পথ দেখালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুম ভাঙালেন তৃণমূল যুব সভাপতি। ঘুম থেকে উঠে সেই পথেই হাঁটতে শুরু শুরু করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তবে বিষয়টির মধ্যে কতটা আন্তরিকতা আর কতটা রাজনীতি তা নিয়ে এখন তুমুল চর্চা।

এবার মুকুল জায়া অসুস্থ কৃষ্ণা রায়কে দেখতে হাসপাতালে হাজির বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। আজ, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে যান হুগলির সাংসদ লকেট। মিনিট পাঁচেক সেখানে থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি।

সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে লকেট জানান, এর মধ্যে রাজনীতি না খোঁজাই ভালো। তাহলে এতদিন পর হঠাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসার পরেই কেন সবাই হুমড়ি খেয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির অসুস্থ স্ত্রীকে দেখার লাইন লাগাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে লকেট জানান, “কাকিমা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সে খবর আমার কাছে ছিল না। আমাকে কেউ জানায়নি। তাই যখনই এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখনই সেটা জেনে দেখতে এলাম।”

অন্যদিকে, লকেট মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য হাসপাতালে ঢুকেই বেরিয়ে আসেন। মুকুল রায়ের স্ত্রীকে তিনি দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন। মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু রায় লকেটের হাসপাতালে আসার বিষয়টি জানলেও সেখানে তখন ছিলেন না। এ বিষয়টি নিয়েও ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে। তবে লকেট জানিয়েছেন, শুভাংশুর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। সাড়ে ছ’টার সময় আসার কথা ছিল। কিন্তু আসতে দেরি হওয়াতেই শুভ্রাংশু বেরিয়ে যান। মুকুল রায়ের সঙ্গেই তাঁর ফোনে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লকেট।

আসলে আপাতদৃষ্টিতে এটা সৌজন্য সফর হলেও রাজনৈতিক মহল এর মধ্যে এক ধারাবাহিকতা দেখছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ, নরেন্দ্র মোদির পর লকেট চট্টোপাধ্যায়। দিলীপ-মুকুল ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের ক্ষোভ নিরসনেই বিজেপি লকেটকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলের। তবে লকেট জানিয়েছেন, দলের নির্দেশে নয়, তিনি ব্যক্তিগত ভাবেই হাসপাতালে গিয়ে মুকুল রায়ের স্ত্রীর খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

করোনা নিয়ে মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণদেবী হাসপাতালে ভর্তি হন গত ১৪ই মে। করোনাকে জয় করলেও পরে অন্যান্য সমস্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। সে সময় মুকুলও করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তবে তিনি বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। এখন অনেকটাই সুস্থ। এই পর্বে রাজ্য বিজেপি’র পক্ষ থেকে সেভাবে কেউ খোঁজ নেয়নি বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে মুকুল রায়ের পরিবার।

অথচ, পুরোনো পারিবারিক সম্পর্কের টান দেখিয়ে হঠাৎ মাতৃসম কৃষ্ণদেবীকে হাসপাতালে দেখতে চলে যান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা হয় শুভ্রাংশুর সঙ্গেও। সেই অনুভূতির কথা প্রকাশ্যে জানান মুকুল পুত্র। এর পর থেকেই রাজনৈতিক চেহারা পেয়ে যায় কৃষ্ণা রায়ের অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতাদের হাসপাতাল-সফর। বুধবার সন্ধ্যায় অভিষেকের যাওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরে পরেই ওইদিন রাতদুপুরে হাসপাতালে পৌঁছে যান রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যদিও তখন হাসপাতালে মুকুল-শুভ্রাংশু কেউ ছিলেন না। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে মুকুলকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর শনিবার রাতে এলেন লকেট।

আরও পড়ুন- কোভিডবিধিতে শনিবার তৃণমূলের দ্বিতীয় শীর্ষবৈঠক ভার্চুয়াল
