দিল্লি দৌত্যে দিলীপকে সরানোর চেষ্টা বৃথাই গেল শুভেন্দু লবির

বিজেপির অন্দরে শুভেন্দু অধিকারীকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে চরম এক অন্তর্ঘাতের খেলা। তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলবদলু সাংসদ-বিধায়করা। লক্ষ্য কী? এই গোষ্ঠীর আশু লক্ষ্য হলো রাজ্য সভাপতি পদ থেকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া। পরিবর্তে সেই পদে বসুন শুভেন্দু অধিকারী। এক ব্যক্তি, এক পদ অঙ্কে শুভেন্দু নেহাত আটকে গেলে সেখানে নিজেদের পছন্দের কাউকে বসানোই টার্গেট।

নন্দীগ্রামে ‘বিতর্কিত’ জয়ের পর শুভেন্দু অধিকারী এখন ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেকে ‘লার্জার দ্যান বিজেপি’ মনে করছেন। মূলত নন্দীগ্রামে জয়ের কারণেই শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতার পদ উপহার দেওয়া হয়েছে, আর তা মুকুল রায়কে বঞ্চিত করেই। এর ফল কী হয়েছে তা সকলেরই জানা। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, দলের রাশ হাতে না পেলে ক্ষমতা প্রয়োগ করা কিংবা নিজেদের মনমতো সিদ্ধান্ত বের করা অসম্ভব। আর এক্ষেত্রে বাধা মাঠে নেমে কাজ করা রাজ্য সভাপতি। যাঁর হাত ধরে রাজ্যে বিজেপির উত্থান। যে চষা জমিতে শুভেন্দুরা লাঙল চালাতে এসেছেন। দিলীপের সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক কার্যত অফিসিয়াল। কেন্দ্রীয় নেতাদের ডাকে দিল্লি গেলেও শুভেন্দু তাঁকে জানানোর প্রয়োজনবোধ পর্যন্ত করেন না। শুভেন্দু যে টিম নিয়ে চলেন, সেই টিম নাপসন্দ রাজ্য সভাপতির। কাজের চাইতে বাজনা মোটেই পছন্দ করেন না তিনি। ফলে শুভেন্দুর অবাধ বিচরণে রাজ্য সভাপতি যে কাঁটা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ফলে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ভাল জমেছে নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খাঁ কিংবা অর্জুন সিংদের। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শুভেন্দুকে একটু সময় বা গুরুত্ব দিচ্ছেন নন্দীগ্রামে জেতার কারণে। কিন্তু ৭৭থেকে সংখ্যা সবে কমতে শুরু করেছে। এটা যত কমবে, ততই দিল্লির কাছে ওজন কমবে শুভেন্দুর।

তাই দিল্লিতে দৌত্য শুরু হয়েছে শুভেন্দু ও তার তথাকথিত শুভানুধ্যায়ীদের। ভোটের আগেও রাজ্য সভাপতিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’ একটা শুরু হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি বিজেপির আরএসএস লবি মোটেই দলবদলুদের হাতে দলের রাশ ছাড়তে রাজি নয়। শুভেন্দু লবি বোঝানোর চেষ্টা করছে। বলছে, ৫ বছর সময় দিন, টিমটাকে সাজাতে দিন, প্রথম পরীক্ষা হোক উপনির্বাচন দিয়ে, তারপর পুরসভা ও পঞ্চায়েত। এই জায়গায় অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদির ভাবনায় পার্থক্য রয়েছে। মোদি ভরসা করতে চাইছেন দিলীপে আর অমিত শাহ পুরোপুরি শুভেন্দু নয়, তবে শুভেন্দুকে আরও কিছু স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষে। এই জাঁতাকলের মাঝে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে একজন মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে, কিন্তু সেই ব্যক্তি কিছুতেই দিলীপ ঘোষ নন। দিলীপ রাজ্য সভাপতির পুরো টার্ম শেষ করবেন। তার আগে মুখ তৈরির চেষ্টা চলবে। প্রয়োজনে সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীও ভাবনায় রয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই শুভেন্দু অধিকারী নন।

অনেক ক্যানেস্তারা পেটানোর পরেও দিল্লি থেকে শুভেন্দু লবির প্রাপ্য আপাতত ‘বিগ জিরো’।

Previous articleদলত্যাগীদের ‘চর্বি ঝড়া’র সঙ্গে তুলনা করলেন দিলীপ ঘোষ, পাল্টা দিলেন কুণালও
Next articleনিউটাউন গুলিকাণ্ডে যোগ থাকার সন্দেহে ভাঙড় থেকে আটক পাঞ্জাবের ৪ বাসিন্দা