Monday, November 17, 2025

বাদ, বদল, অপসারণ, অপ্রাসঙ্গিক সিপিএম সহ শরিক দলে ব্যাপক রদবদলের উদ্যোগ

Date:

লোকসভায় শূন্য, বিধানসভায় শূন্য। রাজ্যে সিপিএম এবং বামফ্রন্ট এখন শূন্যতার গহ্বরে বিলীন হওয়ার জোগাড়। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার নামে দলের মধ্যে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন একের পর এক নেতা। শুধু সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে আর পার পাওয়া মুশকিল বাম নেতৃত্বের। সর্বস্তরে চাপ বাড়ছে। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই পদত্যাগ বা সরিয়ে দেওয়ার পর্ব শুরু হতে চলেছে সিপিএমের অন্দরে।

সিপিএমের পরিবর্তনবাদীদের অভিযোগ মূলত চারটি।

এক. আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করা বাস্তবে হারিকিরি হয়েছে। মানুষ অবাক হয়েছেন, সিপিএমের মতো দল কী করে একটা সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল।

দুই. মূল শত্রু কে, তা নির্ধারণে ব্যর্থ হওয়া। বিজেপিও শত্রু, আবার তৃণমূল কংগ্রেসও শত্রু। এই দ্বিচারিতা মানুষ নিতে পারেননি। দলেই যুক্তি ছিল, যে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে, সেই একই অভিযোগ তো এই ক’বছর আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও তোলা হতো। তাহলে কংগ্রেস কোন গঙ্গা জলে ধুয়ে শুদ্ধ হয়ে গেল!

তিন. এখনও সেই আশির দশকের প্রচারের সিস্টেমে আটকে রয়েছে দল। আধুনিকতা মানে শুধু নতুন বা তরুণ মুখ নয়, চিন্তা-চেতনা ও বাস্তবায়নে আধুনিকতা দরকার। তুমুল সমালোচনা সত্ত্বেও যা তৃণমূল কংগ্রেস করেছে। পিকের মতো পেশাদার পলিটিক্যাল স্ট্র‍্যাটেজিস্টকে দিয়ে দলের খোল নলচে বদলাতে পেরেছে। তাতে পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদরা অসন্তুষ্ট হলেও সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি শাসক দল।

আরও পড়ুন-সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে জেতা অসম্ভব, দিল্লির চাপে বিধায়ক- শপথ নিলেন না নিশীথ-জগন্নাথ

চার. কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা আর এক ভুল। কারণ, ১৯৭৭ সাল অবধি কংগ্রেস রাজ্যে কী করেছে, তা বয়স্করা জানেন। আবার সিপিএম ৩৪ বছরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যা করেছে, সেটাও মানুষ দেখেছেন। ফলে দুই দলের ভোটারদের অনেকেই বিরক্ত হয়ে হয় বিজেপি অথবা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। যাঁরা বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতি পছন্দ করেননি, তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। আবার যারা শাসক দলের মধ্যে সংখ্যালঘুপ্রীতি দেখেছেন, তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। ফলে বামেরা ২.৫%-এর নিচে, কংগ্রেসের ভোট আরও তলানিতে এসে ঠেকেছে। দরকার পড়ছে দূরবীনের।

এই পরিস্থিতিতে সিপিএমে এখন বদলের হাওয়া প্রবল। বিমান বসু দলের অন্দরে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। আর কিছুতেই দায়িত্বে থাকতে চান না। রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এখনই নতুন প্রজন্মের হাতে দলের দায়িত্ব দিতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে সূর্যকান্ত সরে গেলে কে রাজ্য সিপিএমের দায়িত্ব নেবেন? উঠে আসছে সুজন চক্রবর্তীর নাম। বয়স ৬১ হলেও সুজনকেই সামনে রাখার পরিকল্পনা। ফ্রন্ট চেয়ারম্যান হিসাবে আপাতত নাম নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। পার্টি থেকে ছাত্র-যুবর দায়িত্বে থাকা রাজ্য কমিটির সদস্যদের সরানো হচ্ছে। আভাস, সৃজন, সায়নদীপ, ঐশী, ফুয়াদ হালিমদের সামনে রাখার চেষ্টা। সব মিলিয়ে খোল নলচে বদলে দেওয়ার চেষ্টা।

ইতিমধ্যে দলের ভোট স্ট্র‍্যাটেজি নিয়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্য, কান্তি গাঙ্গুলী, অশোক ভট্টাচার্য, মানস মুখার্জি সহ একাধিক নেতৃত্ব। দল তাদের কাছে জবাব চাইলেও বহিষ্কার বা সাসপেনশনের পথে হাঁটতে চাইছে না সিপিএম।

সিপিএমের তিন শরিক দলও একই প্রক্রিয়ায় দল ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত। দেখার বিষয় তাতে বাম আদৌ প্রাসঙ্গিক হয় কিনা!

Related articles

ঝাড়খণ্ডের দুমকায় বিধবাকে পুড়িয়ে খুন! প্রেমিক গ্রেফতার, পলাতক স্ত্রী

ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড! শিকারিপাড়া থানা এলাকার সীতাশাল গ্রামে তিন বছরের সম্পর্কে থাকার পর ২১ বছরের বিধবা...

অসাংবিধানিক মন্তব্য! রাজ্যপালকে ধুয়ে দিলেন কল্যাণ, দিলেন পাল্টা চ্যালেঞ্জ

চূড়ান্ত অসাংবিধানিক এবং কুরুচিকর মন্তব্য বিজেপির ‘দলদাস’ রাজ্যপাল বোসের! একজন রাজ্যপাল কীভাবে এমন কুরুচিকর মন্তব্য করতে পারেন? শ্রীরামপুরের...

ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে শিক্ষক নিয়োগ, মঙ্গলবার শুরু এসএসসির ইন্টারভিউ 

স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে প্রায় ২০ হাজার নামের প্রার্থী তালিকা। আগামীকাল, ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু...

অবাস্তব কাজের চাপ: বাংলার পর কেরল, আত্মঘাতী BLO, কাঠগড়ায় কমিশন

দেশের ১২ টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এক অবাস্তব পদ্ধতিতে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (Election...
Exit mobile version