প্রকাশ্যে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত: ‘ঘরছাড়া’ পরিবারের পাশে ‘ত্রাতা’ কুণাল

প্রকাশ্যে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। ভোটের আগে বিজেপি (Bjp) কর্মীর স্ত্রীকে দিয়ে তৃণমূলের (Tmc) যুব নেতার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের। ১২ দিন জেল হেফাজতে থাকতে হয়েছে মানিকতলা অঞ্চলের তৃণমূল যুব নেতা প্রশান্ত হাজরাকে (Prashant Hazra)। ভোটের পরে প্রতিবেশীদের রোষের মুখে বাড়ি ফিরতে পারছে না বিজেপি সমর্থক পরিবারটি। ত্রাতা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অশোক সাহার (Ashok Saha) ফুটপাতে একটি ছোট দোকান আছে। তিনি বিজেপির স্থানীয় যুব সভাপতি। বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় তাঁকে দিয়েই ঘৃণ্য রাজনীতি করিয়েছেন বিজেপি নেতারা। অশোকের স্ত্রী সুপর্ণা সাহাকে (Suparna Saha) দিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় সক্রিয় যুবনেতা প্রশান্ত হাজরার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রশান্তর বিরুদ্ধে ১৬৪ ধারা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার জেরে গ্রেফতার হন প্রশান্ত। ভোটের সময় ১২ দিন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে থাকতে হয় তাঁকে। ভোটের কোনও কাজ করতে পারেননি তিনি। এরপর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন মানিকতলার তৃণমূল প্রার্থী সাধন পাণ্ডে। এই সময় জনরোষ গিয়ে পড়ে সাহা পরিবারের উপর। স্ত্রী সুপর্ণা, পুত্র, ভাই, ভাইয়ের বউ-সহ এলাকাছাড়া হন অশোক সাহা। অভিযোগ, সেইসময় বিজেপি নেতাদের বারবার জানানো সত্ত্বেও কেউ পাশে এসে দাঁড়াননি। অনেকে ফোন ধরেননি। অনেকে বলেছেন, “ওয়েট”। কিন্তু কতদিন প্রতীক্ষা? ১ মাস ৫ দিন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, হোটেলে ঘুরে শেষে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের শরণাপন্ন হয় হন সুপর্ণা সাহা। কাঁদতে কাঁদতে আর্জি জানান, “দাদা আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিন”। স্বীকার করেন, যে বিজেপির টোপ গিলেই এই কাজ করেছেন তাঁরা। বিজেপি নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এই মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করার পরে ভোটে জিতলে অশোক সাহাকে প্রায় তিরিশ লক্ষ টাকা দেবেন। এতে ফুটপাতের ছোট ব্যবসায়ী বড় দোকান করার স্বপ্ন দেখেন। লোভে পড়ে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয় বলে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট জানান সুপর্ণা। তিনি জানান, এই কাজের জন্য তাঁরা অনুতপ্ত।

সংবাদমাধ্যমকে কুণাল ঘোষ জানান, ভোটে জিততে বিজেপি নেতারা যে কতটা নোংরা চক্রান্ত করেছে তা ভোট পরবর্তী সময়ে ক্রমশ সামনে আসছে। এই ঘটনাকে বিজেপি ‘ঘরছাড়া’ বলে প্রচার করতে চাইছে। কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়। একটি শান্তিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় যুবকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করে তাঁকে জেল খাটানো ফলেই জনরোষ গিয়ে পড়েছে এই পরিবারের উপর। আর যাঁদের কুপরামর্শে এই পরিবারটির আজ ঘরছাড়া তাঁদের এখন আর টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তৃণমূলের শরণাপন্ন হয়ে এঁরা বাড়ি ফিরতে চাইছেন।

কুণাল গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখেন। আলোচনা করেন আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীর সঙ্গে। যেহেতু ১৬৪ করা আছে তাই পরিস্থিতি জটিল। মধ্যপন্থার ফর্মুলা নিয়ে কথা হয়। কুণাল বলেন,” এই পরিবারটি ঘোরতর অন্যায় করেছে। বিনা কারণে আমাদের যুব সংগঠককে বদনাম নিয়ে জেলে থাকতে হয়েছে। এলাকায় মানুষ বিরক্ত। কিন্তু বিজেপির জন্য এই মহিলা, শিশুরা আর কতদিন বিপদে থাকবেন? তৃণমূলই পাশে থাকবে।”

কুণাল ফোন করেন সেই এলাকার বিধায়ক ও মন্ত্রী সাধন পান্ডেকে। বিষয়টি নিয়ে সাধন এবং তাঁর মেয়ের সঙ্গে কুণালের আগেই কথা চলছিল। সাধনবাবু তৃণমূলের কর্মীদের ক্ষোভ থাকলেও বাস্তবমুখী ভূমিকা নেন। কুণাল পরিবারটিকে সাধনবাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। বিকেলে শ্রেয়া পান্ডে পরিবারটিকে বাড়িতে ফেরানোর উদ্যোগ নেন।

কুণাল ঘোষ জানান, কেউ বাড়িছাড়া হয়ে থাকুক এটা তৃণমূল নেতৃত্ব চায়না। সেই কারণেই স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের (Sadhan Pandey) কাছে তিনি সাহা পরিবারকে পাঠিয়ে দেন। আশা প্রকাশ করেন দুপক্ষের মধ্যস্থতায় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাধন পাণ্ডে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন। তবে এর সঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, আজ যে পরিস্থিতি এলাকায় তৈরি হল, তার জন্য দায়ী এক এবং একমাত্র বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত। গরিব মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে, তাঁদের অর্থের লোভ দেখিয়ে বিপথে চালিত করেছে পদ্ম শিবির। অথচ তারা যখন বিপদে পড়েছে তখন আর সেই সব নেতাদের পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে (Jagdeep Dhankar) তীব্র আক্রমণ করেন কুণাল। তিনি বলেন, সকাল-সন্ধে টুইট না করলে রাজ্যপালের ‘উইথড্রল সিনড্রোম’ হয়। তিনি বিজেপির হয়ে ঘরছাড়া পরিবারকে নিয়ে টুইট করছেন। অথচ এই অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। সাংবিধানিক প্রধানের পদমর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন ধনকড়।

যাঁদের উস্কানিতে এই ভুল পদক্ষেপ করেছিলেন সুপর্ণা আজ তাঁরা কেউ পাশে নেই। অথচ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর ভূমিকায় আপ্লুত সুপর্ণা। তিনি স্পষ্ট জানান, “কুণালদার জন্যেই আজ ঘরে ফেরার পথ সুগম হচ্ছে”। এর আগেও এই মানিকতলা অঞ্চলের বিজেপি পরিবারকে ঘরে ফিরিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ।

Advt

Previous articleএবার নজর ২২শে, ‘ইমেজ’ সামলাতে নাড্ডার বাড়িতে হাইভোল্টেজ বৈঠক বিজেপির
Next articleদ্বাদশের পরীক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা টাকি হাউসের প্রাক্তনীদের সংগঠন টিব্যাকের