‘দুঃখিত’ বিকাশ, সাঁইবাড়ি-পোস্ট নিয়ে আলিমুদ্দিনের বক্তব্য জানতে চায় কংগ্রেস

‘‌সাঁইবাড়ি’ নিয়ে সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের পোস্ট ঘিরে সংযুক্ত মোর্চার দুই শরিক কংগ্রেস ও সিপিএমের নেটযুদ্ধ চরমে৷ ওদিকে বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, “কংগ্রেসের কেউ যদি আমার পোস্ট নিয়ে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত”৷

সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রবিবার সকালে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। বর্ধমানের ‘‌সাঁইবাড়ি’‌-র ঘটনা নিয়ে লেখা ওই পোস্টে তিনি একাধিক জায়গায় ‘‌কংগ্রেস গুন্ডা’‌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু বিকাশবাবুই নয়, এই মুহুর্তে আলিমুদ্দিনের ‘পোস্টার গার্ল’ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও একই বিষয় নিয়ে তাঁর নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন রবিবারই৷ দেখা গিয়েছে সেখানেও মীনাক্ষী সাঁই পরিবারের বড় ছেলে কংগ্রেস নেতা প্রয়াত নব সাঁইকে ‘‌ঘাতক’‌ ও ‘‌গুন্ডা’‌ বলেছেন৷

রবিবার এই দু’টি পোস্টের বিষয় প্রকাশ্যে অসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে কংগ্রেস ৷ শুরু হয় নেট-লড়াই৷ প্রয়াত সোমেন মিত্রের পুত্র রোহন মিত্র টুইট করেন, “২০১৬ সালের পর আরও একবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার পথ খুঁজছে সিপিএম।” বিকাশ ভট্টাচার্যের সাংসদ পদ প্রসঙ্গে রোহনের কটাক্ষ, “আপনার সাংসদ পদটিও শোষকের প্রতি শোষিতের ইতিবাচক ভূমিকা। সাঁইবাড়ি আমরাও ভুলিনি”। বিকাশ ভট্টাচার্যকে কটাক্ষ করে অনেকেই লিখেছেন, ‘কংগ্রেসের উপর এতই ক্ষোভ যখন, তাহলে কংগ্রেসের সমর্থনে নেওয়া সাংসদ পদ ছেড়ে দিন। তার পর কথা বলুন’৷ পাশাপাশি, বিকাশের এই পোস্টের কথা জেনে সূর্যকান্ত মিশ্রকে ফোন করেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রদীপ বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না ৫০ বছর আগেকার ঘটনা এই মুহূর্তে আলোচনা করার কোনও অবকাশ রয়েছে। গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। আর যদি এটাই মাথায় থাকে তাহলে আমরা জোট করতে গেলাম কেন? অতীতের অনেক বিষাক্ত স্মৃতি তো সকলেরই আছে। সেসব ভুলেই তো নতুন বাংলা গড়ব বলে জোট করেছিলাম।’’

ওদিকে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে আলিমুদ্দিনে৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে লেখা ছোট অথচ জোরালো চিঠিতে বিকাশ ভট্টাচার্যের বক্তব্য নিয়ে সিপিএমের কী অবস্থান, তা স্পষ্ট করার কথা বলা হয়েছে৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “বিকাশ ভট্টাচার্য সম্প্রতি নেট-মাধ্যমে কংগ্রেস সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তাতে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এই মন্তব্যে আমরা অপমানিত বোধ করেছি। আমরা জানতে চাইছি এই মন্তব্য সম্পর্কে সিপিএমের অবস্থান কী! সিপিএমও কি এই মন্তব্য সমর্থন করে? দ্রুত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুন সিপিএম।”

বিকাশ ভট্টাচার্যের হঠাৎ করা এমন পোস্টে আলিমুদ্দিনও কিছুটা চাপে পড়েছে। চাপ কাটাতে সূর্যকান্ত দায়সারা সুরে বলেছেন, ‘‘সোশাল মিডিয়ায় কে কী পোস্ট করেছেন জানি না। আমরা এখন এই মুহূর্তে বিতর্কে ঢুকতে চাই না। এখন বিতর্কের সময় নয়।’’

তবে সমালোচনা তীব্র হয়ে ওঠায় কিছুটা ব্যাকফুটে গিয়ে মুখ খুলেছেন বিকাশ ভট্টাচার্য ৷ তিনি সাফাইয়ের সুরে বলেছেন, ” অতীতকে অস্বীকার করা যায়না, অস্বীকার করে কোনও লাভ নেই, অতীত সত্যই। এতে মতবিরোধের কোনও জায়গা নেই। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে রাজ্যসভায় গিয়েছি এটা সত্যি। তেমনই সাঁইবাড়ি নিয়ে বামপন্থীদের যে মত তা উল্লেখ করেছি। যদি কংগ্রেসের কেউ আমার পোস্ট নিয়ে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত। তবে আমার মনে হয়, এমন একটি ঘটনার জন্য বাম-কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’

তবে এই সাফাইয়ে একদমই খুশি নয় কংগ্রেস৷ প্রদেশ নেতারা এখন অপেক্ষায় আছেন তাঁদের পাঠানো চিঠির জবাবে সূর্যকান্ত মিশ্র কী বলেন, সেই দিকে৷

অন্যদিকে, ভোটের পর সংযুক্ত মোর্চার ভবিষ্যত নিয়ে চর্চা চলছে। ভবানীপুরে প্রার্থী দেওয়া নিয়েও সিপিএম ও কংগ্রেস মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস এখানে প্রার্থী দিতে না চাইলেও জোট শরিক আলিমুদ্দিন রাজ্যের শাসক দলকে একেবারে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিতে নারাজ। ফলে একটা ফাটল তৈরি হতে চলেছে৷ পাশাপাশি,বামফ্রন্ট শরিকরাও আপত্তি জানাচ্ছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বজায় রাখা নিয়ে। এদিকে, রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২০১৬ এবং ২০২১, পর পর দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে জোট করেও ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। এবার তো দু’‌পক্ষেরই ভরাডুবি হয়েছে৷ ফলে কং-বাম বিচ্ছেদ কার্যত অনিবার্য ৷ হয়তো বিকাশ-ইস্যুকে সামনে রেখেই আনুষ্ঠানিক সেই ঘোষণা হতেও পারে৷

Previous articleহলদি নদীতে ট্রলার ডুবি, নিখোঁজ তিন মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধার
Next articleখুন নাকি আত্মহত্যা! সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুবার্ষিকীতেও অধরা রয়ে গেল তাঁর মৃত্যুরহস্য