বিধানসভা ভোটে জোর ধাক্কা খেয়ে বিজেপির পুরনো খেয়োখেয়ি ফের একবার সামনে চলে এল। রাজ্যের বিরোধী দলের কঙ্কালসার চেহারাটা ফের একবার বেরিয়ে পড়ল। সম্প্রতি দলের বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায়ের একটি টুইট ঘিরে দলের মধ্যে আরও একবার কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে দলেরই চার নেতার নামের আদ্যক্ষর দিয়ে টুইট করেছেন তথাগত। সেই নেতারা দলের কর্মী সমর্থকদের পাশে না থেকে পালিয়ে গিয়েছেন বলে আক্রমণ শানিয়েছন। যার উত্তরও দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।

২ জুন তথাগত রায় তাঁর ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, “ঘনিষ্ঠ একজন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করছিলেন। তিনি জানান, কয়ের হাজার দলীয় কর্মী যাঁরা দলের হয়ে কাজ করেছিলেনে তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের গুন্ডারা। ওই কর্মীদের হয়তো বড় অংকের টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আমি অসহায়। কেএসএ নেতারা পালিয়ে গিয়েছেন। ডি ফোনের জবাব দিচ্ছেন না।”

A very close person came crying today. Said a few thousand men who had worked for BJP hv bn driven out by Trinamooli goons. They will possibly have to pay hefty sums of money to be allowed to return. I am helpless. Of the state leaders KSA have run away. D doesn’t receive calls!
— Tathagata Roy (@tathagata2) June 2, 2021
এখন এই ‘কেএসএ’ দিয়ে যে তিনি ভোটের সময় রাজ্যের দায়িত্বে থাকা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট। এবং ডি অর্থে দিলীপ ঘোষকে আক্রমণ করেছেন। এই প্রথম নয় এর আগেও তথাগত দলের নেতাদের সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। তবে যে ভাবে দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে কার্যত ‘পলাতক’ বলে আক্রমণ করলেন তা নজিরবিহীন।

আরও পড়ুন-উদাহরণ ডেনমার্কের ‘বারগেন’: মহিলা বাঙালি প্রধানমন্ত্রী আর ‘হ্যাশট্যাগদিদি’কে জুড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া

বিষয়টি নিয়ে অন্য কারও প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও দিলীপ ঘোষ এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি তো রাস্তাতেই আছে, কর্মীদের পাশে। উনি (তথাগত) কর্মীদের কাছে যান। বাস্তবটা দেখুন”। তথাগতর ফোন না তোলার অভিযোগ সত্যি মিথ্যা জানা যায়নি। তবে দিলীপ ঘোষকে ভোটের পরেও কার্যত ময়দানেই দেখা গিয়েছে। শুক্রবারই তিনি হুগলিতে যান। সেখানে অবশ্য কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। নিচু তলার কর্মীরা আবার জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তোলেন।

এই অবস্থায় তথাগতর টুইটের জবাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, “আপনি ঘরছাড়াদের তালিকা দিন। এমন যদি কেউ থেকে থাকেন তবে আমরা দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের ঘরে ফেরাব”। তার পরে তথাগতও আবার চন্দ্রিকাকে উত্তর দিয়ে বলেছেন, আপনি ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন, আমি সেই কাজেই (ঘরছাড়াদের তালিকা তৈরি) ব্যস্ত রয়েছি। সেই তালিকা তৈরি করে আপনার কাছে পৌঁছে দেব।

Thank you! Please be assured that @AITCofficial remains committed to tackling such issues efficiently. We shall be ever more vigilant and take necessary action wherever needed. https://t.co/9axE47yOlh
— Chandrima Bhattacharya (@Chandrimaaitc) June 3, 2021
তথাগতর এই টুইট নিয়ে এখন কার্যত বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল। এবং যে ভাবে নেতাদের নামের ইঙ্গিত করে তিনি টুইট করেছেন তার জল অনেক দূর গড়াতে পারে বলে মনে করছে রাজ্য রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের এক ঝাঁক নেতাকে কার্যত ভাঙা পা নিয়ে একার হাতে পরাস্ত করেছেন তাতে তথাগতর গাত্রদাহ হবে সেটাই স্বাভাবিক। এখন দেখার তথাগত এই হারের জন্য কার্যত দলের নেতাদের উপরই শুধু গায়ের ঝাল মেটাবেন নাকি সত্যিই ময়দানে নেমে তথাকথিত ঘরছাড়াদের তালিকা তৈরি করে রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেবেন। সময় বলবে।
