Sunday, November 2, 2025

ধ্বংসস্তূপ দীঘা: একটি পরিবারের বৃত্তেই বাঁধ নির্মাণ ঠিকাদাররা, প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

Date:

Share post:

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই উত্তরে দার্জিলিং আর দক্ষিণে দীঘাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র করার স্বপ্ন দেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে সফলও ছিলেন। বিশেষ করে বাঙালির প্রিয় “উইকএন্ড ডেস্টিনেশন” দীঘাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে একের পর এক পরিকল্পনা ও তাঁর বাস্তব রূপদান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিশ্ববাংলা গেট থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পিত সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প উদয়পুর বিচ থেকে দীঘা মোহনা পর্যন্ত অংশ সেজে উঠেছিল নতুন চেহারায়। কিন্তু ইয়াস সুপার সাইক্লোনের তাণ্ডবে দীঘা-শঙ্করপুরজুড়ে লণ্ডভণ্ড মমতার সেই ‘ড্রিম প্রজেক্ট’।

কিন্তু এই প্রকল্পের পিছনে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে
মোহনা থেকে শঙ্করপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে জলদা পর্যন্ত সমুদ্র পাড় বাঁধানোর কাজ চলছিল। তবে তার গতি ছিল খুবই মন্থর। যা নিয়ে অতীতে সেচদপ্তরকে সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং যা হওয়ার তাই হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মুখ্যমন্ত্রীর জলের ঢেউয়ে তলিয়ে গিয়েছে।

এই প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ঢালার পরেও নির্মাণের বেহাল দশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে ইয়াস। ঝড়ের দাপট যতই থাক,কীভাবে সবকিছুকে তা উড়িয়ে নিয়ে গেল, কীভাবে সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল, সেটা ভেবেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি টাকা নয়ছয় করে কী কাজ হয়েছে, তার হিসেব জানতে চেয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণের মান, ঠিকাদার নিয়োগে স্বজনপোষণ, পেটোয়া ঠিকাদারদের দুর্নীতির বিষয়গুলি উলঙ্গভাবে সামনে আসছে। এবং
দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ পূর্ব মেদিনীপুরের এক “পরিবার” কার্যত কুক্ষিগত করে রেখেছিল বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠছে। দীঘার একটিও গাছের পাতা সেই পরিবারের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া নড়তো না। ফলে সরকারি বৃত্তে ওই পরিবারের অযাচিত অনুপ্রবেশের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। এবং সেখানেই দুর্নীতির আঁতুর ঘর বলে অভিযোগ উঠছে।
একইসঙ্গে সেচদপ্তরের এক আধিকারিকের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইয়াস পরবর্তী সময়ে নির্মাণগুলি ভেঙে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেচদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সরেজমিনে পরিদর্শনের পর সেই কমিটি প্রাথমিক যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা এইরকম—

(১) উদয়পুর বিচ থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশে নির্মাণে বড়সড় কোনও বিপত্তি হয়নি।

(২) সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মোহনা থেকে শঙ্করপুর বাসস্ট্যান্ডের ৩ কিমি এবং বাস স্ট্যান্ড থেকে জলদা পর্যন্ত আরও ৩ কিমি অংশে। এখানে ঢেউ উঠেছিল সাড়ে তিন মিটার। তাতে কিছু ক্ষতি হলেও এমন লণ্ডভণ্ড হওয়ার কথা নয়।

(৩) যে পদ্ধতিতে নির্মাণ হওয়ার কথা, তাতে গোটা প্রকল্প ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার কথা নয়। যে টেকনোলোজি
ব্যবহার হয়েছিল বলে দাবি, তাতে গোটা নির্মাণটি সামুদ্রিক ঝঞ্ঝা-বিপর্যয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার কথা নয়।
তাই এই সব অংশের নির্মাণের জন্য যে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। নির্মাণকারী টেন্ডারের শর্ত মেনে উপকরণ সরবরাহ করেছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

(৪) সামুদ্রিক বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার শুধুমাত্র কাঁথি, বাজকুল, চণ্ডীপুর, নন্দকুমার ও ঝাড়গ্রামের ঠিকাদারের মধ্যেই আবর্তিত হয়েছে। এবং সেই ঠিকাদাররা একটি প্রভাবশালী পরিবারের বৃত্তে ছিলেন।

(৫) যাত্রানালা, ফোরশোর রোড, শঙ্করপুর মেরিন ড্রাইভ রোড, তাজপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার নির্মাণ গত মার্চ মাসে ডিএসডিএ-র ডাকা টেন্ডারের ভিত্তিতে তৈরি হয়। সেগুলি কীভাবে জলের তোড়ে সলিল সমাধি হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:হাওড়ার সব তৃণমূল কর্মীই রাজীবের বিপক্ষে, জানালেন অরূপ রায়

Advt

spot_img

Related articles

প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক মইনুল হক, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

বঙ্গ তথা দেশের রাজনীতির এক মুনসিয়ানার অবসান। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল রাজ্য সহ-সভাপতি মইনুল হক (Mainul...

সীমানায় পুনর্বিন্যাস কলকাতার পাঁচটি থানার, আজ থেকে কার্যকর

শহরজুড়ে নতুন করে নিজেদের পরিধি পরিবর্তন করল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। কোন থানার গুরুত্ব বাড়ল, কার আবার কমল...

জন্মদিনে ‘কিং’ চমক, ছবির টিজার প্রকাশ থেকে ঘরোয়া পার্টিতে জন্মদিন সেলিব্রেশন শাহরুখের! 

৬০-তম জন্মদিনের সকালে অনুরাগীদের উপহার দিলেন শাহরুখ খান (Shahrukh Khan)। প্রকাশ্যে এল ‘কিং’-এর অ্যানাউন্সমেন্ট টিজারের (King announcement teaser)।...

হ্যালোইন পার্টিতে ফ্রেমবন্দি রণবীর কাপুরের প্রাক্তন এবং বর্তমান

বলিউডের হ্যালোইন পার্টিতে(halloween party) উপস্থিত দুই অভিনেত্রী আলিয়া ভট্ট(Alia Bhatt) এবং দীপিকা পাড়ুকোন (Deepika Padukone) । হতেই পারে, কিন্তু ইতিমধ্যেই...