বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে নেয়নি বাংলা, আস্থা রেখেছে তৃণমূলেই: অভিজিৎ

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রি পেয়েছে তৃণমূল। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। কী কারণে এই বিপুল আসনে জয় পেল তৃণমূল (Tmc)? একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhijit Binayak Banerjee) এর কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতায় বিজেপিকে (Bjp) বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেনি রাজ্যবাসী। বেছে নিয়েছে শাসকদলকে।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এর অর্থ রাজ্য সরকারের কাজ নিয়ে খুব একটা অসন্তুষ্ট নয় পশ্চিমবঙ্গবাসী। কারণ, পাশা উল্টে দিতে পিছুপা হন না রাজ্যের মানুষ। ২০১১-তে তার প্রমাণ মিলেছিল। এবার তাঁদের সামনে স্পষ্ট বিকল্প ছিল। কিন্তু তা সত্বেও তাঁরা শাসকদলের আস্থা রেখেছেন। লোকজন ভেবেচিন্তে, বিচার করে ভোট দেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মনে করেছেন, তাঁরা যা চাইছেন বিজেপির থেকে পাবেন না।

অভিজিৎ বলেন, তবে কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় নেতাদের প্রভাব ভোটের ফল পাল্টে দিয়েছে। কারও ব্যক্তিগত ক্যারিশমা বা দুর্নীতি জেতা-হারা নির্ণয় করেছে।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলার কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন ভারতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। সেই কারণেই এই সরকারে আস্থা রেখেছেন বেশিরভাগ মানুষ।

পাশাপাশি, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করেছেন রাজ্যবাসী। ফলে ভোট দিয়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

বাম-কংগ্রেসের (Left-congress) শূন্য পাওয়ার বিষয়ে অভিজিৎ বলেন, রাজ্যের মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন বাম-কংগ্রেসদের জোট তৃতীয় হবে। তৃতীয়দের ভোট দিয়ে অনেকেই ভোট নষ্ট করতে চাননি। তাই মনেপ্রাণে বামপন্থী বা কংগ্রেসীরাও তৃণমূল বিরোধিতায় বিজেপিকে অথবা বিজেপি বিরোধিতায় তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছেন বলে মনে করেন অভিজিৎ।

ভোট পরবর্তী হিংসা সম্পর্কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি আগে ভালো ছিল, এখন খারাপ হয়েছে- সেটা ঠিক নয়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে হিংসা ছিল। সিদ্ধার্থশংকর রায়ের সময় বামপন্থীদের বিরুদ্ধে চরম হিংসা হয়েছিল”।

দেশে করোনা পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করতে পারাকেই করেছেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কেন করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি উন্নতি হল? কী করলে আবার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে? এই বিশ্লেষণটা করা হয়নি। বদলে পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগেছে সকলে। তার পরিণামেই এই অবস্থা।

আরও পড়ুন- ব্রিটেনে ৫০ লক্ষ কোভিশিল্ড রফতানির আবেদন খারিজ কেন্দ্রের, মোদি সরকারকে কটাক্ষ কংগ্রেসের

লকডাউন প্রয়োজন বলে জানিয়েও অভিজিৎ বলেন, ভারতের মতো দেশে দীর্ঘদিন লকডাউন করা উচিত নয়। তিন সপ্তাহের বেশি লকডাউন হলে জীবন ও জীবিকা অত্যন্ত প্রভাব পড়ে। যেখানে বেশি সংক্রমণ, সেখানেই লকডাউন করতে হবে। ওই অঞ্চলে লোকেদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের যাতে তারা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য না হন।

সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, কেউ যদি বেশি দামের ভ্যাকসিন নিতে চান। তাহলে তিনি নিজে কিনে নেবেন। কিন্তু ন্যূনতম মূল্যের ভ্যাকসিন সবাইকে বিনামূল্যে দেওয়া উচিত কেন্দ্রের।

করোনা পরিস্থিতি এবং বেহাল না হয়ে গেলে এই সময় ভারতেই থাকতেন বলে জানিয়েছেন অভিজিৎ। তিনি বলেন, “আমার প্রাণটা পড়ে রয়েছে ভারতে। কিন্তু এখন ভারতে গেলে আর এখানে ঢুকতে দেবে না”।

আরও পড়ুন- ১৩মে শীতলকুচি যাবেন ধনকড়, টুইট করতেই নিন্দার বন্যা

Advt

Previous articleভারতের জন‍্য মন খারাপ পিটারসনের
Next articleশীতলকুচি কাণ্ডে এবার এসডিপিও-কে তলব, হাজিরা দিল না সিআইএসএফ