কেন দিলীপকে কাঠগড়ায় তোলা? ৫ মণি-মানিক্য এগিয়ে এসে ‘পাপ’-এর দায় নিন!

২০০ পার স্লোগান ছিল অমিত শাহর। চতুর্থ দফা ভোটের পরেই আওয়াজ তুলেছিলেন ১২০ আসনে ভোট শেষ। বিজেপি এই ১২০-তে ১০০ আসন জিতে নিয়েছে। ‘মিথ্যা’ বলে মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা। যে মাইন্ড গেম খেলতে গিয়ে দিল্লিতে কেজরিওয়ালের কাছে মুখ পুড়েছিল বিজেপির, তার চেয়ে কম পুড়ল না পশ্চিমবঙ্গে।

ভোটের আগে থেকেই বাংলায় অস্ত্রে ধার দিয়েছিল বিজেপি। রণকৌশল, ছক আর ‘লেনাদেনার’ চিত্রনাট্য। দিল্লি থেকে লোক এনে বসিয়ে দেওয়া হলো বাংলায়। কৈলাশ বিজয়বর্গী, শিব প্রকাশ, অরবিন্দ মেনন। আর শেষ পর্যায়ে ট্যুইট মাস্টার অমিত মালব্য। এরা বাংলা বোঝে না। বাংলার মানুষের মন বোঝে না। বাংলার সেন্টিমেন্ট বোঝে না। সংস্কৃতি বোঝে না। রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র বোঝে না। এমনকী দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বোঝাপড়া ভাল হওয়ায় ভোটের মাস দুয়েক আগে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিয়ে আনা হলো অমিতাভ চক্রবর্তীকে। ভেঙে দেওয়া হলো ২০১৯-এর লোকসভা সাফল্যের মূল কারিগরদের, জুটিকে। ভাবখানা এমন যে, বাবা আমরা বহু সাফল্যের কারিগর। তোমরা শুধু দেখে যাও। হাতের তুড়িতে সাফল্য আসবে।

আরও পড়ুন- ভোট মিটতেই আকাশছোঁয়া সোনার দাম, চরম দুশ্চিন্তায় ক্রেতা ও বিক্রেতা

ফলে দিলীপদের সাইড লাইনের পাশে বসে থাকতে হলো। দলের সবচেয়ে নিরাপদ খেলোয়াড়কে মাঠের বাইরে রেখে টিম খেলছে। কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লে ২০-৩০ মিনিটের স্টপ গ্যাপে দিলীপরা। মূল বক্তা কারা? নরেন্দ্র মোদি ২২টি সভা, অমিত শাহ ৪৫টি সভা, যোগী আদিত্যনাথ ১৮টি সভা, কেন্দ্রের মন্ত্রী, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দিয়ে আরও ৮০টি সভা। তার মাঝে দিলীপ আছেন। কিন্তু তাঁকে প্রোজেক্ট করলে পাছে জেতার পর মুখ্যমন্ত্রীর পদ দিতে হয়, তাই পরিযায়ী আর দলবদলুদের কথায় দিলীপ ঘোষরা হয়ে গেলেন সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন। সবেতেই কৈলাশদের দাপাদাপি।

দিলীপরা মনে মনে ফুঁসছিলেন। কিন্তু বাধ্য স্বয়ং সেবকের মতো কাজ করে গিয়েছেন। শাহদের স্লোগানে গলা মিলিয়েছেন। আর বুঝেছেন, ক্ষমতায় আসা অলীক স্বপ্ন। সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্তে তা স্বীকারও করেছেন।

আরও পড়ুন- ক্ষমতায় ফিরেই সরকারি কর্মচারীদের সুখবর শোনালেন মমতা

ভোটের পর এই কৈলাশ, শিব, অরবিন্দ, অমিতরা গেলেন কোথায়? সব দায় দিলীপের ঘাড়ে চাপিয়ে পগার পার! কোথাও তাদের দেখা নেই। শুধু দেখা আছে নাড্ডার। সকলেই জানেন উনি বিজেপির স্ট্যাম্প পেপার সভাপতি। আসল লোক অমিত শাহ। যেদিন তিনি ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে বিষোদগার করছেন, সেদিন খুন হচ্ছেন তৃণমূল কর্মী, হাত ভেঙে দেওয়া হচ্ছে উদয়ন গুহর। আহাম্মকের দলের মুখে কোনও কথা নেই!

বিজেপির এই মুখ চুনকালি করা ব্যর্থতা নিয়ে যারা দিলীপকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন, তারা আসলে নিজেরাই অপদার্থের দল। কবে কোন আরএসএস করে দলে জায়গা পেয়েছেন। সবটাই যে ত্রিপুরা নয়, ওরা বুঝতে পারেননি। ভেবেছেন তুড়িতে জয় আসবে। আর জয় আনতে হলে বাংলা আর বাঙালিদের মুখ সামনে রাখতে হবে, সেটা বুঝতেই পারেননি।

২০১৯-এ লোকসভায় মোদির সাফল্য ছিল দেশের নিরিখে। বিধানসভায় যে মোদির মুখ অচল হবে এটা দিল্লির বিজেপি ভাবতেই পারেনি। ফলে যারা স্ট্র‍্যাটেজি সাজিয়েছিলেন, বিজেপির পাঁচ মণি-মানিক্য শাহ, মেনন, শিব, কৈলাশ আর মালব্য, তারা এগিয়ে এসে বলুন, আমরা স্ট্র‍্যাটেজি সাজিয়েছিলাম আহাম্মকের মতো। ভুল আমাদের। দিলীপ ঘোষকে টার্গেট করবেন না। এ কথা বলার সৎ সাহস আছে তো ৫ মণি-মানিক্যের! আসলে ওদের এখন মুখ লুকোনোর জন্য একটা শক্ত-সমর্থ লোক দরকার। দিলীপই যে যথার্থ।

আরও পড়ুন- করোনা যুদ্ধে এগিয়ে এলেন লক্ষ্মী, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করলেন তিনি

Advt

Previous articleরাজ্যে একদিনে করোনা আক্রান্ত সাড়ে ১৮ হাজার, বাড়ল সুস্থতার হারও
Next articleকেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপর হামলা! গ্রেফতার ৮, সাসপেন্ড ৩ পুলিশ আধিকারিক