর্নীতির অভিযুক্তকেই বিরোধী দলনেতার পদে বসানো হয় তবে কোনও দুর্নীতি নিয়েই বিধানসভায় প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার থাকবে না বিজেপির।

দিলীপ গোষ্ঠীর দাবি, আদি বিজেপির কোনও বিধায়ককে দলনেতার দায়িত্ব দেওয়া হোক। এর আগে মনোজ টিগ্গার এই কাজের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু দিল্লি লবির যুক্তি: প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক ও মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর সমান পরিষদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা জেতা বিজেপি বিধায়কদের আর কারুর নেই। এমনকি মুকুল রায়ও বিধানসভায় এই প্রথমবার নির্বাচিত হলেন। তাই এগিয়ে শুভেন্দুই।

Advt

shuvendu will be opposition leader?

 

Previous articleএবার দিলীপকে ‘ফিটার মিস্ত্রি’ বলে আক্রমণ, তলব দিল্লির
Next articleদিনহাটায় আক্রান্ত উদয়ন গুহ, ভাঙল হাত, অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে